ওরা আমার ছেলেডারে মারলে কেন?

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ অক্টোবর ২০১৫, ৩:১৮ অপরাহ্ণ‘ওরা আমার ছেলেডারে মারলে কেন? ও তো কারো ক্ষতি করতো নাই।’
সন্তানহারা বাবার এমন প্রশ্নের উত্তর হয়তো কারো জানা নেই। আর এভাবেই একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বিলাপ করছেন এএসআই ইব্রাহীমের বাবা আব্দুল সত্তার মোল্লা।
রাজধানী ঢাকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই মো. ইব্রাহিম মোল্লার বাবা আব্দুল সত্তার মোল্লা (৮২) তার সন্তানকে হারিয়ে এখন পাগল প্রায়।
ঘরের এক কোণে নিশ্চুপ হয়ে বুকচাপা কষ্টে বসে আছেন আর চোখ থেকে ঝরছে অঝোর ধারায় পানি। কেউ তাকে সান্তনা দিতে গেলেই হাউমাউ করে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন।
রাজধানীর দারুস সালাম থানার কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. ইব্রাহিম মোল্লা সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহতের পর শুক্রবার বিকেলে তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে কচুয়া উপজেলার পালপাড়ায় গিয়ে এমন এক হৃদয় বিদারক অবস্থা দেখা যায়। গ্রাম জুড়ে শুধু শোকের ছায়া।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন নিহতের বৃদ্ধ বাবা আব্দুল সত্তার আলী (৮২) ও মা আছিয়া বেগম (৬৮)।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গ্রামের এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে ছেলে ইব্রাহিম নিহত হবার খবর পায় তার বৃদ্ধ বাবা আব্দুস সত্তার। প্রথমে তার কাছে এ খবর বিশ্বাস হয়নি। ঢাকায় ছোট মেয়ের কাছে মোবাইল করে নিশ্চিত হন তার আদরের ধন ইব্রাহিম সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে মারা গেছেন। এ খবর শুনেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
প্রতিবেশীরা ইব্রাহিমের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মা, বোনদের সান্তনা দেবার চেষ্টা করছেন। বৃদ্ধা বাবা আব্দুস সত্তার মোল্লা ছেলের ছবি নিয়ে ঘরের বারান্দায় বসে অঝোর ধারায় চোখে পানি ফেলছেন। এক সময়ের কঠোর পরিশ্রমী কৃষক আব্দুস সত্তারের চোখে মুখে শুধু হতাশার ছাপ।
ছয় ভাইবোনের মধ্যে বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান ইব্রাহিমের সংবাদ শুনে বাড়িতে ছুটে এসেছেন চার বোন, নিকট আত্মীয়সহ গ্রামবাসী। ইব্রাহীমের এমন অকাল মৃত্যুর খবর কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না কেউই।
মা আছিয়া বেগমের কান্নার শব্দে ভারি হয়ে উঠেছে পালপাড়া গ্রামের বাতাস। সন্তান আর “মা” বলে ডাকবে না, খবর শোনার পর থেকে কেউই তাকে পারছেন না সান্তনা দিতে। মা আর বোনদের আহাজারি দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না গ্রামের সাধারণ মানুষও।
শুক্রবার বিকেলে নিহতের গ্রামের বাড়ি জেলার কচুয়া উপজেলার রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়নের পালপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের নবীন-প্রবীণ শত শত মানুষের ভিড়। এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে তারা ছুটে এসেছেন ইব্রাহিমের বাড়িতে।
ইব্রাহিমের বড় ভগ্নিপতি শাজাহান হাওলাদার জানান, ঢাকার দারুস সালাম থানার পোস্টিং হওয়ার পর থানার কাছেই একটি বাড়িতে গত ক’বছর ধরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন তিনি। কনস্টেবল পদে প্রায় ১২-১৩ বছর আগে চাকরিতে যোগদানের পর বছর খানেক আগে তিনি পদন্নোতি পান।
নিহতের পাঁচ বোন জাহানারা, আনোয়ারা, মনোয়ারা, হোসনেয়ারা ও পেয়ারা বেগমদের সবারই বিয়ে হয়েছে। এদের মধ্যে সেজ বোন মনোয়ারার বেগমের স্বামী মারা গেছেন প্রায় ১১ বছর আগে। তখন থেকেই তার একমাত্র মেয়ে আদুরি আক্তারকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকছেন মনোয়ারা।
ইব্রাহিমের ছোট্ট ছোট্ট ছেলে-মেয়েদের এখন কী হবে, ওরা কীভাবে বাঁচবে, কীভাবে মানুষ হবে। এমন আহাজারি করে ইব্রাহিমের বোনরা বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। তাদের সান্তনা দেয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন প্রতিবেশীরা।
বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে বোনের সংসারের সব খরচ চালাতেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ইব্রাহিম।
মনোয়ারা জানান, পুলিশে চাকরির পাশাপাশি গ্রামের উন্নয়নে অসহায় মানুষের পাশে থেকে সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তার ছিল সহজ অংশগ্রহণ।
জনগণের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে কর্মরত অবস্থায় খুন হয়েছে ইব্রাহীম। খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি ইব্রাহিমের ৬ বছরের কন্যা ও ২০ মাসের ছেলে সন্তানকে লেখাপড়াসহ সার্বিক দায়িত্ব নিতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি’র কাছে দাবি জানান এলাকার জনগণ।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার গাবতলী সেতুর কাছে পর্বত সিনেমা হলের সামনে পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকিতে সন্ত্রাসীতের ছুরিকাঘাতে নিহত হন দারুস সালাম থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. ইব্রাহিম মোল্লা।
https://www.youtube.com/watch?v=vBnAFAcdjj8 . . . . . . . . .