সিলেটে বনের রাজা দেলওয়ার পলাতক

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ অক্টোবর ২০১৫, ১০:২২ অপরাহ্ণসিলেট নগরীর তোপখানা এলাকায় বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) দেলোয়ার হোসেনের কার্যালয়। বন বিভাগের ডিএফও হওয়ার সুবাধে অবৈধভাবে নিজ নামসহ স্ত্রী ও সন্তানদের নামে গড়ে তুলেছেন বিশাল সম্পদের পাহাড়।তিনি নিজেই জানেন না তার সম্পত্তি ও টাকার পরিমাণ। তাইতো তিনি দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে অনেক তথ্যই গোপন রেখেছেন।
এদিকে দেলোয়ার হোসেন দুদকের মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরেও অদৃশ্য ক্ষমতায় এখনও চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।এমনকি চাকরিতে থাকার পরেও ওই কর্মকর্তা গ্রেফতার আতংকসহ নানা কারণ দেখিয়ে প্রায় আড়াই মাস ধরে অফিস থেকে হাওয়া হয়ে গেছেন। সোমবার ও মঙ্গলবার বেলা ১১টায় তাঁর দপ্তরে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। মূল দরজাও বন্ধ পাওয়া ছিলো। ডিএফও কোথায় জানতে চাওয়ায় তিনি ‘বাইরে’ বলে জানান বন বিভাগে কমর্রত অন্য কর্মকর্তারা। ‘ফিরবেন কখন’এ প্রশ্নেরও কেউ কোনো উত্তর দেননি। ‘ঠিক নাই’ বলে এড়িয়ে যান দপ্তর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সূত্রে জানা যায়, ডিএফও প্রায় আড়াই মাস ধরে দপ্তরে বসছেন না। কারণ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলা এবং পরবর্তী সময়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হওয়ার পর থেকে গ্রেফতার আতংকে তিনি তার দপ্তরে বসছেন না। তবে সিলেট বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) অফিসে না আসলেও জরুরী কাজ ও তদবির বাণিজ্য তার বাসায় বসে সম্পাদন করছেন। এমনকি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারিদেরকেও তাদের দৈনন্দিন কাজের কাজের নমুনা বলে দিচ্ছেন ডিএফও দেলেয়ার হোসেন। এছাড়াও তিনি খোঁজ রাখছেন অফিসের কে কোন ফাইলে স্বাক্ষর করছেন আর কোথায় কে অভিযান চালাচ্ছে। অথচ এই সরকারি কর্মকর্তা প্রায় ২মাস থেকে অফিসে না আসলেও তিনি রীতিমত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও বেতন-ভাতা গ্রহণ করে যাচ্ছেন।
দুদকের মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরেও এখনও চাকরিতে বহাল তবিয়তে এই বনের ‘রাজার’ খুঁটির জোর কোথায় এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এদিকে দৈনিক উত্তরপূর্ব পত্রিকায় বনের রাজা দেলোয়ারের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। এজন্য মন্ত্রণালয়ের একটি টিমও কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তদন্ত টিম সিলেট বন বিভাগের ডিএফও দেলোয়ারের চাকরির সুবাধে অবৈধ সম্পদসহ নানা ধরনের উৎসের সন্ধান পেয়েছে। অভিযুক্ত হলেই দেলোয়ার হোসেনের চাকুরিচ্যুতসহ তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এমনকি তিনি জেলও খাটতে পারেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৩০ জুলাই থেকে সিলেট বন বিভাগের ডিএফও দেলোয়ার হোসেন দপ্তরে বসছেন না। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের মামলার অভিযোগপত্র ২৮ জুলাই সিলেটের আদালতে দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে ৬৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫৯ টাকার তথ্য গোপন এবং নিজেসহ পরিবারের সদস্যদের নামে ১৪ লাখ ২২ হাজার ৩৬২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদক সিলেটের উপপরিচালক মোজাহার আলী সরকার গত বছরের ৩০ জুন মামলাটি দায়ের করেন। প্রায় এক বছর তদন্ত করে ২৮ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা।
ডিএফওর অনুপস্থিতিতে কীভাবে দপ্তরের কাজ চলছে, জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, জরুরি কাজগুলো তাঁর সঙ্গে ফোনে আলাপ করে সারা হচ্ছে। আর বাকি কাজ তাঁর অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই করছেন। অফিসে যোগাযোগ করার জন্য তিনি আলাদা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। যে নাম্বার অন্য কারো জানা নেই। নাম্বারটি চাওয়া হলে তারা জানান, এই নাম্বার আমরা কয়েকজন শুধু জানি। স্যারের বিশেষ ‘নাম্বারটি’ দিলে আমাদের চাকরিও যেতে পারে। আমাদেরকে মাফ করুন ভাই।
অফিসে প্রায় আড়াইমাস থেকে অনুপস্থিত ও দুদকের দায়ের করার মামলার বিষয়টি সম্পর্কে সিলেট বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) দেলোয়ার হোসেনের ব্যবহৃত নাম্বারে মঙ্গলবার দুপুরে ও বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহকারী বনসংরক্ষক রাজেশ চাকমা ডিএফও দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলা আর পরবর্তীতে অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। তবে তিনি জানান ডিএফও প্রতিদিন রীতিমত অফিস করছেন।
. . . . . . . . .