যে কারণে বিএনপি ছাড়লেন শমসের মবিন

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ অক্টোবর ২০১৫, ৭:০৬ অপরাহ্ণকূটনৈতিক মহলের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত বিএনপির সহ-সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী হঠাৎ করেই রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেও মূল ঘটনা আড়াল করা হচ্ছে বলেও গুঞ্জন উঠেছে।
দীর্ঘদিন শমসের মবিন চৌধুরীর আত্মগোপনে থেকে অনেকটা হঠাৎ করে পদত্যাগের ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ধরনের আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।
শমসের মবিন চৌধুরী জানিয়েছেন, কোনো রাজনৈতিক চাপ নয়, স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন। সুস্থ হলে ভবিষ্যতে দেশের কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি।
দল বদলে বিশ্বাস করেন না জানিয়ে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।
তার এ পদত্যাগের বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, ‘বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য শমসের মবিন চৌধুরী দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।’
দলের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাস থেকেই ঘটনার মূল সূত্রপাত। কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি লাভের পর থেকেই সরকারের সঙ্গে তার এক ধরনের ‘আঁতাত’ হয়েছে বলে চাউর হয় বিভিন্ন মহলে। বিষয়টি বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলে খোলাসা হলে দলের মধ্যে তিনি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বারবার দেখা করার চেষ্টা করে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন দেখা না হওয়া প্রসঙ্গে শমসের মবিন চৌধুরী বলেছেন, ‘অসুস্থ থাকায় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে পারেন নি।’
অপর একটি সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া বৈঠক না করায় বিএনপির একটি পক্ষ এর দায়ভার শমসের মবিন চৌধুরীর ওপর দিয়েছে।
গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলন চলাকালে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে শমসের মবিন চৌধুরীর একটি অডিও ক্লিপ গণমাধ্যমে প্রচার হয়। ওই ক্লিপে তারেক রহমান শমসের মবিনকে ভর্ৎসনা করেন।
অন্য একটি সূত্রমতে, দলে শমসের মবিন চৌধুরীর মূল্যায়ন না হওয়ায় রাগে ক্ষোভে তিনি পদত্যাগ করেছেন। তবে এ ব্যাপারে শমসের মবিন চৌধুরীর বক্তব্য হচ্ছে- দলে তিনি সব সময় সঠিকভাবে মূল্যায়িত হয়েছেন। যখন যে কাজ করতে চেয়েছেন তখন সে সুযোগ তিনি পেয়েছেন।
অবসরের ঘোষণা দিয়ে শমসের মবিন চৌধুরী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছেন ‘শহীদ জিয়ার বিএনপি তার আদর্শের জায়গায় রয়েছে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।’
শমসের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মোবাইল ফোন বন্ধ করে রেখেছেন বিএনিপর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তার পদত্যাগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু।
আরেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, ‘এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি দলের অতবড় নেতা নন। রাজনীতিতে সব সময়তো সুবিধা পাওয়া যায় না।’
দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম, জাতীয় স্থায়ী কমিটর সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘ডিটেইল আমি জানি না। খবরটা আমি শুনলাম। যেহেতু আমি জানি না সেহেতু আমার কোনো মন্তব্যও নাই। শুনেছি স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন। স্বাস্থ্যের চেয়ে তো বড় কিছু নেই। প্রথম হলো জীবন পরে হলো রাজনীতি।’
শমসের মবিন চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি সিলেট জেলায়। তার বাবার নাম আব্দুল মবিন চৌধুরী এবং মায়ের নাম তাহমেদুন নাহার। তার স্ত্রীর নাম শাহেদা ইয়াসিমিন। তাদের দুই ছেলে।
১৯৭১ সালে শমসের মবিন চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রতিরোধ যুদ্ধকালে চট্টগ্রামের কালুরঘাটের যুদ্ধে তিনি আহত হন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তিনি বন্দী হন। ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী আত্মসমর্পণের পর তিনি মুক্তি লাভ করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরবিক্রম খেতাব প্রদান করে। শমসের মবিন চৌধুরী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেজর পদে কর্মরত থাকাকালে তার চাকরি পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। পর্যায়ক্রমে পররাষ্ট্র সচিব পদে উন্নীত হন এবং পরে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসর নেন। ২০০৯ সালের ৮ সালের বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিলে ভাইস চেয়ারম্যান পদ পান শমসের মবিন চৌধুরী। . . . . . . . . .