অস্ট্রেলিয়াকে ঘিরে রহস্য…

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জানুয়ারি ২০১৬, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণহঠাৎ করে গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সফর বাতিল করে ক্রিকেট বিশ্বে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। অজুহাত হিসেবে নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছিল। কাকতালীয়ভাবে ওই সময় দুই বিদেশি খুন হয় ! যদিও সেটা ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনার অংশ, কিন্তু এ কারণেই কিনা অস্ট্রেলিয়ার ‘অজুহাত’ কিছুটা বৈধ্যতা পেয়ে যায়।
অথচ একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি পুলিশ হেড কোয়ার্টারের সামনে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে দুই পথচারী নিহত হয়। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে হামলা করে শিবসেনা। তাতে ‘নিরাপত্তাহীনতার’ বিষয়টি ওঠে না।
গত নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার ফুটবল দল অনেকটা ভয়ে ভয়ে বাংলাদেশে এসে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলে যায়। মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে লাল সবুজদের বিরুদ্ধে তারা ৪-০ গোলে জিতে বাছাই পর্বের পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করে। বাংলাদেশে এসে সকারুদের অধিনায়ক টিম কাহিল মুগ্ধতা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আমি এখানকার আতিথেয়তায় অভিভূত। সুযোগ হলে আমি আবার বাংলাদেশে আসবো। এখানকার সব কিছুই আমার খুবই ভালো লেগেছে।’
নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কাহিল বলেছিলেন, ‘আশেপাশে এতো বেশি নিরাপত্তাবাহিনী দেখে মনে হচ্ছে, আমরা যেন কয়েদি!’ সকারু কোচও নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেছিলেন। ওই ম্যাচ দেখতে প্রায় শ’খানেক অস্ট্রেলিয়ান মাঠে গিয়েছিলেন। তাদের জন্যও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে বসবাসকারী অস্ট্রেলিয়ান দর্শকরা বলেছিলেন, ‘আমরা মোটেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি না। তাই আমাদের জন্য নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি দরকার নেই।’
অথচ অস্ট্রেলিয়া সরকার তাদের ক্রিকেট বোর্ড সফরটি বাতিল করতে বাধ্য করেছিল এই অজুহাতে যে, বাংলাদেশে বসবাসকারী অস্ট্রেলিয়ানরা নাকি নিরাপদ নন! এবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করেও ঠিক একই অজুহাতে সফর বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়া।
অথচ অস্ট্রেলিয়া গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সফর বাতিল করার আগেই এখানে এসে সিরিজ খেলেছে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। পরে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল সিরিজ খেলেছে। বিপিএলে অংশ নিতে ৫৬ বিদেশি ক্রিকেটার ও ৬ কর্মকর্তা এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতে মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও বাহরাইনের ফুটবলাররা এখন বাংলাদেশে। কই, কেউ তো নিরাপত্তা নিয়ে টুঁ শব্দ করতে পারেনি। তাহলে কেন বার বার অস্ট্রেলিয়াই শুধু নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সফর বাতিল করছে?
বাংলাদেশকে ছোট করাই কি অস্ট্রেলিয়ার প্রধান উদ্দেশ্য? তা না হলে কিসের ভিত্তিতে তারা সফর বাতিল করছে। যদি তারা সত্যি সত্যি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকে তাহলে কেন ফুটবল দলকে পাঠিয়ে ছিল বাংলাদেশে? হোক না সেটা কম সময়ের জন্য। এখানে একটা বিষয় অবশ্য পরিষ্কার! বিগ-থ্রীর অংশ হিসেবে তারা আইসিসি-কে যেভাবে হাতের মুঠোয় রেখেছে, সেভাবে ফিফায় তো আর আধিপত্য নেই। তাই চাইলেই খেয়াল খুশি মতো ফুটবল ম্যাচ বাতিল করতে পারে না। তাই বার বার অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর বাতিল করার পেছনে আইসিসির অসহায়ত্বই ফুটে ওঠে।
আরেকটি বিষয় সামনে আসে! ফুটবলে অ্যাওয়ে ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয়টা তাদের দরকার ছিল। তাই তারা এসেছিল। কিংবা ফিফার কথা মতো না আসলে তাদেরকে ফিফা বরখাস্তও করতে পারতো— সে ভয়ও ছিল। কিন্তু ক্রিকেটে না আসলে তো কিছু যায় আসে না। উল্টো অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা দৃষ্টিতে দেখতে হয় আইসিসিকে।
বাংলাদেশ আয়োজক হলেও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আইসিসির টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে সন্তুষ্ট আইসিসি। তাই তো নিরাপত্তার দায়িত্ব আইসিসি নিজের কাঁধে নিয়ে অংশগ্রহণকারী দলগুলো বার্তা পাঠিয়েছে। তারপরও অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে আসতে রাজি নয়। উল্টো আইসিসিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েছে। এখানে আইসিসির দুর্বলতার চিত্রই ফুটে উঠেছে। ভাবুন তো, অস্ট্রেলিয়া এমন দৃষ্টতা যদি ফুটবলে দেখাতো!
এতো দিনে হয়তো নিষিদ্ধই হয়ে যেত। তাহলে আইসিসি কেন কঠোর হতে পারছে না? এমন মুহূর্তে আইসিসি নমনীয় আচরণ করলে দেখা যাবে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশে বড় টুর্নামেন্ট হলেই তাদেরকে ছোট করার জন্য বড় দলগুলো ফালতু অজুহাতে টুর্নামেন্ট বাতিল করবে। এতে শুধু আয়োজক দেশটিরই ক্ষতি হবে না, বড় ক্ষতি আইসিসির। কেননা এভাবে চলতে থাকলে এক সময় সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলবে ক্রিকেট।
. . . . . . . . .