সিসিক নির্বাচন: অভিভাবক নির্বাচিতের প্রহর গুনছেন ভোটাররা
এম এ হান্নান
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুন ২০২৩, ১২:৫০ পূর্বাহ্ণসিলেট সিটি করপোরেশন ( সিসিক) নির্বাচনের আর মাত্র এক দিন বাকি। আগামী বুধবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সে হিসেবে আজ সোমবার (১৯জুন) মধ্যরাতে শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা।
সন্ধ্যায় নগরের রেজিস্ট্রারে মাঠে শেষ নির্বাচনী জনসভা করেন নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে নিয়ামক বা ফ্যাক্টর কারা হবেন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা নাকি দলীয় প্রতীক, নারী নাকি নতুন ভোটার—কারা নির্ধারণ করবেন নগরপিতা-নগর জুড়ে এমনই আলোচনাই সবার মধ্যে। একদিন পর (২১ জুন) বুধবার অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। এতে অভিভাবক নির্বাচিতের প্রহর গুনছেন ভোটাররা।
এদিকে শেষ দিনে বৃষ্টির প্রাদুর্ভাব বেশি থাকায় প্রার্থীদের প্রচারনায় বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়েছে। তুলনামূলক আমেজ নেই ভোটার ও সর্মথকদের মাঝে। তবে প্রার্থীদের সমর্থকরা বলছেন শেষ সময়ে পাড়া-মহল্লা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বস্তি চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। দিনরাত বিরামহীন প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। নেতাকর্মীদের কারোই দম ফেলার ফুরসত নেই। সবাই সকাল-সন্ধ্যা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট প্রার্থনা করছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। শহরের প্রাণকেন্দ্র বন্দর ও জিন্দাবাজার থেকে শুরু করে নগরীর চায়ের দোকান ও পাড়া-মহল্লা সবখানে জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ। পথসভা, কর্মীসভাসহ নানা উপায়ে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যস্ত প্রার্থীরা। তবে ভোটাররা বলছেন, নাগরিক সমস্যা সমাধান, নগরের জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন, রাস্তাঘাট উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা যিনি নিশ্চিত করতে পারবেন তাকেই নির্বাচনে বেছে নেবেন তারা।
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর জয় পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখছেন। সোমবার সিটি করপোরেশন এলাকার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া যায়।
একাধিক ভোটাররা জানান, নির্বাচনে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশ না নেওয়ায় মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বলে মনে করছেন তারা।
কিছু কিছু ভোটারদের মতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান মেয়র পদ থেকে নির্বাচন বর্জন করায় আনোয়ারুজ্জামানের বিজয়ের পাল্লা আরও ভারি হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। বাকি ৫৮টি কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সবগুলো কেন্দ্রে থাকছে সিসি ক্যামেরা। ঢাকা থেকে সবগুলো কেন্দ্র সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এছাড়া আজ সোমবার দিনগত রাত ১২টার পর থেকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ৫২টি টিম মাঠে থাকবে। পুলিশের নিয়মিত টহলের পাশাপাশি থাকবেন বিজিবি সদস্যরাও।
এদিকে আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে প্রচারণায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সার্বক্ষণিকভাবে দেখা যাচ্ছে।
যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও নগরীতে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ও আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে প্রচারণা চালাতে যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশ থেকে সিলেটে এসেছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীরা।
জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রচারণায় দলটির স্থানীয় নেতাদের অনেককেই দেখা গেলেও জাতীয় পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য নেতাদের দেখা যায়নি।
সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ৮ জন। তবে ইতোমধ্যে নির্বাচন বর্জন করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান। এছাড়া দলীয় মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল ও জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম। এর মধ্যে জাকের পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রচারণায় সরব নয়। নগরীতে তাদের প্রচারণা খুব একটা চোখেও পড়ছে না। ভোটের মাঠে এখন বেশ আনোয়ারুজ্জামান ও বাবুল। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হবে বাঁচা মরার লড়াই।
আর কাউন্সিলর পদে ৩৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যাদের মধ্যে ২৭৩ জন সাধারণ ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (নারী কাউন্সিলর) ৮৭ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। আগে ২৭ ওয়ার্ড নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন থাকলেও বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ড নেয়ে সিসিকে এখন মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৪২টি। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩, নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া ভোটর রয়েছেন ৬ জন।
২০১৮ সালে সিটি নির্বাচনে সিলেট নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ এবং নারী ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। কেন্দ্র ছিল ১৩৪টি, ভোট কক্ষ ছিল ৯২৬টি এবং অস্থায়ী কক্ষ ছিল ৩৪টি। এবার ৪২টি ওয়ার্ডে কেন্দ্র বেড়ে হয়েছে ১৮৫টি এবং ভোট কক্ষ ১ হাজার ৩৯০টি।
২০০২ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সিলেটের সকল ওয়ার্ডে এবারই প্রথম হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ।
সিলেটসংবাদ/হান্নান






