মানুষের কান্না পানিতে মিশে একাকার :লজ্জিত অশ্রু জল

গোলজার আহমদ হেলাল :
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মে ২০২২, ৫:০৮ অপরাহ্ণপরিসংখ্যান ভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি আহবান হোক মানবিক পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার
ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষ। মানুষের জীবন ও সম্পদ হুমকীর পথে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃষ্টিতে গোটা উত্তর ও পূর্ব সিলেটের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে।
কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ,জকিগঞ্জ উপজেলা ও সিলেট মহানগরীর অনেক বাড়ীঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আক্রান্ত এলাকার মানুষজন ঘরবাড়ী ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ অন্যত্র চলে গিয়েছেন। সহায় সম্পত্তি রেখে প্রাণ বাঁচাতে মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে।
অনেক মানুষের গবাদিপশু, ক্ষেতের ফসল, কৃষি দ্রব্যাদি, ফসল, মৎস্য খামার বিশাল ক্ষতি ও ঝুঁকির মধ্যেই পড়েছে। কারো ইতোমধ্যে সর্বনাশ হয়ে গেছে। বন্যার ভয়াবহতা ও ধ্বংস শীলায় মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বন্যা কবলিত জনপদ। এমন আশংকাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
বন্যার্ত মানুষের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার নেই। ক্ষতিগ্রস্ত সবার কাছে এখনো ত্রাণও পৌঁছেনি।শতকরা ১০ভাগ মানুষও ত্রাণ পায়নি বলে অনেকের ধারণা। একদিকে খাবার সংকট, অন্যদিকে আবাসন সংকটে খুব কষ্টে আছে অসহায় পানিবন্দী বানভাসী মানুষগুলো।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঘরে ঘরে এক অশনি সংকেত।অশান্তি আর অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন আক্রান্ত পরিবার ও মানুষ। মানুষের কান্না পানির সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। কথা বলার কিছু নেই। লোপ পায় বাকশক্তি। লজ্জিত হয় অশ্রু জল। শিশু, বৃদ্ধ আর নারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। একজন শ্রমজীবী মানুষ আক্ষেপ করে বলেছেন, কেউ যদি আধপোয়া ডাইল (125gm) দেয়, তারপরও মানুষ খুশী হবে। কতটুকু অভাব আর কষ্টে থাকলে মানুষ একথা মুখ দিয়ে প্রকাশ করে। এলাকার জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কাছে পাচ্ছেন না অনেকেরই অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জাতীয় দুর্যোগে কাউকে দোষারোপ না করে সম্মিলিত কাজ করা প্রয়োজন। একটি মানবিক পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করতে পারলে দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব। জাতির ক্রান্তিলগ্নে গণমাধ্যম কর্মীদের ভূমিকা সব সময় গৌরবোজ্জ্বল ও প্রশ্নাতীত। একটি বিষয়ে রাষ্ট্র ও সরকারকে অথবা সেবাদানকারী সংস্থা গুলোকে সহায়তা করতে হবে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে। আর তা হল বন্যয় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিসংখ্যান মুলক প্রতিবেদন তৈরী করা। একেকটি উপজেলার কোন কোন গ্রাম পানির নিচে, কতটি বাড়ী ডুবে গেছে , কতজন মানুষ আক্রান্ত,পানিবন্দী, কোথায় কোথায় রিলিফ গেছে, কোথায় কোথায় রিলিফ এখনো যায়নি,সতর্কতামুলক বিজ্ঞপ্তি, আশ্রয়কেন্দ্রের অবস্থা, সরকারী ত্রাণের যথাযথ ব্যবহার ইত্যাদি ডাটা নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা।
তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ইউ, পি চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ নিজ নিজ এলাকার মানুষের খোঁজ খবর নেয়ার ক্ষেত্রে আরো সচেতন হতে হবে। কিছু দেন বা না দেন এটা বড় কথা নয় মানুষের কাছে থাকলে এটাতেই লোকজন বড্ড খুশি হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে,অসহায় পানিবন্দী মানুষের সাহায্য করতে স্ব স্ব অবস্থান থেকেই কাজ করতে হবে। সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে। ত্রাণ পরিবহন কার্যে অংশ নেয়া একজন গাড়ী চালক গাড়ী ভাড়াই নিতে চাইল না। বরঞ্চ ইচ্ছা করেই খাদ্য সামগ্রী কাঁধে করে বহন করল।এবং বলল আমার আপনাদের সাথে একাজে সম্পৃক্ত হলাম। সত্যিকার অর্থে মানবিক কাজে মানুষের আবেগ থাকে। আবেগকে শক্তিতে পরিনত করতে হবে। তখন ই গড়ে উঠবে এক মানবিক পৃথিবী।
সিলেটের গোটা পাঁচটি উপজেলা ই বন্যা দুর্গত এলাকা। রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক দল, বেসরকারী সংস্থা,সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ এবং সমাজের বিত্তবানদের এ দুর্যোগে একযোগে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় সংস্থা গুলোর পাশাপাশি প্রতিটি এলাকার ছাত্র ও তরুণদের দুর্যোগ মোকাবেলায় তৎপর থাকা খুব জরুরী।
সিলেটেরকন্ঠ/আবির