সিসিক নির্বাচন: কদর বাড়ছে গরীব-দুঃখী মেহনতী মানুষের
এম এ হান্নান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুন ২০২৩, ৫:০৭ অপরাহ্ণপােস্টার ব্যানারে ছেয়ে গেছে সিলেট মহানগরী। নগরীর মোড়ে মোড়ে নির্বাচনি কার্যালয়গুলোতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে নির্বাচনি আমেজ। এদিকে এবার ;কে হবেন নগর পিতা? এ নিয়ে আলোচনার ঝড় শুরু হয়েছে চায়ের কাপে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়েও রয়েছে আলোচনার উত্তাপ। নগরবাসীর চাহিদা পূরণ করবেন সন্ত্রাস মাদকমুক্ত একটি আধুনিক শহরে রূপান্তিত করবেন এমন প্রত্যাশা নগরবাসীর।
এবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নতুন ভোটাররা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দেবে। তাদের দৃষ্টিতে, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় তরুণরা এখন রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে অনেক সচেতন। তবে তরুন প্রজেন্মর চাহিদা কর্মসংস্তানে যিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন তাকে ভোটাররা ভোট দিবেন। এমনটাই জানালেন সিলেটের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ তরুনীরা।
তবে তাদের দাবী সবাই নগর উন্নয়ন করার কথা বললেও তরুন প্রজেন্মর কর্মসংস্থান কথা কেউ ভাবছেন না? যতবার যত নেতাই মেয়র হন চেয়ায়ে বসলে কারও কথা মনে থাকে না! ফলে আসছে ভোট বাড়ছে সালাম আদাব।
এদিকে চলতি মাসের ২১ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। দিন-রাত প্রার্থীরা ছুটছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে, দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। সিসিকের ভোটার তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে হাজার হাজার নতুন ভোটার। তরুণ এসব ভোটাররা চান কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক সিলেট ও নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষার্থীরা নুসরাত জাহান তপি বলেন, তরুণরা আরও চান প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক সিলেট, সেই সঙ্গে বেকারত্ব দূর, যুগোপযোগী কর্মসংস্থান ও নারী বান্ধব পরিবেশ। একই সঙ্গে নগর পিতা জলাবদ্ধতা মুক্ত, যানজট, সন্ত্রাস, মাদক মুক্ত শহর গড়ে তুলবেন বলে প্রত্যাশা তাদের।
কলেজের শিক্ষার্থী হেমায়েত বলেন, শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আমরা চাই সিলেট যিনিই মেয়র হন না কেনো তিনি বেকারত্ব সমাধানে কাজ করবেন। অপর এক নতুন ভোটার সাদিয়া বলেন, শহর যানজট মুক্ত থাকবে, জলাবদ্ধতা নিরসন হবে, মাদকের অস্তিত্ব থাকবে না, এমন মেয়র আমাদের দরকার।
উল্লেখ্য, আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে ভোটার বেড়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ২১ জন। ১৫টি নতুন ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ও ২৭টি ওয়ার্ডে গেল ৫ বছরে ৩৯ হাজার ১২১ জন ভোটার বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার সিসিকের ৪২ ওয়ার্ডে মোট ভোটার হচ্ছেন ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। নতুন ১৫ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯০০। গত সিসিক নির্বাচনে ২৭ ওয়ার্ডে মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন ভোটার ছিলেন। কেবল ভোটারই নয় গেল নির্বাচনের চেয়ে এবার ৫৬ টি ভোট কেন্দ্র ও ৪৪১ টি ভোট কক্ষের সংখ্যাও বেড়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। আগামী ২১ জুন বুধবার ৫ম বারের মতো সিসিকের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সিসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার ফয়সাল কাদের বলেন, গেল ৫ বছরে অনেক নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। আগে ২৭ ওয়ার্ড ছিল, এখন এটি ৪২ ওয়ার্ডে উন্নীত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ভোটার সংখ্যাও বেড়েছে। আপাতত নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত বন্ধ আছে। নির্বাচনের পরে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে। তিনি বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে আমরা বদ্ধপরিকর। এজন্যে তিনি প্রার্থী, তাদের কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের সহযোগিতা কামনা করেন।
