প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে ১৬ দফা সংস্কার প্রস্তাব

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ অক্টোবর ২০১৫, ৮:২৭ পূর্বাহ্ণপ্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ও শিক্ষকদের কোচিং ‘বাণিজ্য’ ঠেকাতে পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনার জন্য কাজ শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি এই তিন পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের ১৬ দফা সংস্কার প্রস্তাব নির্ধারণ করেছে শিক্ষা প্রশাসন। যার মধ্যে দুইটি প্রস্তাব ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকিগুলো সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা ও বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কারের লক্ষ্যে বুধবার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষা বোর্ডসমূহের চেয়ারম্যান, রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্কুল কলেজের প্রধান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত ছিলেন।
ওই বৈঠক শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০১৬ সালের আগামী এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় লিখিত পরীক্ষার পূর্বে বহু নির্বাচনী প্রশ্নের (এমসিকিউ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যা চলতি বছর পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষার শেষে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ২০১৭ সাল থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে এমসিকিউ পরীক্ষার মোট নম্বর থেকে ১০ নম্বর কমিয়ে দেয়া হবে। তার ফলে বর্তমানে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের বিষয়গুলোর ৪০ নম্বরের এমসিকিউয়ের পরিবর্তে ৩০ নম্বর এবং বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোর ৩৫ নম্বরের এমসিকিউয়ের পরিবর্তে ২৫ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্নপত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। হ্রাসকৃত ১০ নম্বর লিখিত তথা সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে যুক্ত হবে।
উপরোক্ত দুইটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াও পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কারের লক্ষ্যে আরো ১৪টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। যেগুলো আলোচনা করা হবে সংশ্লিষ্টদের জন্য। এছাড়াও জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি ৩টি পরীক্ষাতেই দিনের সংখ্যা ও সময়সীমা কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। এজন্য জেএসসি ও এসএসসি’তে মৌলিক বিষয়সমূহের পাবলিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা ও অন্য বিষয়সমূহের স্কুলভিত্তিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটি বিচ্যুতি পরিহার করাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের সময় বৃদ্ধি ও প্রাইভেট কোচিং নিরুৎসাহিত করার জন্য আরো উন্নত পরীক্ষা পদ্ধতি খুঁজে বের করার প্রয়োজন রয়েছে। একই সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের মানের পরিমাপক হিসেবে যথার্থ পরীক্ষা পদ্ধতিও খুঁজে বের করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের এ আলোচনা একেবারেই প্রাথমিক ও ‘‘ব্রেন স্টোমিং’’ পর্যায়ে রয়েছে। ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনা, সেমিনার, কর্মশালার আয়োজনসহ সবার মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে জেএসসি পরীক্ষার জন্য চারটি দফা রয়েছে। এগুলো হলো- মৌলিক বিষয়সমূহের (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান, বাংলাদেশের বিশ্ব পরিচয় ও ধর্ম) পরীক্ষাগুলো পাবলিক পরীক্ষার আওতায় হবে। অন্যান্য বিষয়সমূহ স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকেই গ্রহণ করা হবে। জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে থাকা বহু নির্বাচনী প্রশ্নের সংখ্যা কমিয়ে আনারও সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর ফলে সৃজনশীল প্রশ্ন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, চারু ও কারুকলা এবং কর্ম ও জীবনমুখি শিক্ষাসমূহ স্কুলভিত্তিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা। শিক্ষকদের জন্যও রয়েছে কিছুটা সুবিধা। ভর্তুকি না বাড়িয়ে পরীক্ষা ফি বৃদ্ধি করে উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য শিক্ষকদের সম্মানী বৃদ্ধি করার প্রস্তাব রয়েছে।
এসএসসি পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কারের জন্য প্রস্তাবনা রয়েছে ৬টি। এগুলোর মধ্যে শুরুতেই রয়েছে পরীক্ষার বিষয় কমিয়ে আনার প্রস্তাব। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, তথ্য প্রযুক্তি ও ধর্ম বিষয়গুলো ঠিক রেখে ঐচ্ছিক বিষয়, অর্থাৎ বিভাগভিত্তিক বিষয়গুলোর গুচ্ছ কমিয়ে আনার প্রস্তাব রয়েছে। রয়েছে শুরুতে এমসিকিউ প্রশ্নপত্রের পরীক্ষা গ্রহণ। এমসিকিউ প্রশ্ন কমিয়ে সৃজনশীলে নম্বর বৃদ্ধি। পর্যায়ক্রমে এমসিকিউয়ের পরিবর্তে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ এমসিকিউ পদ্ধতি ধীরে ধীরে তুলে ফেলার পরিকল্পনা করছে মন্ত্রণালয়। শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা/ কৃষি শিক্ষা/ গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়গুলোর পরীক্ষা স্কুলভিত্তিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা। এসএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা বাতিল করারও চিন্তাভাবনা করছে মন্ত্রণালয়। সেটা না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ব্যবহারিক অংশের মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা করা।
এইচএসসি পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনেও রয়েছে ৬ দফা প্রস্তাব। প্রথম প্রস্তাবে রয়েছে সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা (১ম ও ২য় বর্ষ আলাদা) গ্রহণ বা একাদশ শ্রেণিতে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা। রয়েছে লিখিত পরীক্ষার শুরুতে এমসিকিউ প্রশ্নপত্রের পরীক্ষা গ্রহণ ও এমসিকিউ কমিয়ে এনে লিখিত প্রশ্নে নম্বর বৃদ্ধি। পর্যায়ক্রমে এমসিকিউয়ের পরিবর্তে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ এসএসসির মতো এইচএসসিতেও এমসিকিউ পদ্ধতি ধীরে ধীরে তুলে ফেলার পরিকল্পনা করছে মন্ত্রণালয়। শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা/ কৃষি শিক্ষা/ গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়গুলোর পরীক্ষা স্কুলভিত্তিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা। এইচএসসির পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কারে শেষ দফা হলো ঐচ্ছিক বিষয়ের সংখ্যা হ্রাস করা।
সেই সঙ্গে সভায় প্রশ্নপত্রের সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মুদ্রণ ও প্যাকেটজাতকরণের জন্য বিজিপ্রেসকে সম্পূর্ণভাবে অটোমেশনের আওতায় আনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বিজিপ্রেসকে পুরোপুরি অটোমেশন করা হলে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে মানুষের কোনো প্রকার স্পর্শ ছাড়াই প্রশ্নপত্র ছাপানো ও প্যাকেটজাতকরণ সম্ভব হবে বলে অভিমত দেন শিক্ষা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
. . . . . . . . .