ভারতে মুসলিম কিশোরীকে পুজা করছে যে কারনে!

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০১৫, ১২:২০ অপরাহ্ণ‘গরু খাওয়াকে প্রায় প্রধান রাষ্ট্রীয় সমস্যা’ বানিয়ে ‘মানুষ হত্যার দেশ’ ভারতে স্থাপিত হতে যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক নতুন ইতিহাস। কাঁসারিপাড়াতেই প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো পূজায় বরাবরের মতোই ঐতিহ্যবাহী কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হবে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার
ভারতের উত্তরপ্রদেশের দাদরি থেকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার কালনার কাঁসারিপাড়া দূরত্ব খুব বেশি হবে না, কিন্তু মানসিকতার বিচারে শত আলোকবর্ষ ফারাক। পার্থক্য এই জায়গায়, এবারই প্রথম সংস্কারের বেড়াজাল ভেঙে মুসলিম পরিবারের মেয়ে বর্ষা খাতুনের পূজা করা হবে কুমারী হিসেবে।
যুগ যুগ ধরে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কুমারীপূজার জন্য ব্রাহ্মণকন্যাকে বেছে নেওয়াই প্রচলিত রেওয়াজ। কিন্তু পূজা কমিটির প্রধান ষষ্ঠী নারায়ণ মল্লিক এই রেওয়াজটা ভাঙলেন। গ্রামের বারোয়ারি পূজায় কুমারী হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন মুসলমান পরিবারের মেয়ে বর্ষা খাতুনকে।
এই ‘বিপ্লবী’ সিদ্ধান্তের বিষয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে ষষ্ঠী নারায়ণ বলেন, ‘ধর্ম আলাদা হোক, ভগবান তো একই। সমাজ যেভাবে ভেঙেচুরে যাচ্ছে, তুচ্ছ কারণে যেভাবে মানুষ মানুষকে মারছে; তাতে আর যাই হোক মানুষের মঙ্গল হবে না। এই ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধ ফিরিয়ে আনতে বর্ষা খাতুনকে মাতৃরূপে পূজা করব বলে ঠিক করি। সারা গ্রামের মানুষ এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছে।’
ষষ্ঠী নারায়ণ আরো জানান, শুধু মেনে নেওয়া নয়, ধন্য ধন্য করছেন কালনার মানুষ। আর বর্ষা খাতুনের বাবা-মাও এই ব্যাপারে আপত্তি করেননি।
এদিকে বর্ষার বাবা সিদ্দিক আহমেদ টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদককে জানান, সারা গ্রামে যখন বদলে যাওয়ার এই মহোৎসব চলছে তখন বর্ষার পরিবার বিভোর মেয়ের দেবী রূপের কল্পনায়। ভগবানের আশীর্বাদ বলেই তাঁরা মনে করছেন নিজেদের মেয়ের এই মর্যাদায়।তিনি বলেন, ‘আর একদিন পরই পূজা শুরু হবে। আর বুধবারে অনুষ্ঠিত হবে কুমারি পূজা। বইয়ের পাতা ছেড়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা খাতুন এখন মায়ের কাছে শিখতে চাইছে পূজার সময় তার করণীয় সম্পর্কে।’
এদিকে দুর্গাপূজার আয়োজক ষষ্ঠীচরণ আর প্রতিদিন নামাজ পড়তে অভ্যস্ত সিদ্দিক আহমেদ কোথায় যেন এক হয়ে গেছেন। তাঁদের দুজনের কাছেই এখন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ কিংবা ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন’ কালনার পরিবেশটাই এখন এমন। স্থানীয় বাসিন্দা বাবুলচন্দ্র বাড়ই বলেন, ‘দেশে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে ভেদাভেদ তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে এর চেয়ে ভালো উদ্যোগ আর হয় না।’
. . . . . . . . .