দোয়ারাবাজারে সুরমা নদীর পাড়ে ময়লার ভাগাড়

সোহেল মিয়া,দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ):
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মে ২০২৩, ৮:১৮ অপরাহ্ণসুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় সুরমা নদীর পাড় এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নদীর তীরে বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা ছুঁড়ে ফেলা, রাস্তার ড্রেনেজ লাইনের ময়লা নির্গত হওয়ায় পানি নোংরা হচ্ছে।
উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের আমবাড়ি বাজার ও দোয়ারাবাজার সদরসহ সুরমা নদীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এ নদীর পাড়ে। ফলে নদী দিন দিন তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তীর। দূষিত হচ্ছে নদীর পরিবেশ ও পানি। নদীতে নামতে ভয় পাচ্ছেন নদী সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। বাতাসের সঙ্গে মিশছে রোগ-জীবাণু। এলাকার লোকজনের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের হলেও উপজেলা প্রশাসন যেন বিষয়টি আমলেই দিচ্ছে না।
নদীর তীরে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ বলে দাবি পরিবেশবাদী সংগঠনের। তাই নদীর তীর রক্ষায় এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি সচেতনমহলের।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, উপজেলার আমবাড়ি বাজার, দোয়ারাবাজার সদর ও সুরমা নদীর আশপাশ এলাকার পয়েন্ট গুলোর যত ময়লা-আবর্জনা আর বর্জ্য রয়েছে; সবই যাচ্ছে নদীতে। বাজার সংলগ্ন সুরমা নদীর পাড়কে বানিয়ে ফেলা হয়েছে ময়লার ভাগাড়। বাজারের কসাইখানার রক্ত, পশুর উচ্ছিষ্ট ও মুরগির নাড়িভুঁড়ি সব নদীর পাড়ে ফেলা হয়। নদীর কূলেও জমা পড়েছে ময়লার স্তূপ।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে বাজারে আসা কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ‘বাজার করতে এলে নাকে রুমাল ধরে আসা লাগে। এসব ময়লা-আবর্জনায় রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে। তাছাড়া বিকট দুর্গন্ধের কারণে ওই এলাকায় যাওয়া যায় না। বাজারের সব ময়লা-আবর্জনা নদীর পাড়ে ফেলে নদীর পাড় যেন ময়লার ভাগাড় বানিয়ে ফেলা হয়েছে।’ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, একটু ঝড় উঠলে ময়লার স্তূপ থেকে কাগজ, পলিথিন ও আবর্জনা উড়ে গিয়ে নদীতে পড়ে। আর বৃষ্টির সময় ভাগাড়ের যত ময়লা ও নোংরা ধুয়ে নদীতে গিয়ে মেশে। পানি দূষণের কারণে অনেক সময় নদীর মাছ মরে ভেসে ওঠে।
দোয়ারাবাজার সদরের ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল ও আমবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী নজির আহমদ অভিযোগ করেন, ‘আগে আমরা সুরমা নদীতে গোসল করতাম। কিন্তু এখন নদীতে নামলেই গা চুলকায়। শরীরে বিভিন্ন রকম র্যাশ বের হয়।’ আশপাশ এলাকার সকল ময়লা-আবর্জনা এনে সুরমা নদীর পাড়ে ফেলায় পানি কেউ ব্যবহার করতে পারেন না। পঁচা দুর্গন্ধ বের হয়। এতে রোগ জীবাণুও সৃষ্টি হয়। নদীর তীরের ময়লা-আবর্জনা অপসারণে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানান তারা।
দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারি মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ হাসান মাহমুদ বলেন, ‘যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে মশা-মাছির জন্ম হয়। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশ নষ্ট হয় এবং নানান রোগেরও সৃষ্টি হয়। তাই ময়লা পানি বা আবর্জনা ফেলার আগে পরিবেশ নিয়ে ভাবতে হবে সকলকে। সুন্দর পরিবেশ সুরক্ষা সকলের দায়িত্ব।
পান্ডারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান ইজ্জত আলী বলেন, ‘ আমবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ীদেরকে একাধিকবার বলা হয়েছে নদীতে বর্জ্য না ফেলার জন্য এতে পরিবেশ নষ্ট হয়। আমরা বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থাপনাকে আরো জোরদার করব।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ মোর্শেদ মিশু জানান,আমরা খুব শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করব।
সিলেটসংবাদ/হান্নান