স্বামীকে খুন করতে ৫০ হাজার টাকায় কিলার ভাড়া করেন রাখা

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০১৫, ১০:৪২ পূর্বাহ্ণসম্পদের লোভে ব্যবসায়ী স্বামীকে খুন করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন স্ত্রী সৈয়দা রাখা বেগম। বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেন সাদিকুর রহমান সাদকে (৩০)। খুনের ঘটনায় তাকে সহায়তা ছিলো আপন ছেলেসহ আরো চারজন।
আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বামী হত্যার দায় স্বীকার করে চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য দিয়েছে রাখা বেগম।
তার স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন জানান, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের নাদামপুর গ্রামের সৈয়দ আব্দুল মতিনের মেয়ে সৈয়দা রাখা বেগম। ষোড়শী বয়সে ময়মনসিংহের এক লোকের হাত ধরে পালিয়ে গিয়ে সংসার গড়েন। ওই স্বামীর ঔরসজাত দুই সন্তানও (ছেলে-মেয়ে) রয়েছে। ওখান থেকে (ময়মনসিংহ) থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন নগরীর উপকন্ঠ কুমারগাঁওয়ে।
রোববার সকালে নগরীর আখালিয়া নোয়াপাড়া বন্ধন ডি/৭ নং ভাড়া বাসা থেকে রাখা বেগমকে আটক করে জালালাবাদ থানা পুলিশ। এসময় তার সঙ্গে আটক করা হয় খুনের ঘটনায় জড়িত তার ছেলেসহ অন্যদের।
আটককৃত অন্যরা হলো- সিলেট শহরতলীর কুমারগাঁও শেখপাড়ার বাসিন্দা মৃত আব্দুল হান্নানের ছেলে আলী হোসেন (২৫), নবীগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুরের বাসিন্দা খালিকুজ্জামান লায়েক (৩০), বিয়ানীবাজার কাটরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফখরুল ইসলামের ছেলে রেজওয়ান হোসেন (২৪), সিলেট সদর উপজেলার মোল্লাগাঁও ফতেপুরের বাসিন্দা রফিক মিয়ার ছেলে তাজ উদ্দিন (১৬) ও রাখা বেগমের পূর্বের স্বামীর ঔরসজাত সন্তান নাদিরুল জামান কমল (১২)।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন জানান, আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বামী হত্যার দায় স্বীকার করে চাঞ্চল্যকর জবানবন্দী দেয় রাখা বেগম।
বছর দেড়েক আগে জালালাবাদ থানাধীন মোগলগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁওয়ের বাসিন্দা সাদিকুর রহমান সাদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার। কুমারগাঁওয়ে বন্ধু টেলিকমের প্রোপাইটার সাদ। তাকে গোপনে বিয়ে করে নগরীর আখালিয়া নোয়াপাড়া বন্ধন ডি/৭ বাসায় বসবাস করতেন তারা। তাদের সঙ্গে ছেলে নাদিরুল জামান কমলও থাকতো বলে পুলিশকে জানান রাখা বেগম।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর সাদের ভাই শফিক আলী সৌদিআরব থেকে দেশে এসে সাদের বিয়ের বন্দোবস্তু করেন। এজন্য সাদও পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করতে রাখা বেগমের অনুমতি চান। কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ের পর তিনি অবহেলিত হয়ে পড়বেন এই ভেবে আর অনুমতি দিতে রাজি হননি।
তাছাড়া কুমারগাঁওয়ে তার স্বামীর ৫তলা একটি ভবন ও বেশ কয়েকটি গাড়ি রয়েছে। স্বামীকে মেরে ফেললে ছেলেকে নিয়ে এসবের মালিক তিনি হবেন। তাই খুন করার জন্য ৫০ হাজার টাকায় কিলার ভাড়া করেন। কিন্তু ভাড়াটে কিলাররা খুন করতে সময়ক্ষেপন করায় বোনের ছেলে খালিকুজ্জামান লায়েক, ধর্মীয় বোনের ছেলে রেজোয়ান, চালক আলী হোসেন, তাজ ও্ ছেলেসহ ১৯ অক্টোবর দিবাগত রাত ১টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় বালিশ চাপা দিয়ে স্বামী সাদকে হত্যা করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে রাখা আরও জানান, হত্যার পর সকালে হার্ট অ্যাটাকে তার স্বামী মারা গেছে বলে বাড়িতে খবর দেন। কিন্তু স্বজনরা দাবি করেন স্বাদকে হত্যা করা হয়েছে। যেকারণে মরদেহ ময়না তদন্তের পর দাফন করা হয়।
এ ঘটনার পর রেজওয়ানকে আটক করে পুলিশ। সে খুনের ঘটনার বর্ণনা দিলে সাদের স্ত্রী রাখাসহ অন্যদের আটক করা হয় বলে জানান ওসি আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই শফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
. . . . . . . . .