বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার
ইয়াহিয়া নয়ন
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৯:৫০ পূর্বাহ্ণভূরাজনৈতিক সুবিধাজনক অবস্থান ও তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে ক্রমশ সম্পদশালী হয়ে ওঠায় বাংলাদেশের দিকে এখন পরাশক্তিগুলোর নজর। সম্প্রতি বাংলাদেশকে নিয়ে আগ্রহী রাষ্ট্রের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। সবাইকে পেছনে ফেলে এগিয়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশকে নিয়ে আমেরিকার চিন্তার শেষ নেই। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলার কোনো এদিক সেদিক হলে, মানবাধিকারের ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম হলে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। দুশ্চিন্তা-উদ্বেগে রাতে ঘুম হয়না। কালবিলম্ব না করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের সাথে অযাচিত বাত-চিত করেন। মানবাধিকারের প্রতি মহব্বতের টানে সমবেদনা জানাতে কারও বাসায় চলে যান সরাসরি। অবাক হয়ে আমরা তা মিডিয়াতে দেখি।
ইদানিং বাংলাদেশকে নসিহত করতে, নির্বাচন-গণতন্ত্র-মানবাধিকার বিষয়ে জ্ঞান দিতে, রাষ্ট্রদূতের পাশাপাশি মার্কিন মন্ত্রী, সহকারী মন্ত্রীরা ১৩,২৪৭ কিলোমিটার আকাশপথ পেরিয়ে ছুটে আসেন ঢাকায়। অথচ ২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই আর পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। গত সাত বছর যাবত ধারাবাহিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের আবাসভূমি। গণতন্ত্রের সূচক তাই বলে।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহকে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে গণতন্ত্রের র্যাংকিং প্রকাশ করে আসছে। ক্যাটাগরি চারটি হলোÑ পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, হাইব্রিড শাসন ও কতৃত্বপূর্ণ শাসন। ২০২২ সালে ১৬৭টি দেশকে নিয়ে প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে দেখা যায়, বিশ্বের ১২.৬ শতাংশ রাষ্ট্রে পূর্ণ গণতন্ত্র চালু রয়েছে। পূর্ণ গণতান্ত্রিক ১২.৬ শতাংশ রাষ্ট্রের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নেই।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, অন্য যেসব পশ্চিমা রাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিবকার নিয়ে প্রায়ই উচ্চকিত এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে বিবৃতি দিচ্ছে। অথচ তাদের অনেকেই পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি ২০২২ সালের গণতান্ত্রিক র্যাংকিংয়ে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র। র্যাংকিংয়ে পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- এক. এই রাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার ও মৌলিক রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়, দুই. সরকারের ক্ষমতার মধ্যে চেক ও ব্যালেন্সের বৈধ ব্যবস্থা বিদ্যমান, তিন. গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে সীমিত সমস্যা রয়েছে এবং চার. গণমাধ্যম বৈচিত্রময় ও স্বাধীন।
গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার, সরকারের ক্ষমতার ভারসাম্য, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে সীমিতের চেয়ে বেশি সমস্যা রয়েছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-এর প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, মানবাধিকারের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক ব্যর্থতা রয়েছে। ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ এর বৈশ্বিক প্রতিবেদনে জাতিগত বৈষম্যসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভোটাধিকার, পরিবেশ, নারী ও কন্যা শিশুর অধিকার, মত প্রকাশ ও সভা-সমাবেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যা মোটেই সুখকর নয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রসসহ বিভিন্ন সংস্থা ও মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তান ও ইরাক ছাড়াও ২৮টি দেশে মার্কিন সরকারের গোপন কারাগারের সন্ধান মিলেছে। দেশগুলো হলো আলজিরিয়া, আজারবাইজান, জিবুতি, মিসর, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, ইসরাইল, জর্দান, কেনিয়া, কসোভো, লিবিয়া, লিথুয়ানিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, কাতার, রোমানিয়া, সৌদি আরব, সিরিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, উজবেকিস্তান, ইয়েমেন ও জাম্বিয়া। প্রশ্ন জাগে, কারা বন্দি হয়ে আছেন ওইসব গোপন কারাগাগুলোতে?
