ভুল থেকে শিখবে সাকিব: মাশরাফি

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ নভেম্বর ২০১৫, ৯:১৬ অপরাহ্ণএকটি মাত্র ভুল (অপরাধ)। সিলেট সুপার স্টারসের বিপক্ষে খেলার সময় একটি আউটের আবেদনে সাড়া না দেয়ায় আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন সাকিব আল হাসান। ওই ভুলটার জন্যই এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়ে যেতে হলো রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ককে। যার ফলও তারা হাতে-নাতে পেয়ে গেলো। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ৮২ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর ৪৯ বল বাকি থাকতেই ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে রংপুর।
এমন ভুল যে সাকিব নতুন করে করেছেন তা নয়। এর আগেও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। সাকিব বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটারই নন, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তিনি শুধু বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের আইকনই নন, তিনি তো পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই আইকন, পুরো দেশের ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন।
তো এমন বড় মাপের একজন ক্রিকেটার যখন বার বার ভুল (অপরাধ) করে শাস্তিও মুখোমুখি হন, তখন বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেই। প্রশ্ন উঠেছিল কুমিল্লা-রংপুরের ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনেও। মাশরাফির কাছে। তিনি শুধু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সেরই নন, বাংলাদেশ জাতীয় দলেরও অধিনায়ক। সুতরাং, দলের একজন সদস্য এমন ভুল বারবার করলে, তখন অধিনায়ককেই (একজন অভিভাবকও) সবচেয়ে বেশি চিন্তায় ফেলে এবং তাকেই এর জবাব দিতে হয়।
ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগ বিপিএলে এসে ভিন্ন ভিন্ন দলের হলেও সাকিব সম্পর্কে কৈফিয়ত কিংবা জবাব যাই বলুন, দিতে হলো মাশরাফিকে। শুধু তাই নয়, মাশরাফি বললেন, ‘সাকিব হয়তো ভুল করে ফেলেছে। আশা করি এই ভুল থেকে সে শিখবে এবং এ থেকে সে বেরিয়ে আসবে।’
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের অধিকাংশ জুড়ে ছিল সাকিব প্রসঙ্গ। ম্যাচ নিয়ে কয়েকটি প্রশ্নের পরই উঠে আসে বিষয়টা। জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সাকিব এখন ভিন্ন দলের হলেও, সে তো বাংলাদেশ জাতীয় দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও বটে। আম্পায়ারের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ফলে এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টা তিনি কিভাবে দেখছেন?
জবাব দিতে গিয়ে শুরুতেই মাশরাফি স্বীকার করলেন, কঠিন প্রশ্ন। এরপর বললেন, ‘আসলে, প্রত্যেকটা জিনিসের একটা নিয়ম কিংবা আইন আছে। সেটা অতিক্রম করলেই অনেক সমস্যা দেখা দেয়। অনেক বড় বড় খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রেও এটা হয়েছে। তো সাকিবের জন্য খুব দুর্ভাগ্য। আবার তার দলের জন্যও। কারণ, হয়তো বা ওই সময় সে তার উত্তেজনাটা ধরে রাখতে পারেনি। তবে আশা করি, ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে ঠিক হয়ে যাবে। অনেকে ভুল থেকেই শিখে। আশা করি সেও রিকভার করবে।’
