সিনেমাকে হার মানানো শাহরুখ-গৌরির প্রেম কাহিনী

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ নভেম্বর ২০১৫, ১০:২৩ অপরাহ্ণসম্পর্ক ভাঙা গড়ার এই সময়ে গত পঁচিশ বছর যাবৎ কোনো ধরণের বিতর্ক ছাড়াই ঘর করছেন বলিউডের অন্যতম অভিনেতা শাহরুখ খান ও স্ত্রী গৌরি খান। আর এরজন্য অনেকে মনে করেন যে, শাহরুখ ও গৌরির মধ্যে যখন পরিচয় ঘটে তখন শাহরুখ আজকের মতন এমন সুপারস্টার ছিলো না। এই নাম, যশ, খ্যাতি আর তারকার জৌলুসময়তাও ছিলো না, তাই তাদের প্রেমের মধ্যে কোনো ভেজালও ছিলো না। খ্যাতি কিংবা কোনো ধরণের মোহ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ থাকার প্রশ্নও ছিলো না, কারণ গৌরি কিংবা শাহরুখ তারা পরস্পরকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবেসেছেন। আর সেই জন্যই তাদের বন্ধন এতো মজবুত, এত দৃঢ়। আর শাহরুখ-গৌরির বাস্তব প্রেমের গল্প এতোটাই চমৎকৃত হওয়ার মতো একটা উপাদেয় বিষয় যে, শাহরুখ অভিনীত তার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেমের ছবিটাও তাদের প্রকৃত বাস্তব জীবনের প্রেম কাহিনীকে হার মানাবে!


শাহুরুখ ও গৌরি ছিব্বরের প্রথম সাক্ষাৎ ১৯৮৪ সালে। এক কমন বন্ধুর আমন্ত্রনে এক পার্টিতে প্রথমবার গৌরিকে দেখেন শাহরুখ, আর সেখানেই তাকে দেখে ফিদা হয়ে যান তিনি। গৌরির সাথে মেশারও প্রানান্ত চেষ্টা করেন, কিন্তু গৌরি তাকে খুব একটা পাত্তা দেয়নি। একেতো অপরিচিত, তার উপর একবার একসাথে নাচারও প্রস্তাব করেছে ছেলেটি! শুকনো খটখটে ছেলেটার স্পর্ধা দেখেও কিছুটা অবাক গৌরি। এবং এক ফাঁকে কি করে যেন তার কাছ থেকে বাসার নাম্বারটাও নিয়ে নিল ছেলেটা! অথচ ওই সময়ে শাহরুখের বয়েস ছিল মাত্র আঠারো…!
প্রথম সাক্ষাতেই যে ছেলেটা একটা মেয়ের নাম্বার নিয়ে ফেলতে পারে, তার কাছে পুনর্বার সাক্ষাৎ করাটাও অস্বাভাবিক নয়। ফলত এরপর থেকে গৌরির সাথে শাহরুখের সম্পর্কটাও খুব সহজ হয়ে যায়। এমনকি শাহরুখ প্রায়শই গৌরিদের বাড়িও যেত। বিশেষ করে গৌরির মায়ের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে যায় তার। এভাবে মিশতে মিশতে শাহরুখকেও ভাল লাগতে থাকে গৌরির। তার স্টাইল, উচ্ছ্বাস, অভিনয়ের স্বপ্ন সবকিছুই ভালো লাগে গৌরির, কিন্তু তাকে নিয়ে শাহরুখের ক্ষ্যাপামিটা পছন্দ নয় তার। অন্যকোনো ছেলের সাথে মেলামেশাটা শাহরুখ কেমন যেনো ঈর্ষা নিয়ে দেখতে থাকলো, এইসব চোখ এড়াতো না গৌরির!

