যেভাবে সিলেট এসেছিলেন জামালপুরের সেই ফজলু

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ অক্টোবর ২০১৫, ৯:০৭ পূর্বাহ্ণময়মনসিংহের জামালপুর জেলার সদরের নারায়ণপুর এলাকার সাউনিয়া বাঁশছড়া গ্রামে ফজলু মিয়ার বাড়ি। ১৯৭৮ সালের দিকে তার বয়স যখন ১০ থেকে ১২ বছর, তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানে ফজলুর সঙ্গে দেখা হয় সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ধরাধরপুর গ্রামের সৈয়দ গোলাম মাওলার। তিনিই ফজলুকে সিলেট নিয়ে আসেন।
ফজলু মিয়ার স্বজনরা জানান, ১৯৭৮ সালের দিকে ফজলু বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন। তারপর দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। ২০-২১ বছর তার বড় ভাই (ফজলুর বড় মামা) আবদুস সাত্তার ফজলুর খবর নিতে সিলেট আসেন। তিনি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুর গ্রামের গোলাম মওলার বাড়ি যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন গোলাম মওলা ও তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ফজলু উন্মাদ হয়ে বাড়ি থেকে চলে গেছেন। ফজলুর স্ত্রীও সেখানে নেই। গোলাম মওলার বাড়ির কেউ ফজলু মিয়ার কোনো খবর জানেন না। এরপর থেকে তাঁদের ধারণা ছিল, ফজলু মিয়া হয়তো আর বেঁচে নেই।
ফজলু মিয়া একসময় গলায় ডালা বেঁধে সিলেট নগরে পান-সিগারেট বিক্রি শুরু করেন। সিলেট শহরের বন্দরবাজার আদালতপাড়ায় তিনি ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রি করতেন। ১৯৯৩ সালের ১১ জুলাই তিনি আদালতপাড়ায় পান-সিগারেট বিক্রি করছিলেন। জাকির হোসেন নামের এক ট্রাফিক সার্জেন্ট সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করার জন্য তাকে গ্রেফতার করেন।
পরে ৫৪ ধারায় কোতোয়ালি থানায় ফজলু মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সার্জেন্ট জাকির। এরপর পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে ফজলু মিয়ার বিরুদ্ধে পাগল আইনের ১৩ ধারায় অভিযোগ আনে। তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কারাগারে। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি। প্রায় ২২ বছর পর গত ১৪ অক্টোবর তিনি মহানগর হাকিম আদালত থেকে জামিন পান। এরপর দিন ১৫ অক্টোবর কারাগার থেকে মুক্তি পান ফজলু।
ফজলু মিয়া জন্মভূমি জামালপুর যাওয়ার পূর্বে সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট তার পালক পিতা ধরাধরপুর গ্রামের সৈয়দ গোলাম মাওলার কবর জিয়ারত করেন। ফজলু মামুকে বিদায় দিতে উপস্থিত ছিলেন তেতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান আলী, সাবেক ইউপি সদস্য ও দক্ষিণ সুরমা আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক কামাল উদ্দিন রাসেল, আব্দুল মতিন, ইলাছ মিয়া।
এদিকে সিলেট ছাড়ার প্রাক্কালে, ফজলু মিয়ার পরিবার সিলেটের সকল গণমাধ্যম ব্যক্তিদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।
তারা বলেন, সাবেক ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন রাসেলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কারামুক্ত হয়েছেন ফজলু, আর সিলেটের গণমাধ্যমকর্মীদের আন্তরিকতায় আমরা ফিরে পেয়েছি আমাদের হারানো ফজলুকে। ফজলুর স্বজনরা এসময় আবেগাপ্লুত হয়ে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
. . . . . . . . .