জ্বালানি সংকট এবং আমাদের অদূরদশীতা

ইয়াহিয়া নয়ন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ নভেম্বর ২০২২, ১:১৯ অপরাহ্ণ৫ আগস্ট ডিজেল এবং অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম এক লাফে ৫২ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়ে সরকার অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতিকে অনিবার্য করে তুলেছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণ তুলে ধরছে। সরকারের নিজেদের গাফিলতি এবং অদক্ষতার কারণেই অর্থনীতিতে বর্তমান বিপর্যয়, বলে দাবি করছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা।।
তাঁরা বলছেন, ২১ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বাড়তে বাড়তে ২০২২ সালের জুন মাসের শেষে এসে ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট আমদানি ব্যয়কে ৮৯ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩৮ শতাংশ বেশি। যা ৫১ বছরে ২০২১-২২ অর্থবছরের আমদানি ব্যয় ছিল সর্বোচ্চ। এর ফলে দেশের রফতানি আয় ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেড়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হলেও ২০২১-২২ অর্থবছরের বাণিজ্য ঘাটতি ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। আমাদের দেশ বরাবরই বাণিজ্য ঘাটতির দেশ। কিন্তু দুই দশক ধরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ফর্মাল চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্স এ বাণিজ্য ঘাটতি মেটানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট অ্যাকাউন্টে প্রায় প্রতি বছর উদ্বৃত্ত হওয়াই নিয়মে পরিণত হয়েছিল। তাই ২০০১-০২ অর্থবছর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেখানে মাত্র ১ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলারে অবনমিত হয়েছিল সেখান থেকে রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল।
এরপর থেকে শুরু হলো রিজার্ভের পতনের ধারা। ২০২২ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে যাওয়ার পর সরকারের টনক নড়েছে। আইএমএফ নির্দেশ দিয়েছে কয়েক বছর ধরে সরকার এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড থেকে রফতানিকারকদের রিফাইন্যান্সিং স্কিমের অধীনে বৈদেশিক মুদ্রায় যে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে সেটাকে রিজার্ভ থেকে বাদ দিতে হবে। ওই নির্দেশ সরকার মানছে না, কারণ তাহলে বাংলাদেশ কর্তৃক ঘোষিত রিজার্ভকে সাড়ে ২৮ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে ফেলতে হবে। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে আমদানি এলসি খোলা জোরেশোরে শুরু হলেও অর্থমন্ত্রী তা ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি, কোনো রকম আমদানি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপও গ্রহণ করেনি সরকার। ২০২১ সালে শ্রীলংকাকে রিজার্ভ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়ে বাহবা কুড়িয়েছে সরকার।
২০২২ সালের মার্চ থেকে এলএনজির আন্তর্জাতিক দাম ধাপে ধাপে বাড়তে বাড়তে এখন ১০ গুণ বেড়ে যাওয়ায় সারা বিশ্বে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তেলের দামও ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০২২ সালের মে মাসে ব্যারেলপ্রতি ১৪০ ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল। গত জুলাই মাস থেকে আসন্ন বিশ্বমন্দার আশঙ্কায় তা আবার কমতে শুরু করেছে। ১৫ অক্টোবরে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮৯ ডলার।
আমরা বিপদে পড়েছি আমদানীকৃত এলএনজির ওপর আমাদের জ্বালানি নীতির অতিনির্ভরশীলতার কারণে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের ভুল নীতির কারণেই এহেন অতিনির্ভরতা। দেশের স্থলভাগে এবং ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমায় গত ১৪ বছর ধরে বলতে গেলে কোনো তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চালায়নি সরকার। জ্বালানি নীতি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতি হিসেবে বর্তমান সরকার বেছে নিয়েছে আমদানীকৃত এলএনজিনির্ভরতা। কারণ ২০১০-২০২০ পর্যায়ে এলএনজির আন্তর্জাতিক দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি চার ডলার, ২০২২ সালের আগস্টে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ ডলারেরও বেশি। আর এখন চাইলেই বাংলাদেশ স্পট মার্কেট থেকে এ দামেও এলএনজি কিনতে পারছে না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-উদ্ভূত চরম সংকটের কারণে।
