সরি সিলেট, ক্ষমা করুন তামিম

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ নভেম্বর ২০১৫, ৬:৪০ অপরাহ্ণক্রিকেট বিশ্বে নতুন শক্তি বাংলাদেশ। লাল-সবুজের ক্রিকেট দল আজ সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের ব্র্যান্ড। পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়েকে সিরিজ হারানোর পর দেশ-বিদেশের মিডিয়াগুলোতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবস্থান এক অনন্য উচ্চতায় চলে গেছে। বিশ্বের বাঘা বাঘা ক্রিকেটাররা অকপটে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সেরা দলগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ বর্তমান র্যাংকিংয়ে সাত নম্বরে থাকলেও ভারতের সাথে ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর ২০১৫ সাল বিবেচনায় ক্রিকইনফোর এক প্রতিবেদনে বিশ্বের সেরা দুই নম্বর দল বাংলাদেশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু এর মাঝেও কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। গত ২৩ নভেম্বর মিরপুরে বিপিএলের সিলেট সুপার স্টারস ও চিটাগং ভাইকিংসের মধ্যকার ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গে এক ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তা যে আচরণ করেন, তাতে ক্রিকেটপ্রেমীরা ক্ষুব্ধ। শুধু তাই নয়, দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এ এক কলঙ্ক। বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটাররা এ ঘটনাকে অশোভন ও অভদ্রতা বলে মন্তব্য করছেন। এ অপ্রীতিকর ঘটনা কেবল একজন খেলোয়াড়েরই নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভাবমূর্তির জন্যও লজ্জাজনক।
বিপিএল এলেই আমার মনে শঙ্কা ভর করে। এবারও (তামিমের ঘটনা) এর ব্যতিক্রম হলো না। আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে আশরাফুলের কথা। ক্রিকেটে আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এই শাস্তি দেন। এবারও বিপিএল-এ ঘটলো অপ্রীতিকর ঘটনা।
কী হয়েছিল সেদিন ? মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলা শুরুর আগে বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে জটিলতায় পড়ে সিলেট সুপার স্টারস। খেলায় চারজন বিদেশি খেলোয়াড়কে রাখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সিলেট সুপার স্টারস দলের দু’জন বিদেশি খেলোয়াড় নিজ দেশের ক্রিকেট বোর্ডের অনাপত্তিপত্র না থাকায় মাঠে নামতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে বিশেষ বিবেচনায় সিলেট সুপার স্টারস দুজন বিদেশি খেলোয়াড়কে নিয়েই মাঠে নামার সুযোগ পায়। এরইমধ্যে অনাপত্তিপত্র দেখাতে না পারা খেলোয়াড়রা তাদের নিজ দেশের ক্রিকেট বোর্ড থেকে অনাপত্তিপত্র যোগাড় করেন। এরপর এই দুই বিদেশি খেলোয়াড়কে মাঠে নামানোর জন্য আবেদন জানায় সিলেট। এ পরিস্থিতিতে নিজের যৌক্তিক অবস্থান থেকেই আপত্তি তোলেন চিটাগং ভাইকিংস অধিনায়ক তামিম ইকবাল। কিন্তু তার এই আপত্তি মানতে না পেরে ক্ষেপে যান সিলেট সুপার স্টারসের স্বত্বাধিকারি আজিজুল ইসলাম। তিনি তামিমকে গালিগালাজ করেন এমনকি তার মা-বাবাকেও গালমন্দ করতে ছাড়লেন না (গণমাধ্যমের খবর)।
ওই ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তার এই আচরণে দারুণ মনোক্ষুণœ হন তামিম। একপর্যায়ে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ড্রেসিং রুমে পর্যন্ত চলে যান। শুধু তামিমই নন, এ আচরণ মানতে পারছেন না দেশের ক্রিকেটাঙ্গনের কেউই। সাবেকরাও বলছেন, এ আচরণ কেবল অভদ্রতাই নয়, অপমানজনকও। আর এটা কেবল তামিমের জন্য নয়, পুরো ক্রিকেটাঙ্গনের জন্যই অপমানজনক।
আমরা যদি একটু পেছনের দিকে যাই, তাহলে আমাদের মনে পড়বে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ছয় মাস নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আল আমিনকে দেশে ফেরত আসতে হয়েছিল। পেসার রুবেলের কেলেঙ্কারির কথা সবাই জানে। তাই তামিমকে বলব, কোনো ফাঁদে পা দিয়ে যেন ক্যারিয়ার ধ্বংস না হয়।
তামিম ইকবাল চিটাগং ভাইকিংসের অধিনায়ক। সেহেতু মাঠে খেলা চলাকালে বা খেলার আগে কোনো কিছু তার দলের স্বার্থের বাইরে গেলে বা অন্যায় কিছু ঘটলে তিনি প্রতিবাদ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশে অনেক ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ হয়, সেখানে কখনো এ ধরনের বাজে আচরণের কথা শোনা যায়নি। সিলেট সুপার স্টারসের মালিক পক্ষের লোকের এমন আচরণ দুঃখজনক। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম আর মাশরাফি বিন মুর্তজার মতো তারকাদের পাশাপাশি নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মাহমুদউল্লাহ আর সর্বশেষ মুস্তাফিজুর রহমান- এই নামগুলোই বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন শক্তি।
তাই বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডকে সতর্ক থাকতে হবে। বিসিবিকেও চোখ কান খোলা রাখতে হবে। যাতে কেউ বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করতে না পারে।
তামিম বাংলাদেশ টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক। দেশ সেরা ওপেনার। তাই তামিমের সঙ্গে সিলেটের মালিকের (আজিজুল ইসলাম) এমন আচরণ সত্যিই অপমানজনক। সিলেটের মালিকের নিজেকে সংযত করা উচিত ছিল। আর ওই সময় সিলেট সুপার স্টারস মাঠে বিদেশি খেলোয়াড় নামানো নিয়ে যে অযৌক্তিক ঘটনা ঘটাচ্ছিলো, সেখানে ওর প্রতিবাদ করাটা মোটেও অযৌক্তিক ছিল না। সরি সিলেট, সরি আজিজুল ইসলাম। ক্ষমা করুণ তামিম। আর এর জবাবটা মুখে নয়, আচরণে নয়, ব্যাটে খেলেই দিন।
. . . . . . . . .