খাদ্য অধিদপ্তরের ১৩ জনকে বরখাস্তের নির্দেশ

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ অক্টোবর ২০১৫, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণভুয়া সনদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ
খাদ্য অধিদপ্তরে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়া ১৩ জন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে তাঁরা এ পর্যন্ত যে বেতন-ভাতা নিয়েছেন, তা আদায় করে তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
ওই নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় এই জালিয়াতির সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধেও ফৌজদারি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এসব নির্দেশ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত সপ্তাহে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা পোষ্য কোটায় নিয়োগের বিষয়টি যথাযথভাবে অনুসরণ না করায় এই ১৩ কর্মকর্তার চাকরি বৈধ গণ্য করার সুযোগ নেই।
এই ১৩ জন হলেন খাদ্য পরিদর্শক খন্দকার সেলিম হোসেন, ইসরাত জাহান, মাসুদুর রহমান ও মো. সাইদুজ্জামান; উপখাদ্য পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন সিরাজী; সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, কনিকা রানী মণ্ডল, শেখ এজাজ আহমেদ, শাম্মী আখতার, বেগম ফারজানা শাহ, জাফর ইকবাল, নন্দ গোপাল রায়, আ. রহিম হাওলাদার। তাঁরা বিভিন্ন জেলায় কর্মরত।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, এই মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২৯৯ জনকে চাকরি দেওয়ার প্রায় চার বছর পর গত বছর নভেম্বরে তাঁদের সনদের যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগের আগে তাঁদের সনদ যাচাই করা হয়নি। এ নিয়ে ‘খাদ্য অধিদপ্তর: মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২৯৯ জনকে নিয়োগ, চার বছর পর সনদ যাচাই!’ শিরোনামে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর খাদ্য মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরে চিঠি দিয়ে নিযুক্ত ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ-সংক্রান্ত সব কাগজপত্র চায়। এর মধ্যে ১২ জন কোনো সনদ দিতে পারেননি। অপর একজনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ থাকলেও তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করেননি। এ ছাড়া নানা কারণে চাকরিতে যোগ দেননি ৪০ জন।
সূত্রটি আরও বলেছে, মুক্তিযোদ্ধা সনদের যথার্থতা যাচাই শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে এই ১৩ জনের দেওয়া সনদ ভুয়া।
খাদ্য অধিদপ্তরে ২০১০ সালে খাদ্য পরিদর্শক, উপখাদ্য পরিদর্শক ও সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শকসহ ১০ ক্যাটাগরিতে জনবল নিয়োগ করা হয়। এসব পদে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পোষ্য কোটায় ৩০ শতাংশ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। গত বছরের ১২ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের সবার সনদ যাচাইয়ের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, ২৯৫ জনের কাগজপত্রের মধ্যে ৩২ জনের সনদই পায়নি মন্ত্রণালয়। ১৩ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদের বদলে পাঠানো হয়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জেলা প্রশাসকের সনদ, প্রশংসাপত্র, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও এম এ জি ওসমানীর দেওয়া চিঠি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অনেক সনদে থাকা স্বাক্ষর ও ধরন দেখে জাল মনে হয়েছে। অনেকগুলো ভুয়া পেয়েছি। সনদগুলো যাচাই না করে কেন এঁদের চাকরি হলো বা কীভাবে হলো, তা বুঝতে পারছি না।’
জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ইলাহী দাদ খান (সভাপতি, বিভাগীয় নির্বাচন/বাছাই কমিটি) বলেন, ‘ওই ১৩ কর্মকর্তাকে আমরা বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওঁদের মধ্যে দুই-একজন বলছেন, তাঁদের সনদ ঠিক ছিল। তাই একটু সময় নিচ্ছি।’
. . . . . . . . .