শিকলে বাঁধা মাদ্রাসা ছাত্রীর জীবন!

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ অক্টোবর ২০১৫, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণকতিথ জিনে ধরার অজুহাতে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় মোসা. লিজা নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের খাসের হাওলা গ্রামে তিন মাস ধরে ওই ছাত্রীকে বাড়ির একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। লিজা ওই ইউনিয়নের মহসেন উদ্দিন ফাজিল মাদ্রাসার ফাজিল প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
সরেজমিন দেখা যায়, লিজা ঘরের সামনে পুকুর পাড়ে একটি গাছের সঙ্গে বাঁধা। পাশেই তার মা ছানিয়া বেগম বসে আছেন। দাঁড়িয়ে আছেন বড় বোন সেলিনা বেগম। সেলিনা বেগম বললেন, একই মাদ্রাসার ফিরোজ নামে এক ছাত্রের সঙ্গে তিন বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক হয় লিজার।
২০১৪ সালে ফাজিল প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর ওই ছেলের কাছে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তখন ফিরোজ তাদের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে। যা তাদের পরিবারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না। এ কারণে বিয়ে আর হয়নি। এতে লিজা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। একপর্যায়ে ওর ওপর জিনের আসর পড়ায় এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করে। এ কারণেই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে।
এ সময় শেকলে বাঁধা লিজা শুদ্ধ ভাষায় বলে, ‘আমি সুস্থ। এরপরও আমাকে আটকে রাখা হয়েছে।’
বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এভাবে তিন মাস পর্যন্ত লিজাকে কখনো বাড়ির আঙিনায়, কখনো গাছের সঙ্গে, কখনো ঘরের খুঁটির সঙ্গে, আবার কখনো শোয়ার খাটের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। মা ছানিয়া বেগম বলেন, ‘বাপহারা মাইয়া আমার। চিকিৎসা করানোর মতন টাকা নাই। ধারদেনা ও কিছু জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়েছি। ভালোই ছিল। এক মাস আগে কবিরাজ দেখানোর পর লিজার অবস্থা আরও খারাপ হইছে।’
লিজার সহপাঠী নার্গিস আক্তার বলেন, অভাবের কারণে ওর চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। জিনের আসরের অজুহাতে শিকলে বাঁধা পড়েছে ওর জীবন। তিনি আরও বলেন, মূলত গ্রাম্য কবিরাজের ভুল চিকিৎসার কারণেই লিজার এ অবস্থা। তিনি সমাজের দানশীল ব্যক্তিদের কাছে সহপাঠী ও বান্ধবী লিজার চিকিৎসার জন্য সহায়তা চান।
প্রতিবেশী মো. জাফর আলী সিকদার বলেন, লিজা খুবই ভদ্র ও নরম স্বভাবের মেয়ে। জিনের আসর বলতে কিছু নেই। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণেই লিজার জীবন আজ শিকলে আটকা পড়েছে।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা এএসএম সায়েম বলেন, মানসিক আঘাতের কারণে এমনটা হতে পারে। আটকে না রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সেবা দেওয়া হলে এ ধরনের রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব।
. . . . . . . . .