অন্যদিকে শাহরুখতো সেই প্রথম দর্শন থেকেই মুখিয়ে আছে গৌরির প্রতি। কিন্তু একদিন শাহরুখের এসব কাণ্ডকারখানা বুঝতে পেরে হঠাৎ করে উধাও হল গৌরি। তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। এইদিকে শাহরুখের মাথা গরম। সে কিছু না বুঝে সবকিছু গৌরির মাকে খুলে বললো। এবং মা বললো যে গৌরি দিল্লী ছেড়ে মুম্বাই গেছে, আর তাকে খুঁজে বের করতে শাহরুখকে ১০ হাজার রুপিও দিলেন গৌরির মা। গৌরির এভাবে চলে যাওয়ায় শাহরুখ সত্যিকার অর্থেই বুঝলেন যে, গৌরি ছাড়া তার জীবন স্থবির হয়ে যাবে। যে কোনো মূল্যেই হোক তাকে খুঁজে বের করতে হবে, কারণ তার একটা বিশাল জায়গা জুড়ে এখন গৌরির চলাফেরা! ঠিকই একসময় গৌরিকে খুঁজে পান শাহরুখ। মুম্বাইয়ের এক বীচের পাড়ে গৌরির সাথে দেখা হয় তার। ভিন্ন শহরে তারা পরস্পরকে দেখে জড়িয়ে ধরেন, আর তখন গৌরিও বুঝতে পারেন যে শাহরুখ ছাড়া তার জীবনেও ঘোর অমাবস্যা। কারণ এই ক’দিনে তার উপলব্ধি এমন সিগন্যালই তাকে জানিয়েছে। ফলত তারা সেই বীচের দ্বারে দাঁড়িয়েই প্রেমের ফয়সালায় চলে আসেন। এখন আর প্রেম নয়, একেবারে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তারা। আর এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই নেমে আসে ফ্যামিলি ও সামাজিক ড্রামা!

সিনেমায় অভিনয়ের স্বপ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এক বেকার যুবকের সাথে নিজের মেয়েকে কে বিয়ে দেবে? পৃথিবীতে কি একটাও উদাহারণ আছে এমন? ফলত দেখা যায় শাহরুখকেও পারিবারিক এমন কঠিন সিদ্ধান্তের শিকার হতে হয়। তারউপর আবার সে অন্য ধর্মের! শেষ পর্যন্ত অভিনেতা হওয়ার বাসনা নয়, কিংবা বেকারত্বও বাধা হতে পারে না, যতোটা বিষফোঁড়া হিসেবে ‘ধর্ম’ বিষয়টি চলে আসে। কারণ শাহরুখ মুসলিম হলেও গৌরি যে একেবারে ব্রাহ্মণ ঘরের সন্তান! তার বাবা একদম ভেজিটেরিয়ান। ঘরই তাদের মন্দির! আর এমন ব্রাহ্মণ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ হয়ে তিনি কখনোই একজন মুসলিম ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে দেবেন না এটাই স্বাভাবিক! ফলত পারিবারিক বাধায় পড়ে মুষরে পড়েন শাহরুখ ও গৌরি। এরপর প্রায় পাঁচ বছর তাদের মধ্যে প্রত্যক্ষ কোনো যোগাযোগ ছিল না। গোপনে প্রেম করতেন তারা। এরইমধ্যে অভিনয়ের নেশায় দিল্লী ছেড়ে মুম্বাই পাড়ি জমান শাহরুখ। গৌরিকে বলে যান, যেভাবেই হোক পরিবারকে রাজি করাতে। গৌরিও নিভৃতে বাড়ি বসে সে কাজটিই করে যান। অথচ তারা ইচ্ছে করলেই পালিয়ে বিয়ে করে ফেলতে পারতো! কিন্তু পরিবারের প্রতি পরম শ্রদ্ধা থাকায় শাহরুখ কিংবা গৌরি তারা কেউই এমন ধৃষ্ঠতা দেখায়নি।
অবশেষে ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর পারিবারিক সম্মতিতেই শাহরুখ-গৌরির বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিয়ের পঁচিশ বছরে তাদের ঘরে আরিয়ান, সোহান আর আব্রাম নামের তিন পুত্র-কন্যা রয়েছে। আর তাদের ঘর যেন হিন্দু-মুসলিম ধর্মের সম্প্রীতির আবেশে পরিপূর্ণ এক ভিন্ন ধর্মালয়।
. . . . . . . . .