একজন নাজমুল ইসলাম

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৬:২৯ অপরাহ্ণসৈয়দ আজবি:
নেতৃত্ব এমন এক বৃক্ষ যেখানে ফল মাত্রেই সুমিষ্ট নয়। একই আম গাছে যখন আম ধরে, তখন আম গাছ কোন আমকে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড পাইয়ে দেয়, পাতায় বেশি ক্লেরোফিল জমা করিয়ে কোন আমকে বেশি বেশি যত্ন করে বড় করে ; মিষ্টি করে দেয়, আর কোন আমকে আকৃতিতে ছোট করে কিংবা পোকা মাকড়কে ইনভাইটেশন জানিয়ে কোন আমের মধ্যে প্রেবশ করিয়ে সেই আমটিকে নষ্ট করতে বলে – সেরকম কিন্তু নয় !
আম গাছের জন্যে আর শাখায় গজিয়ে ওঠা সবগুলি আমই সমান ।
কথা বলছি সিলেটের সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সদস্য নাজমুল ইসলাম কে নিয়ে।
ছাত্রলীগের তুচ্ছতিতুচ্ছ ভুল হলেই তাদেরকে নিয়ে নানান ট্রল করা হয়, পত্রিকার হেডলাইন হয়! হাজার ভালো করলেও খারাপের খাতায় বিস্ময়কর ভাবে তারা দন্ডায়মান! যাই হোক, যেটা যুক্তিসঙ্গত সেটা নিয়ে কথা বলা যৌক্তিক। সেই প্রাসঙ্গিগতায় এমসি কলেজের ধর্ষণ ঘটনায় ছয়জন ছাত্রলীগ নামধারী কুলাঙ্গার এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রসঙ্গটিও উঠে আসে বৈকি ! যেকোন অপরাধেরই ন্যায্য বিচার প্রতিটি নাগরিকের কাম্য।
আমরা রাজনীতি করিনা। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসী আর যুগান্তকারী সব সিদ্ধান্তকে অবনত মস্তকে স্বীকার করি।
এই যে এমসি কলেজে ন্যক্যারজনক ধর্ষণের ঘটনাটি সংঘটিত হলো, এরপর সিলেটে অপরাধীদের শাস্তির জন্য আন্দোলন কি হয়নি ? কে করেছে ? এই নাজমুল ইসলাম কেই তো দেখা গেছে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে ! অপরাধীদের শাস্তি দাবী করতে ! ছাত্র ছাত্রীদের সাথে উনিইতো ছিলেন ! উনি কি জানতেন না ওইসব ধর্ষক তার কতোটা কাছের ছিলেন ? উনি কি ভুলে গিয়েছিলেন, উনি ওইসব কুলাঙ্গার দের সাথে সেলফি তুলেছিলেন ? নিশ্চয়ই যান নি !
আজকে অনেকেই উনাকে ধর্ষকদের পৃষ্ঠপোষক বলছেন। আমি প্রথমেই আম গাছের উদাহরণ দিয়েছি। আর এই কারনেই দিয়েছি যে, রাজনৈতিক একজন নেতার কাছে ওই আম গাছের আম গুলোর মতোই তার দলের এক একটা কর্মী সমান। আর নাজমুল ইসলাম এখানে ওই আম গাছটাই।
৭১ এ অনেক পরিবারের সন্তানই, অনেক পিতাই রাজাকারের খাতায় নাম লিখিয়েছে। আবার সেই পরিবারের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এরকম নজির অনেক আছে। তার মানে তো এই নয় যে ঐ মায়ের কিংবা ওই পরিবারের কর্তার পৃষ্ঠপোষকতায় দৈন্যতা ছিলো। দুই নম্বরি ছিলো। কে কোন শিক্ষায় নিজের মননকে গচ্ছিত করবে, এটা হাল ধরবার সময়ই বোঝা যায়। এর আগে নয়। নাজমুল ইসলাম ও সেই কাজটি করে দেখিয়েছেন। তার আইডি ঘাঁটলে দেখা যায়, আজ পর্যন্ত তিনি নিজের পক্ষে একটি পোস্টও লেখেননি। কয়েক ঘন্টা পরপর তিনি সেইসব কুলাঙ্গারদের ছবি শেয়ার করেছেন। ধরিয়ে দিতে বলেছেন, বিচার দাবী করেছেন। এবং ধরা পড়ার পর ওদের প্রতি নিজের কঠিন মনোভাবই তিনি বজায় রেখেছেন।
