সুলতান মনসুরের ছিটকে পড়ায় লাভ হলো কার

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ অক্টোবর ২০১৬, ১০:২৯ পূর্বাহ্ণসুলতান মোহাম্মদ মনসুর।ডাকসুর ভিপি ও ছাত্রলীগের সভাপতি। স্বাধীনতার পর তিনি ছাড়া আর কারো নামের সাথে একসাথে এ দু’ দুটো পদবীর জায়গা হয়নি। স্বাধীনতার পূর্বেও কেবল একজনই এমন বিরল পরিচয় পেয়েছিলেন, তিনি তোফায়েল আহমেদ। স্বাধীনতার আগে পরে মিলিয়ে কেবল তারা দুজনই হচ্ছেন ছাত্রলীগের এমন সভাপতি যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ঢাকসু) ভিপিও ছিলেন। তোফায়েল আহমদের সাথে আরো এক জায়গায় মিল আছে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের সাথে। তাদের দুজনেরই পা পড়েছে জাতীয় সংসদে। অমিলও আছে, তোফায়েল আহমেদ মন্ত্রী হয়েছেন, সুলতান মনসুর মন্ত্রী হতে পারেননি। ‘এক-এগারো’ ঝড় না হয়ে এলে এ পরিচয়টাও হয়তো এতোদিনে পাওয়া হয়ে যেতো সুলতান মনসুরের।
আওয়ামীলীগের বর্তমান ২০তম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক নিয়ে যে এতো জল্পনা আর আলোচনা সেটাও এতোটা গড়াবার সুযোগ পেতোনা সুলতান মনসুর ছিটকে না পড়লে। হয়তো সিলেটবাসী পেতো দেশের প্রচীনতম দলটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাদের মাটির এক সন্তানকে। এমনটাই মনে করেন সিলেট অঞ্চলের অনেকে। একমাত্র সুলতান মনসুর ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে এতোটা ইমেজ নিয়ে বর্তমান সময়ের আর কোনো সিলেটি নেতা আওয়ামীলীগে দাপটের সাথে পথ চলেন নি। সুলতান মনসুর একমাত্র নেতা যিনি সিলেটের সবকটি কলেজের ভিপি ছিলেন।
পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে হত্যা করেছিলো তখন প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে উঠেছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। বদলা নিতে অস্ত্রও তুলে নিয়েছিলেন হাতে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা এখনও সেই একই রয়ে গেছে সুলতান মনসুরের। তবে বঙ্গবন্ধুর দল থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়েছেন তিনি। দায়ী ঐ ‘এক এগারো’ই।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঝড় হয়ে আসা ‘এক-এগারো’তে ভেঙে গিয়েছিলো রাজনৈতিক দলগুলোর সুখের ঘর। ঝড়ো হাওয়া অবিশ্বাসের দোলায় দুলিয়ে দিয়েছিলো রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে। অনেকেই সেটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছিলেন। সুলতান মনসুরের অনুসারীরা মনে করেন, সেই কেউ কেউই সুলতান মনসুরের জন্য আওয়ামী লীগের মনে বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। তারা মনে করেন, সুলতান মনসুরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের প্রতি ঈর্ষান্বিত কেউ কেউই নেত্রীর কান ভারি করেছিলেন সুলতান মনসুরের বিরুদ্ধে। যে কারণেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এ সৈনিকের ভাগ্যে জুটে ‘সংষ্কারপন্থি’র তকমা। তারই ফলে দল থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়েন এ ক্যারিশমাটিক নেতা।
‘এক-এগারো’ অনেক কিছুই পাল্টে দিয়েছে সুলতান মনসুরের জীবনে। এক এগারো না এলে এবারের সম্মেলনেই হয়তো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকত একটি নাম- সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। হয়তো আলোচনা হতো প্রেসিডিয়াম বডিতে জায়গা পাবেন কি না সে নিয়ে। এমনকি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায়ও হয়তো তার নাম থাকতো। সিলেটের পত্র-পত্রিকাগুলো জল্পনার গল্প আঁকতো, ‘সুলতান মনসুর কি এবার সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন?’ কিংবা ‘সিলেটের সুলতান কি হাল ধরবেন নৌকার?’ কিন্তু এমন গল্প লিখতে পারছে না সিলেটের কলমগুলো। সেই সব কলমের কালির মাঝে তাই যেনো কি এক বেদনা লুকিয়ে আছে। অপার সম্ভাবনা নিয়ে ধূমকেতুর মতো যে মানুষটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তাকে নিয়ে এমন স্বপ্ন দেখতে পারছে না বলে মাঝে মাঝে কি সে কলমগুলোও থেমে যাচ্ছে না?
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদে মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শকে নিয়ে রাজনীতির পথে তার চলার শুরু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে আদর্শকে বুকে লালন করে যাবেন। পদ থেকে তাকে হয়তো সরিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু মানুষের হৃদয় থেকে তাকে কখনও সরিয়ে দেওয়া যাবে না। মানুষের সে ভালোবাসাই এখনও স্বপ্ন দেখায় সুলতান মনসুরকে।
. . . . . . . . .