স্থল কারাগার ছাড়াও অন্তত ১৭টি জাহাজকে ভাসমান কারাগার হিসেবে ব্যবহারের একাধিক রিপোর্ট রয়েছে। এসব স্থল ও জল কারাগারের মধ্যে বাগরাম, আবুগারিব, গুয়ান্তানামোবেসহ বেশ ক’টি কারাগার বন্দি নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত। ভবিষ্যতে আমেরিকার জন্য বিপদ বা ক্ষতির কারণ হতে পারেÑ এই অজুহাতে মার্কিন প্রশাসন অন্য রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরে ড্রোন হামলা চালিয়ে অন্ততপক্ষে ৭০০ বেসামরিক নাগরিককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে। কি চমৎকার, তারাই আমাদের গণতন্ত্র-মানবাধিকারের ছবক শোনায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অনোয়ার-আল-আওলাকি, সমীর খান ও আওলাকির ১৬ বছরের পুত্র আবদুল রহমানকে ড্রোন হামলা চালিয়ে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার বিষয়ে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন সিআইএ, এফবিআই ও জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্টিক্ট কোর্টে মামলা দায়ের করেছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যা যুক্তরাষ্ট্রে নৈমিত্তিক ঘটনা। ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে মারা গেছে ১,০১৪ জন। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টানা চার বছর ধরে পুলিশের গুলিতে নিহতের সংখ্যা ১ হাজারের কাছাকাছি।
প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০১৮ সালে পুলিশের গুলিতে ৯৯৬ জন নিহত হয়েছেন, যেখানে ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯৮৭ জন, ২০১৬ সালে ৯৬৩ জন এবং ২০১৫ সালে ৯৯৫ জন। ‘ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স’ এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে দেশটির ১ হাজার ১৭৬ জন নিহত হয়েছে। টার্কিশ মিডিয়া আউটলেট (টিআরটি ওয়ার্ল্ড)-এর প্রতিবেদন অনুসারে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শীর্ষে অবস্থান করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ তারাই আমাদের পুলিশের কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলে, নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
১ জুন, ২০২০-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাত বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে মোট ৭,৬৬৬ জন নিহত হয়েছে। ‘অপারেশন গেট্টো স্টর্ম’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি ২৮ ঘণ্টায় একজন কালো চামড়ার পুরুষ, নারী বা শিশুকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ম্যাসাচুসেটস এ্যামহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী সাইদ ফয়সালকে আমেরিকান পুলিশ বিচারবহির্ভূতভাবে জনসমক্ষে গুলি করে হত্যা করেছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যার এমন ভয়ংকর রেকর্ড যার দখলে, সেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। প্রবাদে আছে, ‘চালুনি বলে সুচ, তোর কেন এত বড় ফুটো’।
বন্দীদের ওপর পুলিশ ও কারা কর্মকর্তাদের নিষ্ঠুর আচরণ, জাতিগত বৈষম্য, নারী বন্দিদের ওপর যৌন নিপীড়ন, পুলিশ কর্তৃক বৈদ্যুতিক শক ও রেস্ট্রেইন্ট চেয়ার ব্যবহারসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী নানা নির্যাতনমূলক কৌশল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে প্রচলিত বলে জাতিসংঘের নিপীড়নবিরোধী কমিটি অভিমত দিয়েছে। বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরস্পরবিরোধী। ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, চীন, মিসর, লিবিয়া, সিরিয়া ও বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে আমেরিকা অতি উৎসাহী হলেও ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘনকে তারা আত্মরক্ষার অধিকার মনে করে। এই হচ্ছে তাদের নীতি।
কানাডাভিত্তিক গবেষণা সংস্থা তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৩৭টি রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২০ মিলিয়ন তথা ২ কোটি মানুষকে হত্যা করেছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, নিজ রাষ্ট্রের শাসকের প্রতি ক্ষোভ, রাগ, অভিমানে শাসককে শায়েস্তা করতে যেসব রাষ্ট্রের মানুষ যুক্তরাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সেসব রাষ্ট্র স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এসব রাষ্ট্র এখন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্র। চারিদিকে চেয়ে দেখুন, বিশ্বে এমন রাষ্ট্রের সংখ্যা কম নয়।
এরূপ আশ্রিত, ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্র খুঁজতে আমাদের অনেকদূর যেতে হবে না। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, মিসর, সিরিয়া এর জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ। যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৯টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির মধ্যে মাত্র ৩টি অনুসমর্থন করেছে আর ৬টি এখনো অনুমোদন করেনি। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে ৫টি শর্ত সংরক্ষণ, ৫টি বোঝাপড়া ও ৪টি ঘোষণা সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্র অনুসমর্থন করলেও অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি অনুসমর্থন করেনি।
জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে মাত্র দুটি রাষ্ট্র নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি অনুমোদন দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্র তাদের একটি, আর অপরটি সুদান। যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সংবিধিতে তো স্বাক্ষর করেইনি, উপরন্তু যুক্তরাষ্ট্র অনেক রাষ্ট্রকে এই মর্মে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে বাধ্য করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনা সদস্য গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করলেও তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে মামলা করা যাবে না।
ইরাকের একটি প্রখ্যাত শহরের নাম ফালুজা। যুক্তরাষ্ট্র হিরোশিমা ও নাগাসাকির ঘটনার সীমিত পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে এই ফালুজায়। ২০০৪ সালে ফালুজার যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র স্বল্প তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম ও সাদা ফসফরাস বর্ষণ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বর্বরতা সেখানেই থেমে থাকেনি। গত ২০ বছর ধরে সেখানে অগণিত ত্রুটিযুক্ত বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু সম্প্রতি বাংলদেশ সফরে এসে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছেÑ বিশ্বে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। তবে শর্ত হলো, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে দূরত্ব রেখে আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব শক্তিশালী করতে হবে। রাষ্ট্র আমাদের, কিন্তু সেই রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিসহ অন্যান্য বিষয় নির্ধারণ করবে ওয়াশিংটন, প্রস্তাবটি কি আদৌ গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হলো ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা যাবে না। কিন্তু এই একই শর্ত প্রতিবেশী ভারতের ওপর আরোপ করার ক্ষমতা নেই যুক্তরাষ্ট্রের।
আমাদের দেশের কিছু নষ্ট রাজনীতিক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দেওয়ায় পশ্চিমা কিছু রাষ্ট্রের মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহ বেড়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রস্তাব সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের শামিল। এর সঙ্গে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কোনো সম্পর্ক নেই; এটি যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু পশ্চিমা রাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক, ভূ-কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত।
কবুতরের মাংস সুস্বাদু বলে শিকারি তার বুকে তীর ছোঁড়ে। হরিণের মাংস বিস্বাদ হলে শিকারি হরিণের দিকে চোখ তুলেও দেখত না। কাজেই কবুতর কিংবা হরিণ নিজেই নিজের শত্রু। ভূরাজনৈতিক সুবিধাজনক অবস্থান ও তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে ক্রমশ সম্পদশালী হয়ে ওঠায় বাংলাদেশের অবস্থাও ওই কবুতর আর হরিণের মতো।
লেখক : সাংবাদিক।






