রাজনের বাবা এখন কোটিপতি : একাধিক বিয়ে করেছেন!

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ অক্টোবর ২০১৫, ১০:৫৫ অপরাহ্ণসিলেটে দুর্বৃত্তদের নির্মম নির্যাতনে নিহত শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান আলম এখন প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালিক। গত ৮ জুলাই রাজনের নির্মম মৃত্যুর পর দেশ-বিদেশের হৃদয়বান ব্যক্তিরা পরিবারটির প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। এদিকে, এ মাসেই রাজন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ।গত ৮ জুলাই ভোরে ‘চোর’ সন্দেহে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ১৩ বছরের শিশু রাজনকে। নির্যাতনকারীরাই শিশুটিকে পেটানোর ভিডিও ধারণ করে এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। ২৮ মিনিটের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমের সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
রাজন হত্যার পর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নানাভাবে তার পরিবারকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। সব মিলিয়ে অনুদানের পরিমাণ অর্ধকোটি টাকারও বেশি হবে বলে ধারণা এলাকাবাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৫০ হাজার টাকা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক লাখ টাকা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এক লাখ টাকা, নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা, যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলা অ্যাসোসিয়েশন ইউকে, রোটারি ক্লাব অব হিলটাউন, সিলেট চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি এবং স্বপ্নঘুঁড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও করা হয় সহযোগিতা। আরও অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নাম প্রকাশ না করার শর্তে সহযোগিতা করেছেন রাজনের বাবাকে।
যুক্তরাজ্যস্থ মদীনাতুল খায়েরি আল ইসলামীর চেয়ারম্যান মাওলানা ফয়েজ আহমদ ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজনের বাবাকে নতুন একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ক্যাপ (কমিউনিটি অ্যাগেইনস্ট প্রভার্টি) ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে রাজনের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে একটি সিএনজি অটোরিকশা। আমেরিকা প্রবাসী আরেক ব্যক্তি ঘটনার পর পরই রাজনের বাড়িতে নির্মাণ করে দিয়েছেন নতুন একটি টিউবওয়েল। আরও কয়েকজন আমেরিকা প্রবাসী রাজনের ভাই সাজনের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে নেওয়ার জন্য চার লাখ টাকার একটি শিক্ষাবন্ড করে দিয়েছেন। এছাড়া সিলেট জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও ৫ লাখ টাকার একটি এফডিআর গঠন করে দেওয়ার কথা রয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজনের ভাই সাজনের পড়ালেখার খরচ আজীবন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছিল।
শুক্রবার বিকালে সিলেটের সদর উপজেলার বাদেআলী গ্রামে রাজনের বাবা আজিজুরর রহমান আলমের মুখোমুখি হন বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিবেদক। কথা হয় রাজন হত্যাকাণ্ড, মামলার বর্তমান অবস্থা, মিডিয়ার ভূমিকা, মানুষের দান-অনুদান ইত্যাদি নিয়ে।রাজনের বাবা জানান, রাজন হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ পর্যন্ত অনেকেই তাকে সহযোগিতা করেছেন। তবে দানের পরিমাণ অর্ধকোটি টাকা হবে না বলে তার দাবি। তিনি বলেন, অনুদান পাওয়া বেশির ভাগ অর্থই খরচ হয়ে গেছে। মামলার খরচ, পারিবারিক খরচ ও মেহমানদারিতে এ অর্থ খরচ হয়েছে। তবে সাজনের নামে ব্যাংকে কিছু টাকা এফডিআর করা আছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
মিডিয়াকর্মীদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আলম জানান, মিডিয়ার সহযোগিতার কারণেই তার ছেলের দ্রুত বিচার সম্ভব হচ্ছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী জানিয়েছেন, রাজনের বাবার আরেকটি পরিবার রয়েছে। ওই পরিবার ওসমানীনগর উপজেলার কুরুয়ায় বসবাস করে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
একাধিক বিয়ে ও চরিত্র খারাপের বিষয় নিয়েও কথা হয় রাজনের বাবার সঙ্গে। একাধিক বিয়ে করেছেন কি না কিংবা অন্য কোনও অভ্যাস আছে কি না এসব প্রশ্নের সরাসরি অস্বীকার করে রাজনের বাবা বলেন, ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী একজন মুসলমান চারটি বিয়ে করতে পারে। এটা তো অন্যায় কিছু না। বিয়ে করেছি বলে কি আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাইতে পারব না। আলম দাবি করেন তার বিরুদ্ধে গিয়াস মেম্বার (প্রধান আসামি কামরুলের আত্মীয়) এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন।আলম আরও বলেন, গিয়াস মেম্বার এখনও তাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। রাজন হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর তিনি গিয়াস মেম্বারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান।আলম দাবি করেন, ছোটবেলা খাট থেকে পড়ে মাথায় আঘাত পায় রাজন। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছিলেন কোনও বিষয়ে অতিরিক্ত চাপ না দিতে। এজন্য রাজনকে বেশিদূর পড়ালেখা করানো যায়নি।
পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়ার পর টুকের বাজারসহ বিভিন্নস্থানে সবজি বিক্রি করত।পেশায় মাইক্রোবাস চালক আজিজুর রহমান জানান, ছেলের মৃত্যুর পর তিনি আর মাইক্রো চালান না। এখন বাড়ির পাশে রবিশস্য আবাদ করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করছেন।এখনও রাজনের কবর দেখতে লোকজনের আনাগোনা শুক্রবার রাজনের বাবার সঙ্গে কথা বলার সময় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সাফাছ গ্রামের মাহবুবুল হক ভূঁইয়া পরিবার-পরিজন নিয়ে আসেন রাজনের বাড়িতে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, সিলেট বেড়াতে এসেছিলেন। পত্র-পত্রিকায় রাজন হত্যার বিষয়টি তার বিবেককে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। এ কারণে তিনি রাজনের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।শুধু মাহবুবুল হক নয়, প্রতিদিন এভাবে আরও অনেক লোক রাজনের কবর দেখতে আসেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বাড়িতে এখনও পুলিশি নিরাপত্তা
পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে রাজনের পরিবারকে। জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেন জানান, প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত দুজন পুলিশ কনস্টেবল রাজনের বাড়ি পাহারা দেয়। আর দিনের বেলা দায়িত্ব পালন করে টহল পুলিশ। এ প্রসঙ্গে রাজনের বাবা বলেন, পুলিশ নিরাপত্তা দিলেও তারা এখনও শঙ্কিত। এ কারণে তার ৫ ভাইয়ের সবাই সারা রাত জেগে বাড়ি পাহারা দেন।
বিচার শেষ হচ্ছে এ মাসেই
রাজন হত্যা মামলার বিচার এ মাসেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনি জানান, রবিবার মামলার যুক্তিতর্ক ও আসামি পরীক্ষা করা হবে। আগামী ২৬ অথবা ২৭ অক্টোবর মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে বলে জানান তিনি। . . . . . . . . .