অণুগল্প: ভাগ্যের নাগরদোলা
সুলেখা আক্তার শান্তা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মে ২০২৪, ১২:৩৮ অপরাহ্ণ
দুনিয়ায় প্রতিটি মানুষ আসে তার নিজের নিয়তি নিয়ে। নিয়তির লিখন তাকে পৌঁছে দেয় নির্ধারিত অন্তিমে। তিশা যেন বাবা-মার কাছে আসমানের চাঁদ। সব সন্তানেই তার পিতা মাতার কাছে তেমনি। তিশার কত যে খেলনা কত জামা কাপড় তার হিসাব নেই। নানি জাহানারার বয়স হয়েছে। তিনি এসব দেখে বলেন, মেয়েকে এত আদর আহ্লাদ দিয়ে বড় করিস না। কী জানি কি আছে ভাগ্যে। পরে দুঃখ দুর্দশা সীমানা থাকে না। মুন্নি বলে, মা আমি যতকাল বেঁচে আছি ততকাল সন্তানকে ভালো রাখি তারপরেরটা আল্লাহ দেখবেন। বাবা আমিরের কাছেও মেয়ে যেন দুই নয়নের মনি। আমির মেয়ের দেখ ভাল সব কাজ নিজ হাতে করে। মেয়ে আর বাবা আহ্লাদে আটখানা। সময় গড়ায় কিন্তু বাবা-মার কাছে তিশা যেন সেই ছোটই। কোন প্রয়োজনে, মেয়ের ডাকে পিতা মাতার দু’জনে ছুটে আসে। সন্তান নিয়ে তাদের অনেক আশা ভরসা। মেয়েকে ডাক্তার বানাবে। নয়নের মনি মেয়েকে সেভাবেই গড়ে তোলার চেষ্টা করে। হঠাৎ মুন্নি অসুস্থ বোধ করে। ডাক্তারের কাছে যাই যাই করেও যায় না। মালেহা মেয়েকে অনেক বকাবকি করে, ডাক্তারের কাছে যায় না কেন। পরে নিজেই মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখেন। মুন্নির কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস সহ নানান রোগে সে জর্জরিত। মুন্নির ভয় তার কিছু হলে মেয়ের কী হবে! নিজের অসুস্থতার চেয়ে এই ভয়ে সে বেশি শঙ্কিত। এতে মাকে বলে, আমার মেয়ের কী হবে! আমার যদি কিছু হয়। মালেহা মেয়েকে সান্ত্বনা দেন, আল্লাহ দেখবেন। এ নিয়ে তোর কিছু ভাবনার দরকার নেই! মা ভাবতে না চাইলে কী হয় ভাবনায় এসে যায়। মুন্নি আড়ালে আড়ালে কান্না করে। তার অবর্তমানে মেয়ের কী উপায় হবে। রোগ মুন্নিকে নিস্তার দেয় না। ক্রম অগ্রসরমান অসুস্থতায় মৃত্যু তাকে গ্রাস করে। ইহকালের পর্ব সাঙ্গ করে পরকালের যাত্রী হয়। কর্তব্য দায়িত্বের পাহাড় পিছনে পড়ে থাকে।
ভালো-মন্দ বোঝার বয়স হয়নি তিশার তার আগেই তার মা পরকালে চলে গেল। নিয়তির বিচিত্র লীলা খেলার আরো কিছু বাকি তখনও। মায়ের মৃত্যুর ছয় মাসের মাথায় বাবা মারা যায় স্ট্রোক করে। এখন তিশাকে কে দেখবে, কার কাছে থাকবে। অবশিষ্ট রইল নানি। সীমিত তাঁর শক্তি সামর্থ্য। অন্তিম জীবন একজনার আরেক জীবন সূচনার। শুরু হলো দুই জীবনের বিচিত্র যাত্রা অনিশ্চিত নিয়তির নাগরদোলায়।
সাহিত্য/হা





