৪৭ এ ভারতের স্বার্থে ভাগ বাটোয়ারা করা হয়েছে :ড. মাহমুদুর রহমান

সিকডে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ আগস্ট ২০২৫, ৯:২৭ অপরাহ্ণদৈনিক আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেছেন,৪৭ এ ভারতের স্বার্থে ভাগ বাটোয়ারা করা হয়েছে।করিমগঞ্জকে সিলেটের সাথে দেয়া হয়নি।ঐ জনপদে শতকরা ষাট ভাগ মুসলিম তখন ছিল।মুসলমানদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমুলক তা করা হয়।তিনি বলেন,বামপন্থিরা ঐতিহাসিকভাবে ভারতের দালাল। বাংলাদেশের বামপন্থী রাজনীতিবিদরা সেই ১৯৪৭ সাল থেকে বাঙালি মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। এখনকার বামপন্থীরাও বাঙালি মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করে চলছে। বামপন্থীরা সবসময় মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই বামপন্থী সবগুলো ভারতের দালাল।
শনিবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্সের আয়োজনে ‘সিলেট গণভোট ও মুসলিম ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ড. মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, আমি বাঙালি এবং মুসলমান, মুসলমান আমার ধর্ম। গোষ্ঠিগতভাবে আমি বাঙালি। বাঙালি এবং মুসলমানদের মধ্যে কোনো বিরোধ নাই। কাজেই আমাদের বাঙালি মুসলমানের আইডেন্টিটি সাহসিকতার বলার জন্য এবং প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমরা যেটা পারি নাই, আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
সেটা অনেক লম্বা কথা, কেন অামরা পারি নাই। এ বিষয়ে অন্যদিন কথা বলবো। তিনি বলেন, আমি তরুণ প্রজন্মের কাছে বলবো ইতিহাস চর্চা করতে। কারণ স্বাধীনতা যদি আমাদের ঠিকিয়ে রাখতে হয়, তাহলে কালচারালি আমাদের জিততে হবে। স্বাধীনতা দূর্বল করার জন্য স্বাধীনতার পর থেকে কালচারাল আগ্রাসন চলছে।
এটার মোকাবেলা করতে হলে ইতিহাসের উপর দাড়িয়ে ইতহাস চর্চা করেই মোকাবেলা করতে হবে। আমি মনে করি, কায় কাউস ইতিহাস চর্চার সঠিক কাজটি করে যাচ্ছেন। আল্লাহর অসীম রহমত এবং সিলেটবাসী অর্থাৎ সিলেটের পূর্ব পুরুষ যারা সিলেটকে ভোট দিয়ে পাকিস্তানে নিয়ে এসেছেন, আমি তাদের অন্তরের অন্তস্তল থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
পাকিস্তানে না আসলে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পারতাম না। আমার দেশ সম্পাদক বলেন, রমেশ চন্দ্র মজুমদারকে ধরা হয় একজন শীর্ষ ইতিহাসবিদ হিসেবে অথচ তিনি একজন আপাদমস্তক ইসলামী বিদ্বেষী মানুষ ছিলেন। তার যে ইতিহাস রচনা, সেখানে মুসলামনদের বিরুদ্ধে সব কথা রয়েছে। তারা মুসলমানদের খাটো করে ইতিহাস লিখেছে এবং সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছে। হিন্দু ও বিট্রিশদের তুলনায় আমরা ইতিহাস চর্চা কম করেছি। এই জায়গায় তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।
ইতিহাস চর্চা বাড়াতে হবে। ড. মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, স্বাধীনতা ধরে রাখতে হলে নিজেদের ইতিহাস নিজেরাই লিখতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে অবশ্যই ইতিহাস চর্চা করতে হবে। ইতিহাস চর্চা আমাদের আইডেন্টিটি। স্বাধীনতা ঠিকিয়ে রাখতে হলে ইতিহাস, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, সেকুলাররা বাঙালি ও মুসলমানদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিরোধ ঢুকিয়ে দিয়েছে। বাঙালি মুসলমানদের আইডেন্টিটি ক্রাইসিস, এটা আমরা করতে পারি নাই। বাঙালি মুসলমানদের রেনেসাঁর জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।
আমার দেশ সম্পাদক বলেন, আল্লাহর অসীম রহমত ও সিলেটের পূর্ব পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা, যারা ভোট দিয়ে সিলেটকে পাকিস্তানে এনেছেন। তিনি বলেন, ইতিহাস আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে লেখার সুযোগ নেই। ইতিহাস সাহিত্য নয়, সাহিত্য মনের মাধুরি মিশিয়ে লেখা যায়। আমাদের ইতিহাস আমাদের লিখতে হবে। ড. মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ভারত প্রথম যে অন্যায় করেছে, সেটা হচ্ছে গুরুদাসপুর নিয়ে নিয়েছে। এটা পাকিস্তানের পাওয়া উচিত ছিল। গুরদাসপুর পাকিস্তানকে দিলে কাশ্মীর এতদিন স্বাধীন হয়ে যেতো।
