আমেরিকায় ডাক্তার ফারুক ও বিএনপি নেত্রী মুনের মৃত্যু
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মে ২০২০, ১০:০৪ পূর্বাহ্ণডেস্ক রিপোর্ট: আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেত্রী রাশেদা আহমেদ মুন এবং আপস্টেট কম্যুনিটির অত্যন্ত পরিচিত মুখ ডাক্তার ফারুক আহমেদ মৃত্যুবরণ করেছেন। বিএনপি নেত্রী রাশেদা আহমেদ মুন গত ৩০ এপ্রিল এবং ডাক্তার ফারুক আহমেদ ২৮ এপ্রিল শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। এ নিয়ে আমেরিকায় করোনায় ২২৩ জন বাংলাদেশী প্রাণ হারালেন। আরও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো প্রিয়জনদের কাছে ফিরে আসতে নাও পারেন বলে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, করোনায় আমেরিকায় প্রায় ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে প্রায় ৬৪ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করেছেন। রিকভারি করেছেন ১ লাখ ৫২ হাজার মানুষ। বাকি সবাই হাসপাতালে রয়েছেন। যেহেতু করোনা ভ্যাকসিন এখনো পর্যন্ত নেই। তাদের মধ্যে অনেকেই হারিয়ে যেতে পারেন।
এ দিকে নিউইয়র্কে করোনায় আক্রান্ত ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষ এবং প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ হাজার ৫ শত মানুষ। নিউইয়র্ক সিটির গভর্নর এন্ড্রু কুমো বলেছেন, নিউইয়র্কে করোনার প্রাদুর্ভাব কমেছে। মৃত্যু মিছিলও ছোট হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নিউইয়র্কে ৩০৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে হাসপাতালে ২৮৭ জন এবং নার্সিং হোমে ১৯ জন। নিউইয়র্ক সিটির মেয়ের বিল ডি ব্লাজিও ও গভর্নর কুমো নিউইয়র্ক সিটিতে স্থানীয় সময় রাত ১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান, এই সময় ট্রেন পরিষ্কার করা হবে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যতদিন থাকবে ততদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেত্রী, যুক্তরাষ্ট্র জাসাসের সহ-সভাপতি, কম্যুনিটির অত্যন্ত পরিচিত, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন এবং পাবনা সমিতির মহিলা-বিষয়ক সম্পাদিকা রাশেদা আহমেদ মুন করোনাভাইরাসের সাথে প্রায় এক মাস লড়াই করে অবশেষে হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি… রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৪৬ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, ২ মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনসহ অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
পাবনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন জানান, রাশেদা আহমেদ মুন প্রথমে আমেরিকায় এসে টেক্সাসে উঠেছিলেন। সাথে ছিলো তার বড় মেয়ে। সেখানেই বড় মেয়েকে বিয়ে দেন। স্বামী এবং ছোট মেয়েকে বাংলাদেশেই রেখে এসেছিলেন। ছোট মেয়ে বাংলাদেশে কলেজে পড়ে। টেক্সাসে মেয়ের বিয়ের পর কয়েক বছর আগে তিনি নিউইয়র্ক চলে আসেন। নিউইয়র্ক এসে তিনি জ্যাকসন হাইটসের ব্রডওয়ের উপর একটি প্রাইভেট বিল্ডিং-এর দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন। তারা কয়েকজন মহিলা মিলে মেসে থাকতেন। নিউইয়র্কে এসে তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয় হন এবং বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের বেশ কয়েকটি কমিটিতে সম্পৃক্ত হন। তিনি বিএনপির সক্রিয় নারী নেত্রী ছিলেন। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের প্রতিটি সভা-সমাবেশ এবং বিক্ষোভে তিনি সক্রিয় ছিলেন। বিক্ষোভ করতে ছুটে গিয়েছিলেন জাতিসংঘের সামনে, ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের সামনে। এ ছাড়াও তিনি কম্যুনিটির বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন।
মনির হোসেন আরো জানান, প্রায় এক মাস আগে রাশেদা আহমেদ মুন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার অবস্থা খারাপ হলে তাকে লংআইল্যান্ডের প্লেনভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই হাসপাতালেই প্রায় এক মাস মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত ৩০ এপ্রিল স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন। অনেকেই বলেছেন, মৃত্যু সব সময়ই দু:খজনক। কিন্তু করোনায় মৃত্যু আরও অসহায় এবং আরও বেশি দু:খজনক। কারণ পাশে কেউ থাকেন না, মৃত্যুর পরও কেউ থাকেন না। রাশেদা আহমেদ মুনের সবই ছিলো। কিন্তু মৃত্যুর সময় কোন আপনজন পাশে ছিলো না। এটাই ছিলো বেদনাদায়ক মৃত্যু।
উল্লেখ্য, রাশেদা আহমেদ মুনের দেশের বাড়ি পাবনা শহরের শালবাড়িয়া। তার মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি, জাসাস এবং বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করেছেন।
এদিকে নিউইয়র্কের আপস্টেটের ওরেঞ্জ কাউন্ট্রির আরেক অত্যন্ত পরিচিত মুখ ডাক্তার ফারুক আহমেদ গত ২৮ এপ্রিল আপস্টেটের মান্টিফিউর সেন্টলুকস কর্নেল হাসাপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৭ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে, ১ মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট বিশ্বজিৎ সাহা জানান, ডাক্তার ফারুক আহমেদ মরণব্যাধি ক্যান্সারে ভুগছিলেন। এর মধ্যে দুটো কিমো থেরাপিও নিয়েছেন। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মন্টিফিউর সেন্টলুকস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। বিশ্বজিৎ সাহা আরো জানান, যে হাসপাতালে ফারুক আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন সেই হাসপাতালেই তিনি চাকরি করেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তিনি ক্যান্সারে মারা গিয়েছেন। . . . . . . . . .