ফলে বাধ্য হয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে তিন মাস ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ব্যাপক বিস্তার ঘটাতে হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়েছে। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ প্লান্টগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে। প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্যাপাসিটি অর্জন সত্ত্বেও দৈনিক উৎপাদনকে ১০/১১ হাজার মেগাওয়াটে সীমিত রাখতে হওয়ায় একদিকে লোডশেডিং যেমনি বেড়েছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অব্যবহূত বিদ্যুৎ প্লান্টগুলোকে ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ হিসেবে প্রদত্ত হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ। আমদানীকৃত এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতি, শিল্পনীতি এবং গৃহস্থালি জ্বালানি নীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এ বিপর্যয়ে ঠেলে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব-দ্বীপ অঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন সাগর-উপসাগরের তলদেশগুলো সাধারণত সবচেয়ে বেশি হাইড্রো কার্বন (তেল ও গ্যাস) খনির ভাণ্ডার হওয়াই স্বাভাবিক। যুক্তরাষ্ট্রের গালফ ডেল্টা, ইন্দোনেশিয়ার মহাকাম ডেল্টা এবং আফ্রিকার নাইজার ডেল্টা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বঙ্গোপসাগরের ভারত উপকূলের অদূরে গোদাবরী বেসিন এবং মিয়ানমারের রাখাইন উপকূলের অদূরে বাংলাদেশের সীমানার কাছাকাছি অঞ্চলের অগভীর সাগরতলে প্রাপ্ত বিপুল গ্যাসভান্ডার এই তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণ করে চলেছে।
অথচ বাংলাদেশ ২০ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে কম অনুসন্ধানকৃত বা স্বল্প পরীক্ষিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশের সম্ভাব্য গ্যাস ক্ষেত্র সম্পর্কে জরিপ চালানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দৃঢ় অভিমত হলো এ দেশের স্থলভাগ এবং সাগরতলে এখনো ৩২ টিসিএফ থেকে ৪২ টিসিএফ গ্যাসের ভাণ্ডার বিদ্যমান রয়েছে। ইউনাইটেড স্টেটস জিউলজিক্যাল সার্ভে এবং পেট্রোবাংলার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত দুই বছরের একটি মূল্যায়ন প্রকল্পের অভিমত হলো, এ দেশের অনাবিষ্কৃত গ্যাস সম্পদের পরিমাণ কমবেশি ৩২ টিসিএফ হতে পারে। নরওয়ে সরকারের অধীন নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডাইরক্টেরেট বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের হাইড্রোকার্বন ইউনিটের সঙ্গে যৌথ জরিপ চালিয়ে মত দিয়েছে, সম্ভাব্য অনাবিষ্কৃত গ্যাস-সম্পদ ৩৮-৪২ টিসিএফ হতে পারে। এরপর র্যাম্বল নামের একটি ইউরোপিয়ান তেল ও গ্যাস কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান জরিপ চালিয়ে মত দিয়েছে, সম্ভাব্য গ্যাসের পরিমাণ ৩৪ টিসিএফ।
তাহলে বাংলাদেশে এত কম গ্যাস-অনুসন্ধান চালানোর কারণ কী? বিশেষজ্ঞদের দৃঢ় অভিমত, কয়েকজন প্রভাবশালী এলএনজি আমদানিকারকের অন্যায্য কায়েমি স্বার্থ রক্ষার জন্যই বাংলাদেশ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা গ্যাস অনুসন্ধানকে ‘কোল্ড-স্টোরেজে’ পাঠিয়ে দিয়ে এলএনজি আমদানিকে দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
২০১৫ সালে পেট্রোবাংলা দেশের সমুদ্র অঞ্চলের ২৬টি অনুসন্ধান ব্লকে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সার্ভিস কোম্পানির মাধ্যমে সিসমিক সার্ভে (মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে) পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, যাতে এ জরিপের মাধ্যমে একটি ডাটাবেজ তৈরি করে তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অনুসন্ধানের দর কষাকষি চালানো যায়। সবচেয়ে উপযুক্ত সার্ভিস কোম্পানি বাছাইয়ের জন্য একটি ‘জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি’ও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে কমিটির বাছাইকৃত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-নরওয়েজিয়ান জয়েন্ট ভেঞ্চার সার্ভিস কোম্পানিকে সরকার বাতিল করে দিয়েছিল। ওই কোম্পানিটি যখন বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডের যোগ্যতার পরীক্ষায় আবার উত্তীর্ণ হয়েছিল তখন কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকেই পুনরায় পুরো প্রক্রিয়াটি রহস্যজনকভাবে থামিয়ে দেয়া হয়েছিল। এর ফলে পরবর্তী সাত বছরেও বাংলাদেশের সাগরতলের গ্যাস অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি আর এগোতে পারেনি। এ সাত বছরে আর একবারও সাগরের ২৬টি ব্লকে ‘সিসমিক সার্ভে’ চালানো হয়নি, কোনো তেল-গ্যাস অনুসন্ধানও শুরু করা যায়নি।
সাম্প্রতিককালে ভারতের ‘অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন’কে একটি ব্লকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব প্রদান করা হলেও তারা সাত বছরে মাত্র একটি কূপ খনন করেছে। আর কোনো আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিকে এখনো বাংলাদেশের অনুসন্ধান ব্লকগুলো ইজারা দেয়ার কাজটি সম্পন্ন করা যায়নি। এবস ব্যর্থতার জন্য দায়ী কারা?
