আলী আমজদের ঘড়িঘরে ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ কাজ বন্ধ

অনলাইন ডেস্ক:
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ২:৪৮ অপরাহ্ণসমালোচনার মুখে সিলেটের ১৫১ বছরের ঐতিহ্যবাহী আলী আমজদের ঘড়িঘরের জায়গায় ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে চাঁদনীঘাট এলাকায় ঘড়িঘরে গিয়ে দেখা যায়, নির্মিতব্য স্থাপনাটি ছালা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। ছালার উপরে কগজে লেখা রয়েছে- ‘আপাতত নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে’।
নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার কথা জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকারও।
তিনি বলেন, যেহেতু এটির নির্মাণ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তাই এটির কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ নিয়ে একটি কমিটি আছে। তারা সরেজমিনে পরির্দশন করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। প্রয়োজনে স্থানীয়দেরও মতামত নেবে।
এরআগে এই স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শুরু হয় সমালোচনা। নতুন করে স্থাপনা নির্মাণের ফলে ঐতিহ্যবাহী এই ঘড়িঘরের সৌন্দর্য নষ্ট করার অভিযোগ ওঠেছে।
জানা যায়, ঘড়িঘরের ভেতরে জুলাইয়ের শহীদদের স্মরণে স্মৃতিফলক ‘স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প’ নির্মাণ করা হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার অংশবিশেষ আড়াল করে স্মৃতিফলক নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলছে সমালোচনা।
আলী আমজদের ঘড়িঘরের ভেতরে এই স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে সোমবার সকালে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা, সংক্ষুব্দ নাগরিক আন্দোলন, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
যে কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার কারণে সিলেটের মানুষ গর্ব অনুভব করেন, এর একটি হচ্ছে ১৮৭৪ সালে স্থাপিত আলী আমজদের ঘড়ি। আরও কয়েকটি স্থাপনার সঙ্গে এটি ‘সিলেটের প্রতীক’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ ঘড়িঘরের বেষ্টনীর মধ্যেই নির্মাণ করা হচ্ছে স্মৃতিফলক। এতে ঘড়িঘরের প্রকৃত স্থাপত্যশৈলী আড়ালে পড়ে যাচ্ছে, এমনটাই দাবি সমালোচনাকারীদের।
এ ব্যাপারে পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি আবদুল করিম কিম সোমবার বলেন, আলী আমজদের সিলেটের একটি ল্যান্ডমার্ক। সিলেটে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা নেই বললেই চলে। কিন্তু ঘড়িঘরের সীমানার মধ্যে যে স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এটি ঘড়ির মূল কাঠামো, সৌন্দর্য ও আভিজাত্যের সঙ্গে অসংতিপূর্ণ। এটি প্রাচীন স্থাপনার সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক মূল্য রক্ষার জন্য প্রযোজ্য আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, আইন অনুযায়ীও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা নষ্ট করে নতুন করে কোন স্থাপনা নির্মাণ করা বেআইনী। এ ব্যাপারে আমরা জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের স্মরণে প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে ঘটনাস্থলে কিংবা ঘটনাস্থলের পাশে একই নকশায় ‘স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প’ নামে স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সিলেট নগরে চারজন শহীদের স্মরণে এমন স্মৃতিফলক নির্মাণের কাজ গত জুলাই মাসে শুরু হয় এবং আগস্ট মাসে শেষ হওয়ার কথা। নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, স্মৃতিফলক নির্মাণের স্থান চূড়ান্ত করতে একটি কমিটি গঠিত হয়। বিশেষত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শহীদদের শহীদ হওয়ার স্থান দেখিয়ে দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ঘটনাস্থল ও ঘটনাস্থলের কাছাকাছি স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আলী আমজদের ঘড়ির সামনে মো. পাবেল আহমদ কামরুল ও পঙ্কজ কুমার কর শহীদ হন। তাই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেখানে দুই শহীদ স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মিত কাজ শুরু হয়।
এর বাইরে কোর্ট পয়েন্ট মধুবন মার্কেটের সামনে শহীদ সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাব এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষার্থী রুদ্র সেনের স্মরণে ঘটনাস্থলের পাশে স্মৃতিফলক নির্মিত হচ্ছে। প্রতিটি ফলক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৭৫ টাকা।
সিলেট নগরের সুরমা নদীর পাড় আর সারদা হলের মাঝখানে শহরের জিরোপয়েন্ট। তার ঠিক ১০০ মিটারের মধ্যেই আলী আমজদের ঘড়ির অবস্থান। কিনব্রিজ পার হয়ে শহরের উত্তর অংশের ঠিক প্রবেশমুখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এটি ১৮৭৪ সাল থেকে। ওই বছর তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থব্রুক সিলেটে সফরে এসেছিলেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান ঘড়িটি নির্মাণ করেন। নামকরণ করেন নিজের ছেলে আলী আমজদ খানের নামে।
সিলেট/আবির