আম্পায়ারের সঙ্গে সাবিকের আচরণ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। মাশরাফি বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন? জবাবে কুমিল্লার অধিনায়ক বলেন, ‘এটা আসলে ব্যক্তি টু ব্যক্তি নির্ভর করে। অনেক সময় দেখা যায়, একটা ভুল আউট হয়ে গেলে কিংবা একটি আউট না দিলে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটা একজন খেলোয়াড়ের ওপরই নির্ভর করে। কালকের (বৃহস্পতিবার) যে ঘটনাটা ঘটেছিল, যা ম্যাচের এমন একটা অবস্থায় হয়েছিল যে, ওই আউটটা না দেয়াতেই সে (সাকিব) উত্তেজিত হয়েছে। ওই আউট না দেয়ার ফলে তার দল হারতেও পারতো। সৌভাগ্যক্রমে তারা জিতে গেছে।’
আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা সম্পর্কে মশরাফি আরও বলেন, ‘আসলে সবসময়ই আম্পায়ারিং নিয়ে একটা সাধারণ আইন আছে যে, আপনি চাইলেই আম্পায়ারের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারবেন না। এটা হচ্ছে সাধারণ আইন। তো, এর পরও আমরা তো মানুষ। কিছু ভূল হয়েই যায়, এটা খুব স্বাভাবিক। তার জন্য যে কোন কিছু হতে পারে, সাকিবের আজ এক ম্যাচ জরিমানা হলো। আগের ম্যাচে শহিদ ও আল আমিন দু’জনেররই জরিমানা হয়েছে। তো ভুল করে ফেললে তার জন্য তো এ ব্যবস্থাগুলো রাখা হয়েছেই। তবে যত কম ভুল করা যায়, আমার মতে সেটা তত ভালো।’
সাকিবের পরিস্থিতি যদি মাশরাফির নিজের ক্ষেত্রে হতো, তাহলে তিনি কি করতেন? মাশরাফি বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞেস করেন তাহলে বলব, আমি কখনওই আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বাইরে কোন কথা বলতে চাই না। আমার ক্ষেত্রে এমন কখনও যে হয়নি, এরকম না; কিন্তু আমি কখনও প্রতিক্রিয়া দেখাই না। আমি মনে করি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই ফাইনাল। হয়তো বা আপনি জানতে চাইতে পারেন। সেটারও একটা সিস্টেম আছে। আম্পায়ারকে আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, ডাউন দ্য লেগ কি হয়েছিল? হয়তো বা থার্ড আম্পায়ারের সুযোগ থাকলে সেটাও তাকে অনুরোধ করতে পারেন। কিছু সিস্টেম আছে যেগুলো আপনি করতে পারেন; কিন্তু অতিরিক্ত কিছু হয়ে গেলে, তার জন্য শাস্তির সিস্টেম তো অবশ্যই রাখা হয়েছে।’
মাশরাফির কাছে জানতে চাওয়া হয়, এ নিয়ে তিনবার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন সাকিব। একজন বিশ্বমানের ক্রিকেটার হিসেবে বিষয়টা তো অবশ্যই অবাক করার মত। আপনি নিজে অবাক কি না? যে সাকিবকে আপনি চেনেন, তার সঙ্গে আসলে খাপ খায় কি না?
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বলবো, সাকিব আসলে এমন না। আপনারা নিজেরাও জানেন, সাকিব মাঠে এতটা প্রতিক্রিয়া দেখান না। কারো কারো ক্ষেত্রে হয় যে, নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। সে রকমই কিছু হয়েছে হয়তো। তো, সাকিবের আগের নিষেধাজ্ঞাগুলো ছিল একরকম, আর এটা হয়েছে আরেকরকম। সবগুলো কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন। তবুও একটা খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে যখন নিষেধাজ্ঞা তিন-চারবার হয়ে যায়, তখন আসলেই প্রশ্ন আসে। যেমন আপনারাও করেছেন; কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমিও দ্বিধাগ্রস্ত। তবে নিশ্চিত, সে এগুলো করতে চায় না। যেমন কালকের (বৃহস্পতিবার) ম্যাচে যে অবস্থাটা হয়েছে, অবশ্যই জানি না আমি থাকলে তখন কি করতাম। এটা অবশ্যই নিজের দলের কথা চিন্তা করলে আমার খারাপ লাগবে। আমি আগেরগুলোর সঙ্গে যদি না মিলাই, তাহলে একজন মানুষ হিসেবে এটা খুব স্বাভাবিক যে, একেকজনের প্রতিক্রিয়া একেক রকম হয়। হয়তো বা তার ক্ষেত্রেও ওটা ছিল তেমন। আমি এজন্যই বললাম যে, খুব দুর্ভাগ্য সাকিব এবং তার দলের জন্য। অবশ্যই, যখন দলের সেরা খেলোয়াড় বহিস্কার হয়ে যায়, তখন দলই সাফার করে। সাকিবের যে তিনটা নিষেধাজ্ঞা, তিনটা তিনরকম। কালকেরটা ধরলে, আমি বলবো যে, ও আসলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে চটে গিয়েছিল।’
. . . . . . . . .