বিদেশী খুন: খোঁজ মিলেছে দুই ‘বড় ভাইয়ের’, ভারত পালিয়ে গেছেন সোহেল!

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ অক্টোবর ২০১৫, ১০:০১ অপরাহ্ণগুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো শুরু থেকেই, তবে তাবেলা সিজার হত্যার দায়ে আটককৃত চারজনের দেয়া তথ্যে পর আরো প্রতিষ্ঠিত হয়- কথিত ‘বড় ভাইদের’ নির্দেশই খুন করা হয়েছে দুই বিদেশী নাগরিককে। স্বভাবতই প্রশ্ন- এই দুই বড় ভাই কারা? কাদের নির্দেশে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার ও জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে হত্যা।
বিভিন্ন সূত্রের দাবি ইতোমধ্যে এই দুই নির্দেশদাতাকে খোঁজে পেয়েছে পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত একজনের খোঁজ মিলেছে। আরেক ভাইকে সনাক্তের চেষ্টা চলছে। খোঁজ মিললেই তাদের গ্রেফতার করা হবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশির হত্যায় কলকাঠি নেড়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। আর রাজধানীতে তাবেলা সিজার হত্যার মিশন পরিচালনা করেছেন বাড্ডার আলোচিত বিএনপি নেতা সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আবদুল কাইয়ুম। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে কথিত ‘বড় ভাই’ হিসেবে এ দু’জনের নাম প্রকা করেছে একাধিক গণমাধ্যম।
আজ (মঙ্গলবার) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও বলেছেন, বিদেশি খুনের নির্দেশদাতা ’বড় ভাই’রা রাজনীতিবিদ। দু’একদিনের মধ্যে তাদের নাম জানানো হবে।
এদিকে, স্বেচ্ছাসবক দল সভাপতি হাবিব-উন-নবী সোহেলের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে অভিযোগ করে ‘ষড়যন্ত্র’ বন্ধের দাবিতে রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল। স্বেচ্ছাসেবক দলের এমন মিছিলের পর হাবিব-ইন-নবী সোহেলকে ‘বড় ভাই’ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহের বিষয়টি আরো জোরালো হয়।
রোববার সিলেটে অনুষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবকল দলের মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, ‘বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের জনপ্রিয় নেতাদেরকে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জঙ্গি নামক কাল্পনিক কাহিনি সৃষ্টি করে হয়রানি করা করা হচ্ছে।’
তাবেলা হত্যার ঘটনায় চারজনের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে দায় স্বীকার করেছে জানিয়ে সোমবার পুলিশ জানিয়েছে, এ হত্যায় কলকাঠি নেড়েছেন একজন ‘বড় ভাই’। তার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।
তবে পত্রিকাগুলো বলছে, এরই মধ্যে দুই ‘বড় ভাই’য়ের পরিচয় জেনে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কুনিও হোশির হত্যায় হাবিব উন নবী খানের সংশ্লিষ্টতার যুক্তিতে বলা হয়, ঘটনার পরপরই তিনি আত্মগোপন করে ভারতে চলে গেছেন। এখন সেখানেও নিজেকে নিরাপদ মনে না করায় লন্ডন পাড়ি জমানোর চেষ্টায় রয়েছেন। এরই অংশ হিসাবে, প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে ফেলেছেন তিনি। দুয়েকদিনের মধ্যেই রওনাও হয়ে যাবেন।
সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে দাবি করা হয়, হাবিব উন নবী খান সোহেল পরিস্থিতি জানতে ভারত থেকে মোবাইল ফোনে ঢাকা ও রংপুরে যোগাযোগ করলে পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত হয়। তবে তার দেশ ত্যাগের বিষয়টি অজানা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, তিনি কোনো আকাশ বা স্থল বন্দর ব্যবহার করেননি। এর অর্থ, তিনি চোরাই পথে সীমান্ত অতিক্রম করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, বুড়িমারি সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে ঢুকেছেন।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে ভারতে নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারছেন না সোহেল। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। আর এ কারণে তিনি লন্ডন পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন।
এদিকে, পুলিশের খাতায় অনেক দিন থেকেই মোস্টওয়ান্টেড বাড্ডার বিএনপি নেতা আবদুল কাইয়ুম। খবরে জানানো হয়, তাবেলা সিজার হত্যায় তার জড়িত থাকার বিষয়ে প্রমাণ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। মালয়েশিয়ায় বসেই তিনি এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন এবং মিশনে সফল হন। দুই ডজনের বেশি মামলার আসামি এই নেতা বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে রাতারাতি আলোচনায় উঠে আসেন।
খবরে আরও জানানো হয়, তাবেলা সিজার হত্যায় আবদুল কাইয়ুমের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আটক করা হয়েছে তার ছোটভাই আবদুল মতিনকে। তবে বিষয়টি এখনও সংশ্লিষ্ট দফতরের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে জানানো হয়, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে দেশকে চাপে ফেলতেই এই হত্যাকাণ্ড দু’টি ঘটানো হয়েছে। ঘটনার সময় ও মোটিভ বিশ্লেষণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে, দুই বিদেশি খুনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বিষয়ে হাবিবুন্নবী খান সোহেল ও বিএনপি নেতা আবদুল কাইয়ুমের মধ্যে বিশেষ যোগসূত্রতা ছিল। হত্যাকাণ্ডের জন্য কিলার ভাড়া ও অস্ত্র সংগ্রহসহ প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দেন বিএনপি নেতা কাইয়ুম। ঘটনার পর কাইয়ুম মালয়েশিয়ায় বসে ঢাকায় বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতার সঙ্গে এ নিয়ে কথাবার্তাও বলেন।
. . . . . . . . .