রুশ-ইরানের পরিকল্পনা ও চীনের প্রস্তাবে আতঙ্কে পশ্চিমারা!

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ অক্টোবর ২০১৫, ১০:১২ অপরাহ্ণআন্তর্জাতিক ডেস্ক:: সিরিয়ায় পশ্চিমা মদদপুষ্ট তাকফিরি-ওয়াহাবি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অবস্থানে সম্প্রতি ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। ফলে আইএসআইএল বা দায়েশসহ সিরিয়ার আসাদ সরকার-বিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর শতশত জঙ্গি নিহত হয়েছে। এ অবস্থায় রাশিয়া এ অঞ্চল নো-ফ্লাই জোন বা উড্ডয়ন-নিষিদ্ধ অঞ্চল গড়ে তোলায় জঙ্গিদের অবস্থা আরও খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।
এদিকে রাশিয়া-সিরিয়ার বিশাল অঞ্চলসহ আশপাশে ভিন্ন দেশের ওপর নো-ফ্লাই জোন বা উড্ডয়ন-নিষিদ্ধ অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে।
‘দেবকা ফাইল’ নামের একটি ইসরাইলি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ব্যাখ্যামূলক সংবাদের ওয়েবসাইট এই তথ্য দিয়ে বলেছে, রাশিয়ার গড়ে-তোলা এইসব উড্ডয়ন-নিষিদ্ধ অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে (সিরিয়ার ও আংশিকভাবে ইসরাইলের দখলে-থাকা) গোলান পার্বত্য ভূমি, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও সাইপ্রাস।
এ ছাড়াও রাশিয়া সিরিয়ার লজাকিয়া বন্দরে ‘মস্কোকাভা’ নামের একটি ডেস্ট্রয়ারে ৬৪টি বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত ‘এস-থ্রি হান্ড্রেড’ নামের অত্যাধুনিক সিস্টেম মোতায়েন করেছে। ফলে সিরিয়ার আকাশে বিমান হামলা চালাতে হলে তুরস্ক, ব্রিটেন, ইসরাইল ও জর্দানকে রাশিয়ার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। তা না হলে তাদের জঙ্গি বিমানগুলো যে কোনো সময় ভূপাতিত হতে পারে।
কেবল স্টিলথ জঙ্গি বিমান অত্যাধুনিক রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্র-সজ্জিত এই রুশ সিস্টেমকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। তুরস্কে মোতায়েন মার্কিন জঙ্গি বিমানগুলো হল এফ-সিক্সটিন মডেলের। অন্যদিকে তুরস্ক, জর্দান, ব্রিটেন ও ইসরাইলের কাছে এই রাডার এড়ানোর মত স্টিলথ বা উন্নত জঙ্গি বিমান নেই।
ওয়েব সাইটটি লিখেছে, নো-ফ্লাই জোন বা উড্ডয়ন-নিষিদ্ধ অঞ্চল গড়ে তোলা ও সিরিয়ায় এস-৩০০ মোতায়েনের কারণে রুশ বিমান হামলার পরিধি ও তীব্রতা বেড়ে যাবে। দেবকার এইসব বিশ্লেষণ থেকে ইসরাইলের আতঙ্কই ফুটে উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার এইসব পদক্ষেপের কারণে সিরিয়াকে টুকরো টুকরো করার ও ইসরাইল-বিরোধী সংগ্রামের অন্যতম প্রধান ফ্রন্টের নেতা হিসেবে খ্যাত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার যে স্বপ্ন পাশ্চাত্য, ইসরাইল ও আরব রাজা-বাদশাহরাসহ তাদের আঞ্চলিক সেবাদাস সরকাররা দেখছিল তা মরীচিকায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিক্রিয়াশীল এই জোটের সরাসরি সামরিক সংঘাতও বেধে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষ করে দখলদার ইসরাইল এই আশঙ্কা করছে যে সিরিয়ায় রুশ সেনা ও অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থা মোতায়েনের ফলে আরব এই দেশটির আকাশে রুশ সেনাদের সঙ্গে ইসরাইলি সেনাদের সংঘর্ষ ঘটতে পারে।
