শীতে কোলেস্টেরলের সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়

সিকডে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ৪:১৩ অপরাহ্ণশীতকালে কোলেস্টেরলের সমস্যা বেড়ে যায়। শীতে বিভিন্ন উৎসবে ভূরিভোজ সবচেয়ে বেশি হয়। বাইরের তেল-মশলাদার খাবার খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকে। কোলেস্টেরল এক ধরনের ফ্যাট বা চর্বি যা রক্তে উপস্থিত থাকে। কোলেস্টেরল দেহের অভ্যন্তরে অনেকগুলো কার্যক্রমে যেমন কোষকে নমনীয় রাখার জন্য এবং ভিটামিন ডি পরিবর্তনের জন্যও দায়ী। সচেতন থাকুন যে দুটি ধরণের কোলেস্টেরল রয়েছে, একটি হ’ল এলডিএল এবং অন্যটি এইচডিএল।
রক্তের ধমনীতে বাধা দিয়ে এলডিএল কোলেস্টেরল হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করে। যেখানে এইচডিএল কোলেস্টেরল আপনার হৃদয়ের যত্ন নিতে কাজ করে। কোলেস্টেরল বাড়ার কারণ কেবল খারাপ জীবনযাত্রা নয়, পারিবারিক ইতিহাসও এর জন্য দায়ী। তবে স্বাস্থ্যকর খাবার, হালকা ব্যায়াম এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শীতকালে কোলেস্টেরল থেকে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমাতে এ়ড়িয়ে চলুন কয়েকটি খাবার।
শীতকালে ঘরে ঘরে এই সময় পিঠেপুলি, পাটিসাপটা তৈরির ধুম পড়ে। তবে শরীরে কোলেস্টেরল বাসা বাঁধলে এই ধরনের খাবারগুলো থেকে দূরে থাকাই ভাল। ঘি, ক্ষীর দিয়ে তৈরি এই ধরনের খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ অনেক বেশি। এই ধরনের খাবার বেশি পরিমাণে খেলে খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল-এর মাত্রা বাড়তে পারে। এ ছাড়া, কোলেস্টেরল থাকলে নরম পানীয় এড়িয়ে চলা জরুরি। কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি ওজনও বাড়িয়ে দিতে পারে এই পানীয়গুলো।
শীতে কেক খাওয়ার পরিমাণও বেড়ে যায়। কেক, পেষ্ট্রির মতো খাবারে মাখনের পরিমাণ অনেক বেশি। যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। বেশির ভাগ কেকেরই প্রধান উপকরণ মাখন। কোলেস্টেরল থাকলে সেগুলি না খাওয়াই ভাল। চাইলে বাড়িতে বানিয়ে নিতে পারেন কেক। সে ক্ষেত্রে যেটা সুবিধা, তা হল, কেকে মাখনের পরিবর্তে কলা বা আপেলের সস্ ব্যবহার করতে পারেন।
কোলেস্টেরল থাকলে ডোবা তেলে ভাজা কোনও খাবার থেকে দূরে থাকতে বলেন চিকিৎসকরা। কারণ এই ধরনের খাবারে ক্যালরির পরিমাণ অনেক বেশি। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বলে এমন মুখরোচক খাবারের স্বাদ নেবেন না, তা হয় না। বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারেন এই খাবারগুলো। সে ক্ষেত্রে সাদা তেল বা সর্ষের তেলের বদলে ব্যবহার করতে পারেন অলিভ অয়েল।
কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি দিবে যেসব খাবার
যেসব খাবার দ্রুত কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, তার একটা তালিকা এখানে দেওয়া হল।
হলুদ
খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস করতেও কাজ করে। আসলে, হলুদের ভিতরে থাকা উপাদানগুলি রক্তের ধমনী থেকে কোলেস্টেরল অপসারণ করতে কাজ করে। এর জন্য আপনি হলুদের দুধ পান করতে পারেন। অথবা আপনি সকালে গরম জলের সঙ্গে আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়ো খেতে পারেন।
আমলকি
আমলকির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান কোলেস্টেরল কমাতে কাজ করে। আপনি যদি চান কাঁচা খান, বা এক চামচ গুঁড়া হালকা গরম জলের সঙ্গে পান করুন। এটি আপনার হার্টের সমস্যা থেকে রক্ষা করবে।
আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরলসহ অনেক সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। এর জন্য এক চামচ আপেল ভিনিগার নিয়ে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ভালো করে মিশিয়ে পান করুন। এটি আপনার কোলেস্টেরলের সমস্যাও সমাধান করবে এবং আপনি সুস্থ থাকবেন।
তৈলাক্ত মাছ
স্যামন, টুনা, সার্ডিন মাছ ভাল ফ্যাটের উৎস। এই প্রজাতির মাছগুলো আসলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এগুলো শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিস্ময়করভাবে কাজ করে।
ফল
দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ অনেক ধরনের ফল রয়েছে যা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এর মধ্যে আপেল, আঙুর, সাইট্রাস ফল এবং স্ট্রবেরি অন্যতম। এগুলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্যও সমধিক পরিচিত।
দ্রবণীয় ফাইবার
দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রক্তের প্রবাহে কোলেস্টেরল শোষণ কমাতে সাহায্য করে, ফলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। এই ধরনের খাবারের মধ্যে অন্যতম হল লেগিউম, কিডনি বিন, হোল গ্রেইন, ব্রাসেল স্প্রাউট ইত্যাদি।
ওটস
কোলেস্টেরলের রোগীদের ওটস খেতে বলেন চিকিৎসকরা। কলা মিশিয়ে খাওয়া যায়। ওটসে দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে। শিরায় জমার আগেই মলের মাধ্যমে শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল বার করে দেয়।
বাদাম
অস্বাস্থ্যকর চর্বি বেছে নেওয়ার পরিবর্তে বাদাম, বীজজাতীয় খাদ্য, অ্যাভোক্যাডো এবং আরও অনেক কিছুর মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবার বেছে নিতে হবে।
অলিভ অয়েল
উদ্ভিজ্জ তেলের তুলনায় অলিভ ওয়েলে ওলেয়িক অ্যাসিড, লিনোলেয়িক অ্যাসিড এবং পামিটিক অ্যাসিডের মতো মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি পরিমাণে থাকে। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল হল সবচেয়ে কম প্রক্রিয়াজাত অলিভ অয়েল।
ডালজাতীয় শস্য
বিনস ও রাজমা জাতীয় খাবারে ফাইবারের পরিমাণ খুব বেশি থাকে। ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বেশ উপকারী। তাই কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে ডায়েটে রাখতেই হবে রাজমা।
মশলা
আদা, রসুন, হলুদ, ধনে, কালো মরিচ এবং দারচিনির মতো মশলা হার্টের জন্য অত্যন্ত ভাল। রক্তে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। মেথি বীজ ফাইবার সমৃদ্ধ। কোলেস্টেরলের রোগীদের রান্নায় এটা ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
লাইফস্টাইল/আবির