সিলেটে বিদ্যুৎ এর ভেলকিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ

এম এ হান্নান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জুন ২০২৩, ৬:৩৫ অপরাহ্ণসিলেট বিভাগ জুড়ে চলছে অসহনীয় গরম আর তাপদাহ। চৈত্রের দাবদাহের মতো জৈষ্ঠরও এমন আবহাওয়ার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। এতে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষজন। এদিকে বাড়ছে রোগ বালাই। জ্বর-সর্দি,কাশি, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু-কিশোরসহ বৃদ্ধরা। এখন সবার মুখে একটি প্রার্থনা বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টির জন্য। এতে স্বস্তি ফিরবে বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে আবহাওয়া অফিস বলছে, এই পরিস্থিতি থাকবে আরও কয়েকদিন।
তবে এবার ঈয়হু গরম থাকায় সিসিক নির্বাচনে পড়ছে প্রচার প্রচারনার প্রভাব। প্রার্থীরা জানিয়েছেন ভোটারদেও কাছে তারা যেতে পারছেন না অপরদিকে ভোটাররা বলছেন প্রার্থীরা প্রচারনায় কম আসছেন। অপরদিকে সিলেট গরমের সাথে প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে লোডশেডিং! গত কয়েক দিন ধরে চলা প্রচন্ড গরমে জনজীবনে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। ঘরে-বাইরে, দিনে-রাতে সমানতালে গরম। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহ আরো কয়েক দিন থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
কয়েকদিন ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে। স্মরণকালের এমন গরমে মানুষসহ হাঁসফাঁস করছে পশু-পাখিও। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না অনেকেই। জনজীবনে ছন্দপতন ঘটেছেম
তীব্র গরমে অস্থির হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছেন আরও বিপাকে। বিদ্যুত চলে গেলে আরও দূর্বিসহ হয়ে উঠে জীবনযাত্রা।
সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, গত কয়েকদিন ধরেই গরমের মাত্রা বেশি। প্রতিদিন থেকে গরমের মাত্রা আরও বেড়েছে। গরমে মনে হয় যেন শরীর পুড়ে যাচ্ছে। অস্থির লাগে। এদিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জেলায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণও বেড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে রাতে দুই-তিন বার বিদ্যুত চলে যাচ্ছে। সারাদিনেও নিয়ম করে কয়েকবার বিদ্যুত থাকছে না। তবে মধ্য রাতে বিদ্যুত চলে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। নির্ঘুম জেগে থাকতে হয়। শিশু ও বয়স্কদের ভোগান্তি হয় সবচেয়ে বেশি।
বশির মিয়া নামের এক রিকশাচালক বলেন, বিকেল থেকে প্রচুর গরম। কোথাও একটু বাতাস নেই। আজ যাত্রীও কম। এ গরমে গাড়ি থামিয়ে বসে থাকাই দায়। বার বার পানি, স্যালাইন খাচ্ছি।
কাউসার হোটেল স্টাফ বলেন, গরমে চোখ-মুখ জ্বালা করছে। কেমন যেন শরীর জ্বলে। বিদ্যুত চলে গেলে দূর্ভোগের শেষ থাকে না। দিনে-রাতে বার বার বিদ্যুত চলে যায়। তাছাড়া গত কয়েকদিন ধরেই গভীর রাতে বিদ্যুত চলে যাচ্ছে। তীব্র গরমে বিছানায় থাকা যাচ্ছে না। প্রচÐ কষ্ট হচ্ছে।
কামাল খান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, বাজারে এসে এক দোকানে গিয়ে ফ্যানের নিচে বসে আছি। খুবই অসুস্থ লাগছে গরমে। ফ্যানের বাতাসও গরম!
জানাযায়,চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় লোডশেডিং বেড়েছে। রাতে এবং দিনের বিভিন্ন সময়ে লোডশেডিং হচ্ছে। এ মাসে লোডশেডিং সহসা কমছে না।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন,চলতি সপ্তাহে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে। বৃহত্তর সিলেটে তীব্র গরমে নানা রোগের প্রাদুরভাব দেখা দিয়েছে। ঘরে ঘরে জ্বর,মাথাব্যথা ও পেটের পীড়নে ভুগছে মানুষ। বৃষ্টিহীন সিলেটে মানুষ হা-পিত্যেস করছে কয়েকদিন থেকে। বৃষ্টির জন্য চাতকের মত আকাশ পানে এখন চেয়ে আছেন ভাটির বাসিন্দারা। যেখানে এই মৌসুমে বানের পানি নিয়ে সামাল সামাল রব উঠার কথা সেখানে এবার অবাক হওয়ার মত পানি শূন্যতা।
সুনামগঞ্জে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তীব্র গরমে ও পানিবাহিত জীবাণুর সংক্রমণে পেটের পীড়া, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, জন্ডিস, পানি শুন্যতা রোগী বেড়েছে । এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে গ্রামের অধিকাংশ লোকজন ভীড় করছেন স্থানীয় ঔষধের দোকান ও হাসপাতালে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশী ভাগই শিশু। প্রতিদিনই নানা উপসর্গ নিয়ে রোগীরা যাচ্ছেন উপজেলার সরকারী হাসপাতালে। এরমধ্যে কাউকে দেওয়া হচ্ছে প্রাথমিক চিকিৎসা, আবার কোন রোগীর অবস্থা জটিল হলে ভর্তি করা হচ্ছে।
উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে পানিবাহিত জীবাণুর সংক্রমণে পেটের পীড়া, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, জন্ডিস, পানিশুন্যতা ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বুধবার দুপুরে সরজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে যে পরিমাণ রোগী ভর্তি হয়েছেন, এরমধ্যে বেশীর ভাগ রোগী ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত।
এদিকে চলছে গ্রীষ্মকাল। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠের প্রচন্ড গরমে চারদিক অস্থির। সেই সাথে রয়েছে আর্দ্রতা। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত। বাড়ছে গরমের স্বাস্থ্য-সমস্যা, রোগ-জ্বরা। ঘামাচি কিংবা পানিস্বল্পতার মতো সমস্যা প্রায় প্রত্যেকেরই হচ্ছে, আবার কেউ কেউ হিটস্ট্রোকের মতো মারাত্মক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
এবিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, হিটস্ট্রোক একটি প্রাণঘাতী স্বাস্থ্য সমস্যা যেখানে রোগীর দেহের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যেতে পারে। সাধারণত ভ্যাপসা গরমে দীর্ঘ সময় থাকলে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি দেখা দেয়।
বাড়াবাড়ি রকমের হিটস্ট্রোকে খিঁচুনি হতে পারে, আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। খুব দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে হিটস্ট্রোক রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
সিলেটসংবাদ/হান্নান