অসুস্থ ছাত্রীকে হাসপাতালে যেতে না দিয়ে হোস্টেলে ‘নির্যাতন’ (ভিডিও সহ)

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ অক্টোবর ২০১৫, ৩:০০ অপরাহ্ণরাজশাহীতে ইসলামী ব্যাংক নার্সিং ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে অসুস্থ এক ছাত্রীকে হাসপাতালে যেতে না দিয়ে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী অসুস্থতার জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে যেতে চাইলে অধ্যক্ষ ডালিম বেগম অনুমতি না দিয়ে এক পর্যায়ে তাকে মারধর করেন বলে তার সহপাঠীরা অভিযোগ করেছেন।
তাদের অভিযোগ, দুপুরের ওই ঘটনার পর সন্ধ্যায় হোস্টেল থেকে ওই ছাত্রীকে আবার ডেকে নিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত উপাধ্যক্ষের কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। তার শরীরে আঘাতের একাধিক চিহ্নও রয়েছে। এ ঘটনার পর উপাধ্যক্ষ ‘কাউকে নির্যাতন বা মারধর করা হয়নি’ লেখা একটি কাগজে নির্যাতিতাসহ হোস্টেলের প্রথম বর্ষের ৪০ জন ছাত্রীর স্বাক্ষর নেন বলে তারা জানান।
ওই ছাত্রীকে নিজের কক্ষে আটকে রাখার কথা স্বীকার করলেও তাকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নার্সিং ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ আসমা খাতুন। শুক্রবার তিনি বলেন, “দুপুরের ঘটনার পর মেয়েটি যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটায় সেজন্য অধ্যক্ষের নির্দেশে তাকে আমার কক্ষে রাখা হয়েছিল। তবে তাকে নির্যাতন করা হয়নি।”
অধ্যক্ষের নির্দেশই অন্য ছাত্রীদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে যেতে না দেওয়ার কথা স্বীকার করে অধ্যক্ষ ডালিম বেগম বলেন, “ছুটি না দেওয়ার কারণে ওই ছাত্রী আমাকে ধাক্কা মেরে জোর করে হোস্টেল থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিল। এ সময় তাকে সামান্য চড়থাপ্পড় মারা হয়েছে।” অসুস্থতার বিষয়ে ওই ছাত্রী বলেন, “হোস্টেলের নিম্নমানের খাবার খেতে পারছিলাম না। কয়েকদিন ধরে ওই খাবার খেলেই বমি হচ্ছিল।
“তাই ডাক্তারের কাছে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উনি (অধ্যক্ষ) আমাকে যেতে দেননি।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোস্টেলের কয়েকজন ছাত্রী জানান, ওই ছাত্রী চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে বাইরে যেতে চাইলে অধ্যক্ষ তাকে হাসপাতালে যেতে না দিয়ে হোস্টেল পরিষ্কার করতে বলেন।
“এতে ওই ছাত্রী রাজি না হওয়ায় তাকে মারতে মারতে অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে তার রুম পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালিজ করা হয়,” বলেন তাদের একজন।
এ ঘটনার পর বিকালে অধ্যক্ষ তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় চলে যান। সন্ধ্যার পর ওই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় উপাধ্যক্ষের চেম্বারে। সেখানে তাকে রাত ১২টা পর্যন্ত আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে সহপাঠীদের অভিযোগ। এদিকে ওই ছাত্রীকে আটকে রাখার পর হোস্টেলের অন্য ছাত্রীরা বিষয়টি ফোনে তার বাবা মোনতাজ উদ্দিনকে জানায়।
নওগাঁর মান্দার বাসিন্দা মোনতাজ উদ্দিন বলেন, “ফোনে মেয়েকে নির্যাতনের চিৎকার ও অন্য ছাত্রীদের হৈ-চৈ শুনেছি। সঙ্গে সঙ্গে অধ্যক্ষকে ফোন করি। তিনি আমার সঙ্গে ভালভাবে কথা না বলেই ফোন কেটে দেন। “পরে নগরীর শাহ মুখদুম থানার ওসিকে ফোনে বিষয়টি জানালে সেখানে পুলিশ যায়, কিন্তু হোস্টেলে কিছু হয়নি দাবি করে তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।”
খবর পেয়ে ওই নার্সিং ইনস্টিটিউটে গেলেও লিখিত অভিযোগ না থাকায় পুলিশ হোস্টেলে ঢুকতে পারেনি বলে জানান শাহ মুখদুম থানার ওসি আব্দুর রউফ।
তিনি বলেন, “এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবাকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছিল। তবে থানায় অভিযোগ না দিয়ে শুক্রবার সকালে অধ্যক্ষের চেম্বারে বসে বিষয়টি মীমাংসা করে নেয় বলে শুনেছি।”
মহানগরীর নওদাপাড়া এলাকায় নার্সিং ইনস্টিটিউটের ওই হোস্টেলে ১৮০ জন ছাত্রী থাকেন। অধ্যক্ষ ডালিম বেগম বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের গালিগালাজ, মারধর ও বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনসহ তাদের দিয়ে হোস্টেলের সিঁড়ি, টয়লেট ও বারান্দা পরিষ্কার করান বলে ছাত্রীদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন ছাত্রী বলেন, কিছুদিন আগে হোস্টেলে শর্ট কামিজ পরায় এক ছাত্রীকে মারধর করে তার শরীর থেকে ওই পোশাক ছিঁড়ে ফেলেন অধ্যক্ষ। এছাড়া কোনো ছাত্রী বোরখা না পরে হোস্টেলের বাইরে গেলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করা হয়।
হোস্টেলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। কোনো ছাত্রী হোস্টেল থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলছে বলে জানতে পারলে তাকে গালাগলি করা হয়।
ছাত্রীর শরীর থেকে শর্ট কামিজ ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ স্বীকার করে অধ্যক্ষ বলেন, “ইসলামী ব্যাংক নার্সিং ইনস্টিটিউট একটি ইসলামী প্রতিষ্ঠান। এখানে ইসলামিক নিয়ম- কানুন চলে।
“এই কারণে বোরখা ছাড়া বাইরে যেতে এবং শর্ট কামিজ পরা নিষেধ করা হয়েছে। ওই ছাত্রী এ নিষেধ অমান্য করায় তার শর্ট কামিজ ছিঁড়ে ফেলা হয়। তবে তাকে মারধর করা হয়নি।” ছাত্রীদের দিয়ে হোস্টেল পরিষ্কার করানোর অভিযোগ স্বীকার করলেও একাডেমিক ভবন ক্লিনাররা পরিষ্কার করেন বলে দাবি করেন অধ্যক্ষ।
“ছাত্রীরা বেশি নোংরা করে। তাই প্রতিমাসে আমি নিজে ছাত্রীদের নিয়ে তাদের রুমসহ হোস্টেল পরিষ্কারে অংশ নিই,” বলেন তিনি।
. . . . . . . . .