অপহরণ : বৈঠকে বিচারকরা বললেন ‘আল্লার হাওলা’

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ অক্টোবর ২০১৫, ৯:২৪ পূর্বাহ্ণহবিগঞ্জ প্রতিনিধি ::
হবিগঞ্জ শহরে সুমন আহমেদ নামে এক যুবক অপহরণের ঘটনায় পুলিশ কর্তৃক আটককৃত অপহরণকারী পৌর যুবলীগ নেতা আলাই চৌধুরীকে সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তির আশ্বাস দেয়া হয়। পরে পুলিশের কাছ থেকে মুক্ত করার দু’মাসেও কোন সমাধান করতে পারেননি সালিশ বৈঠকে বিচারকরা। ৫ দফা দিন-তারিখ করার পর সোমবার সন্ধ্যায় সালিশ বিচারকরা কোন সমাধান না দিয়ে উভয়পক্ষকে বলে দিয়েছেন ‘আল্লার হাওলা’। এর ফলে সুমন আহমেদের পরিবার আবারও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সালিশ বিচারের কথা বলে তার মামলার কোন গতি হয়নি।
অভিযোগে জানা যায়, গত ২২শে আগস্ট দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের শ্যামলী এলাকায় বাসার সামনে থেকে সামছু মিয়ার ছেলে সুমন আহমেদকে মোটরসাইকেলে করে অপহরণ করে উমেদনগর এলাকার কুতুব আলীর ছেলে আলাই চৌধুরীর নেতৃত্বে ৮-১০ জন যুবক। পরে সুমন আহমেদকে উমেদনগর এলাকায় নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আটকে রাখেন পৌর যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক আলাই চৌধুরী। তিনি তার পাওনা টাকা না পেলে ছাড়বেন না বলে সুমনের পরিবারকে জানান। এদিকে সদর মডেল থানায় সুমনকে অপহরণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ করেন সুমনের পরিবার। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন বিকালে আলাই মিয়ার আস্তানা থেকে সুমনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
সুমনের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সুমন হিরোইনসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত হওয়ায় তার সঙ্গে কোন ধরনের লেনদেন না করতে স্থানীয় পত্রিকায় তার স্ত্রী শেফালী আক্তারসহ পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়। সমপ্রতি সুমনকে মৌলভীবাজারে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা করানো হয়। সুমন যখন মাদকাসক্ত ছিল তখন হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগর এলাকার যুবলীগ নেতা ও সুদের ব্যবসায়ী আলাই চৌধুরীর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নেয়। পরে এর সুদ বাবদ আলাই চৌধুরী শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় সুমনের ৩লা বাসা, গোপায়া গ্রামের একটি বসতভিটা এবং অপর একটি প্লট রেজিস্ট্রি করে নেয়। এগুলোর মূল্য ১ কোটি টাকার বেশি। ২-৩ মাস আগে আরও টাকা দাবি করলে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে সুমনের পরিবার শহরের একটি ভিটা বিক্রি করে আরও ৫৪ লাখ টাকা সুমন আলাই চৌধুরীকে দেয়। এ টাকা পরিশোধের পরও শনিবার আলাই মিয়া তার লোকজন নিয়ে সুমনকে মোটরসাইকেলে করে উমেদনগরে তার আস্তানায় নিয়ে যায়। সেখানে সুমনকে মারধর করে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে সাদা কাগজে দস্তখত নেয় বলেও সুমনের পরিবার অভিযোগ করে।
ওই দিন রাতে সুমনের স্ত্রী শেফালী আক্তার থানায় একটি অভিযোগ দিলেও উমেদনগরের মুরব্বিরা সালিশের আশ্বাস দিয়ে পুলিশের কাছ থেকে আলাই চৌধুরীকে মুক্ত করে আনেন। মুক্ত হওয়ার পর আলাই টেলিফোনে সুমনকে একাধিকবার হুমকি দেয়। মুরব্বিরা বিষয়টি সালিশ করতে বার বার তারিখ দিয়েও বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারেননি।
সোমবার বিকালে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদুল হকের চেম্বারে সালিশ বেঠক বসে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান আওয়াল, পৌর কাউন্সিলার আবুল হাশিম, সোনা মিয়া, জিতু মিয়া, জালাল মিয়া, মালেক, সামছু মিয়া, বাচ্চু মিয়া, কুতুব উদ্দিন, সোহেল, বাবুল মিয়া, মফিজ, আব্দুর হান্নান, আম্বর আলী প্রমুখ। সন্ধ্যায় ৬টায় সৈয়দ আহমদুল হক কোন সমাধান না দিতে পেরে উভয় পক্ষকে ‘আল্লার হাওলা বলে’ বিচার শেষ করেন।
সৈয়দ আহমদুল হক জানান, এক পক্ষ মানলে অপর পক্ষ মানে না। ফলে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। ফলে আইনগতভাবেই বিষয়টির সমাধান করতে হবে।
সালিশ বৈঠকে উপস্থিত সুমনের মা জানান, আমার অসুস্থ ছেলে সুমনকে আলাই অপহরণ করে এবং তাকে নিঃস্ব করেছে। সুমনকে নেশাগ্রস্ত করে জোরপূর্বক অফিসে নিয়ে তার সহায় সম্বল রেজিস্ট্রি করেছে আলাই মিয়া। অপহরণের পর আমরা বিচারের জন্য থানায় গেলেও মুরব্বিরা সালিশের আশ্বাস দিয়েছিলেন। বিচার না পেয়ে তিনি হতাশা ব্যক্ত করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা কামনা করেন।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই সানাউল্লাহ জানান, বিষয়টি সামাজিকভাবে শেষ করার কথা বলে আলাইকে নিয়ে যায়। এর পর কোন পক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
. . . . . . . . .