ইসির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সিসিকের মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার হলেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩ জন, আর ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন হলেন নারী ভোটার। বিগত ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সিসিকের ৪র্থ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। ওই নির্বাচনে পুরুষ ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন ও নারী ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। গত নির্বাচনের চেয়ে এবার ৮২ হাজার পুরুষ ভোটার ও ৮৩ হাজার ৯৬ জন নারী ভোটার বেড়েছে।
এদিকে সাধারন মানুষের কাছে সিটি নির্বাচন বেশ উৎসাহ দেখা দিয়েছে তারা বলছেন। প্রতীক নয়, প্রার্থীর যোগ্যতাই তরুণদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ । নতুন ভোটারের চোখে অনেক স্বপ্ন আর প্রত্যাশা। স্বপ্নের নগর হিসেবে সিলেটে সিটিতে শিক্ষাবৃত্তি চালু, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, নগরের জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন, মাদকদ্রব্য নিরসনসহ নানা রকম প্রত্যাশা তাদের। বিপুলসংখ্যক নতুন এই ভোটারের মধ্যে অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের কাছে দলীয় প্রতীক খুব একটা বিবেচ্য বিষয় নয়।
তারা চায় প্রার্থীর ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও দায়িত্বশীলতা। এদিকে নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থীদের পাশাপাশি ওয়ার্ডভিত্তিক কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নতুন ভোটারদের টার্গেট করে তাদের কাছে টানার জন্য নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন। কারণ সাধারণত নতুন ভোটার হওয়া সবাই ভোট দেবে, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৩ বছর। তাদের ভোট নির্বাচনের ফলাফলেও বড় প্রভাব ফেলবে। তাই নতুন এই ভোটারদের কাছে টানতে নতুন কৌশল নিচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
নগরের বর্ধিত এলাকার একজন নতুন ভোটার সুমন আহমদ । ভোট নিয়ে তাঁর অনুভূতি কেমন এবং কেমন মেয়র চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একজন সচেতন নাগরিক। ভোটাধিকার থাকায় আমার নিজের মতামতের গুরুত্ব আছে।
আমি এমন একজন মেয়র চাই যিনি তরুণদের নিয়ে ভাববেন, যিনি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবেন, সমাজের মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল হবেন।’ তিনি আরো বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, মেয়র হবেন যিনি ভোটের আগে যেমন, তেমনি পরেও একই রকম সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করবেন মানুষের সঙ্গে।
২২ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন ভোটার বলেন, ‘দলীয়ভাবে প্রতীকে নির্বাচন হলেও আমার ক্ষেত্রে দল বা প্রতীক কোনো বিবেচ্য বিষয় হবে না। কারণ আমি বিশ্বাস করি যে প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজ সর্বজন গ্রহণযোগ্য নয়, যে প্রার্থী যোগ্যতার দিক থেকে মেয়র হতে পারে না, আমি তাকে কেন ভোট দেব!’
১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন ভোটার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি বলেন, এখন বিশ্বায়নের যুগ।
সুতরাং স্মার্টলি সবকিছু হেন্ডেল করতে পারবে এমন মেয়র আমরা চাই।
এবিষয়ে সিলেট মহানগরের জাপার সদস্য সচিব আব্দুস শহীদ লস্কর বশির বলেন,এখন পর্যন্ত ইশতেহার লেখা হয়নি। ফলে কোন কিছু বলতে পারছিনা। তবে নতুন ১৫ টি ওয়ার্ডে বিশুদ্ধ পানি নিষ্কাশনে জন্য বলা হচ্ছে।তবে আরো কিছু দিন পর নির্বাচনি ইশতেহার আসলে সব কিছু পেয়ে যাবেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী কে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সিলেটসংবাদ/হান্নান