কেন করেছেন ? উনি তো চাইলেই উনার আইডি ডিএক্টিভ করে দিতে পারতেন। পেইজ খুলে সেখানে আসতে পারতেন। আমার কাছে নাজমুল ইসলামকে একজন সত্যিকারের সাহসী ছাত্রলীগ নেতা বলে মনে হয়েছে। এযাবৎ কালে এই লোকটিই দেখা গেছে বাইকে চড়ে মিছিল নিয়ে যেতে। লাইভে এসে নানান আন্দোলন করতে।অলিতে গলিতে ছাত্রলীগের নানান সুকীর্তিকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন দ্বায়িত্ব হিসেবে। সিলেট শহরের প্রাণ হিসেবে নানান ফরমাল ইনফর্মাল এক্টিভিটি শো করেছেন তিনি। এই সবের মধ্যে দলীয় স্বার্থই কি ছিলো না ! যদি না থাকে, তাহলে উনি তো নিজেও গা বাঁচিয়ে চলতে চাইতে পারতেন ! তাই নয়কি !!
রিজেন্ট হাসপাতালের শাহেদ, ডাক্তার সাবরিনা, দুশ্চরিত্র পাপিয়া, এদের সাথে বড় বড় প্রায় সকল নেতারই ছবি পুরো জাতি দেখেছে। কিন্তু পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তাদের কেন দুর্নাম ছড়ায়নি, নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়নি? কিংবা রেড সার্কেল দিয়ে তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কেন ধ্বংস করে দেবার মতো পায়তারা বা দাবী উত্থাপন করা হয়নি ?
আসলে কি, হাতি যখন গর্তে পড়ে যায় তখন লাথি দিতে আসবার ইচ্ছে থাকা চামচিকার অভাব হয়না। সিলেট ছাত্রলীগে নাজমুল ইসলামের সকল রাজনৈতিক অবদানকে অস্বীকার করে তাকে কেবল ধর্ষকদের পৃষ্ঠপোষক বলে দাবী করবার মতো কৃতঘ্নদেরও সেইরকম ভাবেই অভাব হচ্ছেনা বলেই মনে হচ্ছে।
রাজনীতি একটি চর্চার বিষয়। এই চর্চায় ভুল থাকবে। মানুষ চিনতে ভুল করবার প্রাসঙ্গিকতা থাকবে। বঙ্গবন্ধুও মানুষ চিনতে ভুল করেছেন। যাদের তিঁনি পাগলের মতো ভালোবেসেছেন তাঁরাই তাঁর পরিবারকে হত্যা করেছে। কাজেই, ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
একজনের দেশপ্রেম অন্য কারো ভুল দিয়ে পরিমাপ করে সেই একজনকে তুলনা করার নামমাত্র বিষয় নয়। এটা মনে রাখতে হবে।
নাজমুল ইসলামের মতো দ্বায়িত্ববান দলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তরুণ নেতাকে ভবিষ্যৎ আওয়ামীলীগ এর স্বচ্ছতার কথা ভেবেই দ্বায়িত্ব দিতে হবে তার নিজের দলটি পরিষ্কার করবার। যাচাই বাছাই করে ছাঁটাই করবার। তাকে দিয়েই সিলেট ছাত্রলীগকে আবার ঢেলে সাজাতে হবে। এবং তিনি সেটা পারবেন। কারন তিনি দলকে ভালোবাসেন। দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে তিনি লড়ে এসেছেন। হুট করে কাওকে কলঙ্কিত করে তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেই যোগ্যদল প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়না । এটা মাথায় রাখতে হবে।
আরো মনে রাখতে হবে, অনুশোচনার পরে যে প্রেম হয়, সেটাই সব চাইতে গভীর।
লেখক : সাহিত্যকর্মী। . . . . . . . . .