রাশিয়ার বিমানগুলো যদি সিরিয়ায় আইএসআইএল ছাড়াও সিআইএ সমর্থিত অন্যান্য জঙ্গি বা কথিত ‘মধ্যপন্থী’ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা চলায় তাহলে ওয়াশিংটনকেও প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রেজনস্কি।
এইসব গোষ্ঠী রাশিয়া ও তার আঞ্চলিক মিত্র শক্তিগুলোর হামলায় পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যেতে পারে বলে পাশ্চাত্য ও আরব প্রতিক্রিয়াশীল সরকারগুলো আশঙ্কা করছে।
অবশ্য ব্রিটিশ বিশ্লেষক রবার্ট ফিস্কের মতে সিরিয়ায় আসাদের বিরোধী ‘নরমপন্থী বা মধ্যপন্থী বিরোধী’ বলে কোনো গোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই। তাই রাশিয়া সিরিয়ায় কথিত মধ্যপন্থী বিদ্রোহীদের ওপর হামলা চালাতে পারে বলে যে হৈ-চৈ পশ্চিমা নেতারা ও তাদের স্থানীয় এজেন্টরা যা শুরু করেছে তার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
ফিস্কের মতে পাশ্চাত্য ও তার স্থানীয় দোসররা মধ্যপন্থী বিদ্রোহী বলতে ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে বুঝিয়ে থাকে যে বাহিনীকে তারা অস্ত্র ও প্রশিক্ষণসহ সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তারা এই গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী বলে মনে করে না! অথচ সিরিয়ায় আসাদের বিরুদ্ধে প্রথমদিকেই বিদ্রোহ শুরুর নামে এই গোষ্ঠীর সদস্যরা সিরিয়ার বহু নিরপরাধ ও বেসামরিক মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।
এদিকে চীন আইএসআইএল বিরোধী জোটে তথা রাশিয়া, সিরিয়া, ইরান ও ইরাকের মধ্যে গড়ে-ওঠা নতুন জোটে যোগ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে আইএসআইএল-বিরোধী সংগ্রামে ইরান ও রাশিয়াকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছে। আর এই জোটে চীনের অংশগ্রহণ মার্কিন ও আরব প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর জোটকে মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় পুরোপুরি অক্ষম করে তুলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। চীনের একটি রণতরী ভূমধ্যসাগরের দিকে এগিয়ে আসছে বলে সম্প্রতি এক খবর প্রকাশিত হয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চীনের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, বিশ্বের যে কোনো দেশই আইএসআইএল-বিরোধী জোটে যোগ দিতে পারে।
তিনি আরও বলেছেন, ‘মার্কিনীদের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, মধ্যপন্থী আসাদ-বিরোধীরা তথা ফ্রি-সিরিয়ান আর্মি যাদের দোহাই আপনারা সব সময় দিচ্ছেন- কোথায় আছে যে আমাদের জোট তাদের ওপর হামলা চালাবে না? কিন্তু আমেরিকানরা এ প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না।’ ওদিকে ইউরোপীয় জোটের প্রধান বলেছেন, রাশিয়া ও ইরানের সমর্থন বাশার আসাদের বিজয়ের সম্ভাবনাকেই বাড়িয়ে তুলেছে।
রাশিয়া এক সপ্তাহ আগে সিরিয়ায় আইএসআইএল-এর অবস্থানে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে। এইসব হামলায় শত শত তাকফিরি-ওয়াহাবি সন্ত্রাসী হতাহত হয়েছে এবং শত শত সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ করেছে। হাজার হাজার তাকফিরি সন্ত্রাসী পালিয়ে গেছে বলেও খবর এসেছে। সন্ত্রাসীদের বিপুল পরিমাণ ভারী অস্ত্রসহ ত্রিশটি ঘাঁটি রুশ বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
. . . . . . . . .