লুকোচুরি করছে ইতালিয়ান কোম্পানি এটিআই
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশ বিমানের একটি ৭৭৭ উড়োজাহাজের ডি-চেক (রক্ষণাবেক্ষণ পরীক্ষা) করতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ইতালির রোম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাঠানো হয়। এই কার্যক্রম সরেজমিন দেখতে ইতালি পৌঁছেছেন বিমানের এক অভিজ্ঞ প্রকৌশলী। তবে তাকে রোম বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কার্যাদেশপ্রাপ্ত ইতালি কোম্পানি কী ধরনের কাজ করছে তা তদারকি করতে ইতালি যেতে পারছেন না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আরও ১০ প্রকৌশলী-টেকনিশিয়ান। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ডি- চেক নিয়ে লুকোচুরি খেলছে ইতালীয় কোম্পানি।
প্রতি ১০ বছর পর একবার ডি-চেক করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি উড়োজাহাজের সবচেয়ে বড় ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ পরীক্ষা। ডি-চেকে বিমানটিকে সম্পূর্ণভাবে খুলে প্রতিটি যন্ত্রাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ত্রুটিমুক্তকরণ এবং প্রয়োজন হলে যন্ত্রাংশ পরিবর্তনের মাধ্যমে পুনঃসংস্থাপন করা হয়। ডি-চেক ‘হেভি মেইনটেন্যান্স ভিজিট’ বা এইচএমভি নামেও পরিচিত। এটি বেশ জটিল ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের মধ্যে এমন উচ্চমানের রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা না থাকায় এই কাজ সাধারণত বিদেশেই সম্পন্ন করতে হয়। একবার ডি-চেক করতে অন্তত ৭০ কোটি টাকা খরচ হয়।
বিমানের ৭৭৭ উড়োজাহাজটি ডি-চেক সম্পন্ন করার কাজটি পেয়েছে ইতালির এটিআই টেকনোলজি। আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে এই কার্যাদেশ পেয়েছে তারা। নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমানের পক্ষে ১০ জন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী-টেকনিশিয়ান ইতালিতে গিয়ে পুরো কাজের প্রক্রিয়া তদারকি করার কথা। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বিমানের প্রকৌশলী রুহুল কুদ্দুস ইতালি গেছেন। তিনি রোমের একটি হোটেলে অবস্থান করছেন।
তবে তাকে বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সেখানে যেতে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স বা নিরাপত্তা পাস ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটিআই টেকনোলজির সরবরাহ করার কথা। কিন্তু এই পাস দিতে না পারায় ওই প্রকৌশলী রক্ষণাবেক্ষণ কাজ তদারকি করতে পারছেন না। এদিকে রুহুল কুদ্দুস সিকিউরিটি পাস না পাওয়ায় ভিসা পেয়েও রোম যেতে পারছেন না বিমানের আরও ১০ জন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ান।
বাংলাদেশ বিমানের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইতালির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটিআই টেকনোলজি এক ইমেইল বার্তায় বিমানকে জানিয়েছে, উড়োজাহাজটির প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিদিনের কার্যক্রম নথিভুক্ত করে বিমান কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হচ্ছে। তারা দাবি করেছে, ‘সব কাজই আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী হচ্ছে এবং কোনো বিরতি নেই।’
তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের অনুপস্থিতিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া চুক্তি ও প্রটোকল অনুযায়ী হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে এখন দুপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ চলছে। জানা গেছে, এই ডি-চেকের জন্য বাংলাদেশকে প্রায় ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে।
অ্যাভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ বোয়িং-৭৩৭ মডেলের একটি উড়োজাহাজের (এস-২ এএফএম) ‘ডি-চেক’ পুরোপুরি নিজেদের হাতে সম্পন্ন করে রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তখন বিমানের কর্মকর্তারা দাবি করেন, এর মধ্য দিয়ে দক্ষ জনবল তৈরির পাশাপাশি সাশ্রয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এমন ঘোষণা দেওয়ার পরও বিদেশে তাদের উড়োজাহাজ ডি-চেক করতে পাঠানোয় তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, কয়েক ধরনের উড়োজাহাজ আছে বিমানে। বিমান ৭৩৭ উড়োজাহাজের বিমানের ডি-চেক করতে সক্ষম। কিন্তু ৭৭৭ উড়োজাহাজের ডি-চেক করার জন্য বিদেশের শরণাপন্ন হতে হয়। তিনি বলেন, বিমানের ৭৭৭ উড়োজাহাজটি ডি-চেক করার জন্য গত মাসে ইতালিতে পাঠানো হয়েছে। এই কাজের জন্য বিমানের একটি প্রতিনিধি দলের সেখানে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সিকিউরিটি পাস না হওয়ায় তারা যেতে পারেননি। দু-একদিনের মধ্যে পাস হয়ে গেলে তারা যাবেন।