দ্বিতীয় যে অন্যায় করা হয়েছে, করিমগঞ্জকে পাকিস্তানকে দেওয়া হয় নাই। ভারতের স্বার্থেই করিমগঞ্জকে পাকিস্তানকে দেওয়া হয় নাই। করিমগঞ্জকে নিয়ে তারা দ্বিতীয় অন্যায় করেছে। আমার দেশ সম্পাদক বলেন, স্বদেশী আন্দোলন মূলত ছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে। এই বিষয়টির চর্চা কম। সেকুলার মিডিয়ার কারণে আমরা সেই ইতিহাস চর্চা করি না, মৌলবাদী ও হিন্দু বিদ্বেষী বলবে এই ভয়ে। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার সোনার বাংলা রচনা করেছেন, বাংলার বিরোধিতা করে। তাদের চিন্তা শুধু নিজেদের সুবিধার জন্য। তারা বঙ্গ বঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলো, আবার ৪৭ সালে ভারত ভাগের জন্য আন্দোলন করলো। কলকাতার বাবুরা সবসময় নিজেদের স্বার্থ দেখেছে। নিজেদের কৃষ্টি কালচার মৃসলমনাদের চাপিয়ে দিয়েছে। আর ভারতপন্থী এ দেশের বৃদ্ধিজীবিরা সেটাকে এদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, আজ থেকে এক হাজার বছর পেছনের ইতিহাস ফিরে যাই, তখন বাংলা নামে কোনো অঞ্চল ছিল না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক অঞ্চল ছিল। বাংলা খুজতে হলে শামসুদ্দিন ইলিয়াসকে খুঁজতে হবে। একজন মুসলমান শাসক এই বাংলা গঠন করেছেন। নিহার রঞ্জণ রায় বলেছেন, হিন্দুরা হাজার বছরেও বাংলা গঠন করতে পারে নাই। আবহমান বাংলা খুঁজতে হলে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ ও বাদশা আকবরের ইতিহাসে ফিরে যেতে হবে। সেকুলার বুদ্ধিজীবিরা আবহমান বাংলার যে কথা বলেন, কাজেই এই আবহমান বাংলা খুঁজতে হলে মুসলমানদের কাছ থেকে শিখতে হবে। বাংলার কনসেপ্ট কলকাতা থেকে ধার করে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মোহাম্মাদ আবু তাহেরের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন লেখক-গবেষক ডা. ফাহমিদ-উর-রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম। সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন,অধ্যাপক ডা: রাবেয়া খাতুন, শিক্ষাবিদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ আলী আহমদ,সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক আলোকিত সিলেটের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক গোলজার আহমদ হেলাল।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে লেখক-গবেষক ডা. ফাহমিদ-উর-রহমান বলেন, ইতিহাসে সিলেট গণভোট খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইতিহাসকে খন্ড খন্ড দেখলে হবে না, ইতিহাসকে সামগ্রিক ভাবে দেখতে হয়। সিলেট গণভোট ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেছে। কায় কাউস সেই ইতিহাসকে তুলে ধরেছে। যদি জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে দাঁড় করাতে চান, তাহলে নিজেদের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, দ্বিজাতি তত্ত্ব কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার থেকে আসে নাই? অথচ দোষ দেওয়া হয়, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে। আমরা এখনও কলকাতার আধিপত্যবাদের মধ্যেই ঘুরেফিরে আছি। নিজেদের ইতিহাস চর্চা করা না গেলে আধিপত্যবাদ থেকে বের হয়ে আসা যাবে না। কলকাতার বয়ান আমাদের বুদ্ধিজীবিরা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ দিয়ে জাতি রিফর্ম হবে না। ৪৭ সালকে বৈধতা দিতে হবে। ৪৭ সাল থেকে ৭১ পর্যন্ত ২৩ বছরের ইতিহাস, এটা ইতিহাস নয়, ফিকশন শেখানো হয়েছে। ফিকশনের হাত থেকে মুক্তির প্রয়োজন। ঢাকা হবে আমাদের নতুন রেনেসাঁর ঠিকানা। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ১৯৪৭ সালকে ক্রিমিনালাইজ করা হয়েছে। বাংলা বইগুলোতে পরিকল্পিতভাবে শেখানো হয়েছে দেশভাগ, অথচ এটা দেশভাগ হয়নি, ভারত থেকে ভাগ হয়নি, এটা ছিল আমাদের ভূখন্ড। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়া ছিল অনিবার্য। এটাই আমাদের ইতিহাস। ১৯৪৭ না থাকলে ১৯৭১ হতো না। সিলেট গণভোট ছিল একটা ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্র করে করিমগঞ্জকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মুসলমানরা ভারতকে ভাগ করতে চায়নি। মুসলমানরা ভারতকে প্রতিষ্ঠা করেছে। ভারতের কেন্দ্র শাসন করেছে। অথচ আওয়ামী ন্যারেটিভ শিখিয়েছে, ভারত ভাগের জন্য মুসলমানরা দায়ী। ভারতীয় লেখকরাও বলেছেন, হিন্দুরাই ভারত ভাগ চেয়েছে। সেমিনারে কায় কাউস-এর ‘ঐতিহাসিক সিলেট গণভোট : পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির সংগ্রাম’ শীর্ষক গ্রন্ত্র প্রকাশ করা হয়। সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। দোয়া পরিচালনা করেন ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট রাজনীতিবীদ মাওলানা হাবিবুর রহমান।সেমিনারে কায় কাউস এর ‘ ইতিহাসের ছিন্নপত্র/ঐতিহাসিক সিলেট গণভোট :পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির সংগ্রাম’ শীর্ষক সংকলনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক সিলেটে গণভোট -এর ৭৮তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে “সিলেটে গণভোট : মুসলিম ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদীদের আলোকে” শীর্ষক সেমিনার এবং কায় কাউস এর ঐতিহাসিক সিলেট গণভোট পাকিস্তানে অর্ন্তভুক্তির সংগ্রাম স্মরণিকার প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স।
সিলেটসংবাদ/হা