সিলেট-১ আসনে কে হচ্ছেন ধানের শীষের কাণ্ডারি
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ
সিলেট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত আসন নিঃসন্দেহে সিলেট-১ (সিলেট সদর–দক্ষিণ সুরমা–বিশ্বনাথ)। এই আসনে ইতিহাস রয়েছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের। একসময় এখানে নির্বাচনী লড়াই হতো দুই সাবেক অর্থমন্ত্রী—বিএনপির এম সাইফুর রহমান ও আওয়ামী লীগের এম এ মুহিত এর মধ্যে।
দুজনের উন্নয়নভিত্তিক রাজনীতি ও ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতার কারণে সিলেটবাসীর আগ্রহ সবসময়ই এই আসন ঘিরে ছিল তুঙ্গে।
পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের হয়ে মুহিতের ভাই ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি নির্বাচিত হন, যিনি বর্তমানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিএনপি দিক থেকে এই আসনে রাজনীতির হাল ধরেন সাইফুর রহমানের অনুসারী ও দুইবারের নির্বাচিত সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সিটি করপোরেশনকে ঘিরে তার জনপ্রিয়তা এবং দীর্ঘ প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা তাকে এই আসনের শক্তিশালী প্রার্থী করে তুলেছে।
বর্তমানে এই আসনে বিএনপির দুজন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন—
আরিফুল হক চৌধুরী, সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।
খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, তিনবারের এমপি খন্দকার আব্দুল মালিকের পুত্র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা।
দুজনই কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী বিএনপি নেতা পাশা খন্দকার মুক্তাদিরের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে, আরিফুল হক চৌধুরীর জনপ্রিয়তা ও মাঠে সক্রিয়তা কেন্দ্রের জন্য একে কঠিন সমীকরণে পরিণত করেছে।
আরিফুল হক চৌধুরী একাধিকবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, “দল যদি আমাকে মনোনয়ন না দেয়, আমি জনগণের প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকব।”
এই ঘোষণার ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তাপ বেড়েছে।
দলের একাধিক নেতা আশঙ্কা করছেন, দুই হেভিওয়েট প্রার্থী যদি শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি হন, তবে বিএনপির ভোটভিত্তি বিভক্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে এলেও, প্রার্থী চূড়ান্তকরণের দৌড়ে এখনো বেশ কয়েকটি আসনে দেখা দিয়েছে জটিলতা। দলের দায়িত্বশীল সূত্র ও একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষ করে যেসব আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন, সেসব আসন নিয়েই সবচেয়ে বেশি চিন্তায় রয়েছে বিএনপি।
দলীয় নীতিনির্ধারকদের মতে, কেন্দ্রীয় নেতা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, প্রবাসী নেতা ও ত্যাগী কর্মীরা—একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী হলে মনোনয়ন বাছাইয়ে ভারসাম্য রাখা দলের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। সিলেট বিভাগের প্রায় এক ডজন আসনেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট-১ আসন শুধু একটি নির্বাচনী এলাকা নয়—এটি মূলত সিলেট বিভাগের রাজনীতির মানদণ্ড।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন,
“এই আসনে প্রার্থী নির্বাচন শুধু দলীয় প্রভাবের বিষয় নয়; এখানে প্রবাসী সংযোগ, স্থানীয় জনসম্পৃক্ততা, এবং ঐতিহাসিক নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা—সব কিছু মিলেই নির্ধারণ করবে কে প্রকৃত প্রার্থী হবেন।”
বিএনপি যদি এখানে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, তবে তা শুধু সিলেট নয়, পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দলটির নির্বাচনী বার্তায় প্রভাব ফেলতে পারে।
আরিফুল হক চৌধুরীর মাঠের জনপ্রিয়তা বনাম খন্দকার মুক্তাদিরের কেন্দ্রীয় ও প্রবাসী সংযোগ—এই দুই শক্তির মধ্যে কে জয়ী হবেন, এখন সেটিই দেখার বিষয়।




