স্বপ্নের দেশে আমেরিকায় পতিতা হচ্ছে বাংলাদেশী তরুণীরা

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ নভেম্বর ২০১৫, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণস্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এসে অনেক প্রবাসীর সংসার তছনছ হয়ে যাচ্ছে। অনেকের স্ত্রী/স্বামীরা আদালতে দৌঁড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। এর ফলে আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী সন্তানেরা এক ধরনের অসহায় অনিরাপদ জীবন-যাপনে বাধ্য হচ্ছে। কম্যুনিটির বিশিষ্টজনেরা এ নিয়ে গভীর শংকা প্রকাশ করছেন। এনআরবি’র বরাতে দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিকে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আমেরিকার মুক্ত হাওয়ায় অনেক বাংলাদেশি নিজের পারিবারিক-সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা ভুলে যাচ্ছেন। অনেকের ধারণা, এটিই উপযুক্ত স্থান নিজেকে উপভোগের। কেউ কেউ মনে করছেন শরীরকে পুঁজি করে অর্থ উপার্জন যতটা সহজ, অন্য কোন কাজে এটি কখনোই সম্ভব নয়। আবার কেউ কেউ পরকিয়ায় লিপ্ত হয়ে আর ঘরে ফিরতে পারেননি, শেষ অবধি নাম উঠেছে ভাসমান যৌনকর্মীর খাতায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্পন্সর করেন এমন কতক প্রবাসীও এহেন অপকর্মে মদদ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিউইয়র্কের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা, মসজিদ-মন্দির-গির্জা, এটর্নী, সমাজ-কর্মী, চিকিৎসকদের সাথে আলাপ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশের ব্যাপারে উদ্বেগজনক এসব তথ্য জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ মাসে নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন এলাকার ২৪ দম্পতি তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। ১৫ দম্পতির যে কোন একজনকে গ্রেফতার বরণ করতে হয়েছে। ২১ জনের শিশু সন্তানকে সিটির আশ্রয়ে কাটাতে হয়েছে বেশ কদিন।। এখনও ৭ নারী দিনাতিপাত করছেন সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে। আরো জানা গেছে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা অন্য কোনভাবে পর পুরুষের টোপে পা দিয়ে স্বামী-সংসার ত্যাগকারিদের অন্তত ৯ জন এখন ভ্রাম্যমান যৌনকর্মীর তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
সর্বশেষ ব্রুকলীনে তালাক নেয়া এক স্বামী পুলিশে অভিযোগ করেছেন যে, তার সাবেক স্ত্রীর খদ্দেররা তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। বাংলাদেশে তার আত্মীয়দেরকেও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। তালাকপ্রাপ্ত ওই নারী দেহ ব্যবসা করছেন সেটি ফাঁস করা হয়েছে কেন-এ অপরাধে আরো কয়েকজনকে হুমকি প্রদানের অভিযোগ এসেছে। ব্রুকলীন, কুইন্স এবং ম্যানহাটানের হোটেল-মোটেল ছাড়াও অনেকে যাচ্ছে আটলান্টিক সিটির ক্যাসিনো পাড়ায়। খদ্দের নিয়ে রাত কাটাচ্ছে অনেক গৃহত্যাগী বাঙালি নারী।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, স্বামী ত্যাগ করে নিজেকে উচ্ছৃঙ্খল জীবনের জোয়ারে ভাসিয়ে দেয়া এসব নারীর প্রায় সকলেই অর্ধ-শিক্ষিত এবং একেবারেই গ্রাম থেকে এসেছে নিউইয়র্কে। এদের অনেকেই রেস্টুরেন্ট অথবা খুচরা দোকানে কাজ করতেন।