প্রতিবেশী মিয়ানমার এবং ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে কয়েক দশকের বিরোধ অত্যন্ত সফলভাবে মোকাবেলা করে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল অন ল’স অব দি সি’স (ইটলস) এবং দি হ্যাগের আন্তর্জাতিক আদালত থেকে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে বাংলাদেশ, যার পুরো কৃতিত্ব শেখ হাসিনার সরকারের। দুঃখজনক হলো, এ বিজয় অর্জনের আট বছর অতিক্রান্ত হলেও শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের কর্তাব্যক্তিরা অগ্রাধিকার দিয়ে অবিলম্বে এ বিশাল সমুদ্রসীমা থেকে সম্পদ আহরণ জোরদার করাকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। গ্যাস অনুসন্ধানে রহস্যজনক বিলম্ব যে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি ঘটিয়ে চলেছে তার দায় কে নেবে?
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমার অদূরে মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণাধীন সমুদ্রে বেশ কয়েক বছর পূর্বে প্রায় চার ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে। ওই গ্যাস এখন পুরোটাই চীনে রফতানি করছে মিয়ানমার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ওই অঞ্চলের নিকটবর্তী বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় একটি ব্লক দক্ষিণ কোরিয়ার দাইউ কোম্পানিকে তেল-গ্যাস আহরণের জন্যে ইজারা দিয়েছিল। দাইউ যথাযথ প্রস্তুতি এবং সরঞ্জাম নিয়ে ওই অঞ্চলে তেল-গ্যাস এক্সপ্লোরেশন চালানোর জন্যে কয়েকটি জাহাজ নিয়ে উপস্থিত হলে সেখানে মিয়ানমারের নৌবাহিনী তাদের বাধা দেয় এবং ফিরে আসতে বাধ্য করে। ২০১২ সালের ইটলসের রায়ে ওই বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের মালিকানা এখন পেয়ে গেছে বাংলাদেশ, কিন্তু গত দশ বছরেও ওখানে এখনো কোনো নতুন এক্সপ্লোরেশন শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো ইজারাদার কোম্পানি।
এ বিলম্বের কারণে মিয়ানমার যে এই সমুদ্রাঞ্চলের ভূগর্ভস্থ গ্যাস তুলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে সে গ্যাস তো বাংলাদেশও পেতে পারত! কারণ, সন্নিহিত অঞ্চলগুলোর ভূগর্ভে গ্যাসের মজুদ তো শুধু মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণাধীন সমুদ্রসীমায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ওখানে গ্যাস পাওয়া যাবেই, এটা প্রায় নিশ্চিত মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। (২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত সাউথ-ইস্ট এশিয়া পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন সোসাইটির বার্ষিক কনফারেন্সে একটি আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান কোম্পানি বাংলাদেশের এসএস-১১ ব্লক সম্পর্কে এ-অভিমত তুলে ধরেছে)।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় সত্তর লাখ টন পেট্রলজাত পণ্য আমদানি করলেও ৫৩ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা হলো মাত্র ১৫ লাখ টন। বাকি ৫৫ লাখ টন আমাদের রিফাইনড জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়। আরেকটি বৃহত্তর ক্যাপাসিটির রিফাইনারি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াটি ১০ বছর আগে শুরু করা হলেও রহস্যজনকভাবে সেটা আটকে আছে ভারতীয় কনসালটেন্ট ফার্মের একগুঁয়েমির কারণে। তারা ফ্রান্সের ‘টেকনিপ’ ফার্মটিকে ডিসকোয়ালিফাই করেছে অজ্ঞাত কারণে। আমাদের সরকার এতোদিনেও এই সমস্যার সমাধান করতে পারল না! ক্রুড অয়েল আমদানি করে পরিশোধন করলে বাংলাদেশের যে খরচ পড়ত এখন তার চেয়ে ১৫-২০ ডলার ব্যারেলপ্রতি বেশি খরচ পড়ছে রিফাইনড অয়েল আমদানি করায়। এমনকি সম্প্রতি রাশিয়া আমাদের কম দামে ক্রুড অয়েল আমদানির যে সুযোগ দিতে চেয়েছিল তা বাংলাদেশ নিতে পারেনি রাশিয়ার ‘হেভি ক্রুড’ রিফাইন করার ক্যাপাসিটি ইস্টার্ন রিফাইনারির না থাকায়।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।