তামাবিল দিয়ে ভারত থেকে আসছে বিপজ্জনক রাসায়নিক
 
 সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০২ পূর্বাহ্ণ
নেই অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা। কেমিক্যাল পরীক্ষার জন্যও নেই ল্যাব। তারপরও উচ্চ ঝুঁকি নিয়ে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আসছে মিথানল। বন্দরে ল্যাব না থাকায় আমদানিকৃত কেমিক্যালের নমুনা পরীক্ষা করতে হয় শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি)। সেখান থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর ভারতীয় ট্যাংক লরি থেকে খালাস করা হয় মিথানল। কিন্তু স্থলবন্দরে ফায়ার সার্ভিসের কোন ইউনিট না থাকায় অগ্নিকান্ডের উচ্চ ঝুঁকি নিয়ে আমদানি করতে হচ্ছে এই কেমিক্যাল।
এর আগেও স্থলবন্দরে মিথানলবাহী লরিতে দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটলে আগুন নেভাতে ভারতের ডাউকি থেকে আসতে হয়েছে অগ্নিনির্বাপক দল। আমদানি ও রফতানিকারকদের পক্ষ থেকে স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ও অগ্নি দুর্ঘটনারোধে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট স্থাপনের দাবি জানানো হলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।
জানা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন পোশাক ফ্যাক্টরির কাঁচামাল এবং জ্বালানিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে মিথানল আমদানি করা হয়। ভারতের আসাম রাজ্যের পার্বতপুর ডিব্বুগড় পেট্রাকেমিক্যাল কোম্পানি থেকে এই মিথানল আমদানি করা হয়ে থাকে। কিন্তু তামাবিল স্থলবন্দরে এসব রাসায়নিক পদার্থ রাখার নিরাপদ জোন ও পরীক্ষার জন্য ল্যাব নেই। তাই ভারত থেকে মিথানলবাহী ট্যাংক লরি আসার পর তামাবিল স্থলবন্দরে ৩ থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
মিথানলের নমুনা শাবিপ্রবি ল্যাবে পরীক্ষার পর রিপোর্ট হাতে পেয়েই স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ খালাসের অনুমতি দেয়। অনেক সময় স্থলবন্দরে অপেক্ষমান লরিগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটে। তখন স্থলবন্দরজুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়।
গত বছরের ৯ নভেম্বর তামাবিল স্থলবন্দরে অপেক্ষমান মিথানলভর্তি একটি ভারতীয় ট্যাংক লরিতে আগুন ধরে। এসময় স্থলবন্দরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য মালবোঝাই ট্রাক দ্রæত সরিয়ে নেওয়া হয়। তামাবিল স্থলবন্দরে ফায়ার সার্ভিসের কোন ইউনিট না থাকায় ভারতের ডাউকি থেকে অগ্নিনির্বাপক দল ছুটে আসে। এসময় জৈন্তাপুর থেকে ফায়ার সার্ভিস দল এসে ভারতীয় অগ্নিনির্বাপক দলের সাথে যোগ দিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মিথানল আমদানি নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। গত বছর দুর্ঘটনার পর তামাবিল দিয়ে মিথানল আমদানি বন্ধ রাখতে সরকারের নিকট দাবি জানান তামাবিল পাথর চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রূপ। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করে তামাবিলে কেমিক্যাল টেস্টিং ল্যাব স্থাপন ও ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট স্থাপনের দাবি জানান তারা। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে ওই সময় স্থলবন্দরের পক্ষ থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বরাবর তামাবিলে একটি ইউনিট স্থাপনের আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটি বাস্তবায়িত হয়নি।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ জানান, তামাবিল স্থলবন্দরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট স্থাপন খুবই প্রয়োজন। এছাড়া এখানে একটি কেমিক্যাল ল্যাব স্থাপনের দাবি ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু এখনো সেই দাবি পূরণ না হওয়া দুঃখজনক।
তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক রায়হান আহমদ জানান, স্থলবন্দরকে কেন্দ্র করে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ফায়ার সার্ভিস ও ল্যাব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এখন সতর্কতার সাথে মিথানল আমদানি করা হচ্ছে।
তামাবিল স্থলবন্দরের কাস্টমস সুপারিনটেনডেন্ট আলমগীর হোসেন জানান, আমদানিকৃত মিথানল শাবিপ্রবি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট পাওয়ার আগ পর্যন্ত ট্যাংক লরিগুলো পোর্টে অপেক্ষমান থাকতে হয়।






