মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী রাজেদ’র গ্র্যাজুয়েশন লাভ
 
 মো. মুন্না মিয়া, লন্ডন (যুক্তরাজ্য)
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০২৩, ১০:৪৬ অপরাহ্ণ নাম তার রাজেদ আহমেদ। বাড়ি সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় মিরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসি (সাতহাল) গ্রামে। প্রয়াত ছুরত আলীর তৃতীয় ছেলে রাজেদ পড়াশোনায় অত্যন্ত ভালো। আন্ডারগ্র্যাডুয়েট পড়ালেখাকালীন সময়ে সে গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হয়ে দীর্ঘদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ফিরে এসে শিক্ষায় বাজিমাত করে ফেলেছে। দেশে আন্ডারগ্র্যাডুয়েট ও যুক্তরাজ্যে সফলতার সঙ্গে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে সে।
নাম তার রাজেদ আহমেদ। বাড়ি সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় মিরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসি (সাতহাল) গ্রামে। প্রয়াত ছুরত আলীর তৃতীয় ছেলে রাজেদ পড়াশোনায় অত্যন্ত ভালো। আন্ডারগ্র্যাডুয়েট পড়ালেখাকালীন সময়ে সে গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হয়ে দীর্ঘদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ফিরে এসে শিক্ষায় বাজিমাত করে ফেলেছে। দেশে আন্ডারগ্র্যাডুয়েট ও যুক্তরাজ্যে সফলতার সঙ্গে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে সে।
পড়ালেখার সাফল্যের কথা রাজেদ জানায়, ক্লাস সিক্সে আমি ফেল করি। কিন্তু আমি থেমে যাইনি। এক এক করে পড়ালেখায় আরও ভালো করার প্রত্যয়ী হই এবং ক্লাস নাইন থেকে টেনে পঞ্চম স্থান অর্জন ও টেস্ট পরীক্ষায় (এসএসসি পরীক্ষার আগের মূল্যায়ন পরীক্ষায়) অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীদের টপকে প্রথম স্থান করি। এবং সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরিক্ষায় অল্পের জন্য জিপিএ-৫ বঞ্চিত হলেও কমার্স (বাণিজ্য) শাখায় সিলেট সরকারি কলেজে ভর্তি হয়। সেখান থেকে ২০১৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ-তে ভর্তি হই। ২০১৮ সালে বিবিএ সিক্স সেমিস্টার চলাকালীন সময়ে গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একটি হামালায় গুরুতর আহত হই। আহত হওয়ার পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল নেওয়ার পরে চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণ শেষে আমাকে একদিন পর ঢাকায় হস্তান্তর কর হয়। কিন্ত ঢাকার স্কয়ার হাসপাতাল নেওয়ার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে রাখেনি। পরে অ্যাপোলো হাসপাতাল নেওয়া হয়। সেখানে প্রথমে আমার দুই হাতের অপারেশন হয়। পরের দিন পায়ের অপারেশন হয়। কিন্তু কয়েকদিন পর পায়ে ইনফেকশন হয়। ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পর বলল যদি না কমে তাহলে পা কেটে ফেলতে হবে। পায়ের ভিতরে চারটি ওয়্যার এবং একটি স্ক্রু স্থাপন করা হয়। পায়ের বাহিরে স্ট্যাপলিং করা হয় যেখানে ২২ টা পিন ছিল। তারপর আল্লাহর রহমতে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পর ধীরে ধীরে পা ভাল হয়ে যায়। দীর্ঘ আটমাস পর পুনরায় অপারেশন করে পায়ের ভিতরের ওয়্যার এবং স্ক্রু খুলে ফেলা হয়। পরে সিলেট গিয়ে সিআরপিতে কয়েকমাস থেরাপি দিয়ে ধীরে ধীরে হুইল চেয়ার এবং স্কাচ ব্যাবহার করা থেকে বিরত হয়ে হাটার চেষ্টা করে অনেকটা সুস্থ হয়। ২০১৯ সালে আবার লিডিং ইউনিভার্সিটিতে সিক্স সেমিস্টারে (২০১৯) রিএডমিশন নেই। সেখানে আমার শ্রদ্বেয় শিক্ষক ড. শাহান শাহ মোল্লা স্যার (হেড ,ব্যবসায় প্রশাসন) এবং প্রফেসর আনোয়ার আহমেদ আরিফ স্যারের সহযোগিতা এবং আমার সহপাঠীদের সহযোগিতায় ২০২১ সালে বিবিএ সম্পন্ন করি। বিবিএ সম্পন্ন করার তিন মাস পরে যুক্তরাজ্যের একটি ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ করার অপার পাই। পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্যে আসি। এক এক করে সকল পরীক্ষা সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করি। চলতি বছরের গত ৪ জুলাই এমবিএ কোর্স সম্পন্ন করি।
রাজেদ’র এমন সাফল্য খুশি তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজন। তার এমন সাফল্যে খুশি যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত রাজেদ’র সহোদর মুজেদ আহমদ। মুজেদ বলেন- ‘আমার পড়াশোনায় অত্যন্ত ভালো। সে একটি হামালায় গুরুতর আহত হলেও পড়াশোনার সংগ্রাম চালিয়ে যায়। দেশে আন্ডারগ্র্যাডুয়েট ও যুক্তরাজ্যে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে। এতে আমরা অত্যন্ত খুশি। যদি আব্বা তার এমন সাফল্য দেখতে পারতেন তাহলে তিনিও খুশি হতেন। আমরা তাঁর উত্তর উত্তর সাফল্য কামনা করি।
নিজের সাফল্যে স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির সকল শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাজেদ বলে, আজকের এই সাফল্য আমার সকল শিক্ষকদের সহযোগিতায় করতে পেরেছি। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে আমার আম্মা, ভাই-বোনদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। তাদের আর্থিক ও সার্বিক সহযোগিতায় আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।
তিনি জানান, বর্তমানে মা, ভাই ও স্ত্রীর সঙ্গে একসাথে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছি। ভবিষ্যতে আরও উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করে দেশ ও জাতির উপকারে আসতে চাই।