শুধু নারীরাই বাজে সংস্পর্শে এসে উচ্ছন্নে যাচ্ছেন- এমন নয়। নিউইয়র্ক সিটির অনেক পুরুষ স্ত্রীর অগোচরে সঙ্গ দিচ্ছেন অন্য নারী অথবা ভ্রাম্যমান যৌনকর্মীকে। কেউ কেউ হোটেল-মোটেলেও সময় কাটাচ্ছেন অনৈতিক কাজে। কঠোর শ্রমে অর্জিত অর্থ নিজের পরিবারের জন্য ব্যয় না করে উড়িয়ে দিচ্ছেন বারবনিতার পেছনে। এ কারণেও অনেক নারী স্বামীর সংসার ছাড়ছেন। আবার কয়েকজন চলে গেছেন বাংলাদেশে। স্বামীর অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করে কয়েকজন স্ত্রী অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়ে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হয়েছেন। ব্রুকলীন, কুইন্স, ব্রঙ্কস এবং ম্যানহাটানের এমন ঘটনা নিয়ে ফিসফাস রয়েছে।
সংসার ভেঙ্গে যাবার জন্যে স্বামী/স্ত্রীর চারিত্রিক অধ:পতনই একমাত্র দায়ী নয় বলে আইনজীবী এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান। স্বল্প আয়ের লোকজনের ট্যাক্সের রিটার্ন চেক, কর্মস্থলের বেতনের অর্থ, দেশে মা-বাবা-ভাই-বোনের জন্যে অর্থ প্রেরণের ঘটনা নিয়েও দাম্পত্য কলহ হচ্ছে এবং তালাকের মত ভয়ঙ্কর পথে পা বাড়িয়েছেন অনেকে।
গত বছর ঈদের আগে ব্রুকলীনের এক প্রবাসী তার মা-বাবাকে কিছু টাকা পাঠিয়েছিলেন। স্ত্রী তা জানতে পেরে ওই স্বামীকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেন। এ নিয়ে একটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে শালিস বৈঠক করতে হয়েছে। কুইন্সের একজন এটর্নী জানান, ট্যাক্স রিটার্নের পর ভর্তুকির চেক নিয়ে স্ত্রীর সন্দেহ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মারপিটের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ডাকাডাকির পর শিশু সন্তানদের সিটির হেফাজতে নেয়া হয়। এক পর্যায়ে স্বামী-স্ত্রী তালাকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ব্রঙ্কসের এক সন্তানের জননীকে বেশ কয়েক সপ্তাহ শেল্টারে কাটাতে হয়েছে। স্বামীর সন্দেহ এতই প্রবল ছিল যে, কোনভাবেই বিশ্বাস অর্জন করতে পারেননি ওই নারী। এজন্যে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাকে। তবে পরিচিতজনদের মধ্যস্থতায় সংসার টিকে গেছে বলে সর্বশেষ সংবাদে জানা গেছে।
সংসারে স্বাচ্ছন্দ আনতে ব্রুকলীনের এক গৃহিনী চাকরি নেন। সেখানে পরিচয় ঘটে নিকট প্রতিবেশী এক ভিনদেশি যুবকের সাথে। এক পর্যায়ে দুই সন্তানের এই জননী ওই যুবকের সঙ্গে নিয়মিত হোটেলে রাত কাটাতে শুরু করেন। এ পর্যায়ে তিনি স্বামী-সন্তান ত্যাগ করেন। তবে ওই যুবক তাকে বিয়ে করেনি। অবশেষে ওই নারীর জায়গা হয় ভ্রাম্যমান যৌনকর্মীদের খাতায়।
আরেক গৃহিনী স্বামীর সাথে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর সময়েই শর্ত দেন যে, ৮ বছর পর্যন্ত কোন সন্তান নেবেন না। স্বামী সে প্রস্তাবে সায় দেন। আমেরিকায় গিয়ে সেই নারী চাকরি নেন। মাঝেমধ্যে বন্ধু-কলিগদের নিয়ে বাসায় আসতেন। আড্ডা দিতেন। এই ঘটনা স্বামীর মধ্যে সন্দেহের জন্ম দেয়। একদিন স্বামী এ নিয়ে মুখ খুললে তাকে মারপিট করে এপার্টমেন্ট থেকে বের করে দেন তার স্ত্রী। ব্রুকলীনে বসবাসরত ওই পরিবারটিও শেষ পর্যন্ত ডিভোর্সের শিকার।
. . . . . . . . .