আর কোনো দিন মা হতে পারবেন না তুলসী!

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ নভেম্বর ২০১৫, ১০:৪২ পূর্বাহ্ণলক্ষীপূজায় আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে ফেনির হিন্দু অধ্যুষিত জেলেপাড়ার হামলার ঘটনায় আহত তুলসী রানী দাস আর কোনো দিন মা হতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে এমনটি জানিয়েছেন তুলসির স্বামী রবীন্দ্র দাস।
সেদিন হামলাকারীরা গর্ভবতী তুলসসীর পেঠে লাথি মারলে মারা যায় তাঁর গর্ভের সন্তান। তুলসীও গুরুতর আহত হন।
গত বুধবার লক্ষ্মীপূজার রাতে আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর অভিযোগে মাথিয়ারা জেলেপাড়ায় সরকারদলীয় ক্যাডাররা এ হামলা চালায়। হামলায় রবীন্দ্র, তার স্ত্রী তুলসী রানীসহ কয়েকজন আহত হন। ক্যাডারদের লাথিতে সাত মাসের গর্ভবতী তুলসী রানীর পেটের সন্তানটি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায়। আর পরবর্তীতে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তিনি আর কোনওদিন মা হতে পারবেন না।
এই হামলার প্রত্যক্ষদর্শী জহর লাল দাস বলেন, ‘ওরা (হামলাকারীরা) সরকারি দল করে, তাই ওদের অনেক ক্ষমতা। সেই ক্ষমতার দাপটে ওরা এসে জেলেপাড়াটা তছনছ করে দিল। সম্রাট আর ইকবালের সঙ্গে ২০/২৫ জন ছিল। তারা অস্ত্র আর লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে জেলে পাড়ার সব পুরুষকে মারধর করলো, ঘরবাড়ি-দোকানপাট ভাঙচুর করলো, লুট করে নিয়ে গেলো।’
এলাকাবাসী জানান, বুধবার ( ২৮ অক্টোবর) রাতে ছিল তাদের লক্ষ্মীপূজা। সে উৎসবে পটকা ফোটানোর অপরাধে তাদের ওপর নেমে আসে সরকারদলীয় ক্যাডারদের ভয়াবহ নির্যাতন। এদের নেতা ছিল ইকবাল ও সম্রাট। তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরেও জেলেদের ওপর নেমে আসে বর্বর নির্যাতন। প্রথম দফায় চলে গেলেও পরে এসে জেলেপাড়ায় নির্মম নির্যাতন চালায় তারা। সেই হামলা ও নির্যাতনে রাতের অন্ধকারে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন জেলেপাড়ার পুরুষরা। অনেকে সপরিবারে নৌকায় চেপে রাত কাটান নদীতে।
সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ইকবাল ও সম্রাটের লোকদের হাতে নির্যাতনের শিকার হন তুলসী রানীর স্বামী রবীন্দ্র।
রবীন্দ্র বলেন, ‘স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ায় ঘর ছাড়তে চাননি তিনি। কিন্তু সন্ত্রাসীরা এসে তাকে নির্মমভাবে পেটাতে থাকে। তাকে মারধর না করার জন্য অনুনয় করেছিলেন তার গর্ভবতী স্ত্রী তুলসী রানী। কিন্তু, এতে মন গলেনি ওদের। উল্টো, তুলসীর পেটে লাথি মেরে বসে এক পাষণ্ড।’
তিনি বলেন সাত মাসের পোয়াতির এখন যমে মানুষে টানাটানি। পেটের সন্তান তো গেছেই, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আর কোনওদিন মা হতে পারবে না তুলসী।
দেয়ালে পিঠ ঠেকায় এ ঘটনায় মামলা করেতে বাধ্য হয়েছেন জহুর লাল দাস। অথচ এত বড় ঘটনার পাঁচ দিন পেরুলেও এখনও শাসকদলীয় ক্যাডারদের একজনও ধরা পড়েনি। পুলিশ আশ্বাস দিলেও তাই ভীষণ আতঙ্কে আছেন
মাথিয়ারার জেলেপাড়ার নির্যাতিত সংখ্যালঘু পরিবার সদস্যরা। ঘটনার পাঁচ দিন পার হলেও তারা কেউই জাল নিয়ে বের হননি কাজের সন্ধানে ।
. . . . . . . . .