টিকিট ছাড়া তরুণী, চট্টগ্রাম ফ্লাইটে জঙ্গি আতঙ্ক

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ অক্টোবর ২০১৫, ৮:২৫ পূর্বাহ্ণরাজধানীর শাহজালাল আর্ন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস বাংলা বিমানের একটি ফ্লাইটে জঙ্গি আতঙ্কের কারণে ফ্লাইটটি বাতিল করে অন্য একটি বিমানে যাত্রীদের চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টার দিকে ইউএস বাংলার বিএস-১০৯ নম্বর অভ্যন্তরীন ফ্লাইটে এ ঘটনা হয়।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, বোর্ডিং পাস ছাড়াই বোরখা পরিহিত ফামিয়া ইসলাম (২২) নামে এক তরুণী যাত্রী ইউএস বাংলার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী ১০৯ নম্বর ফ্লাইটে উঠে পড়ার পর জঙ্গি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাত পৌনে ৮টায় ফ্লাইট ছাড়ার কথা থাকলেও ঘটনার প্রায় সোয়া ২ ঘণ্টা পর ১০টার দিকে অন্য একটি বিমানে যাত্রীদের চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ফ্লাইটের এক যাত্রী প্রকৌশলী পুলক কান্তি বড়ুয়া রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ঘটনার বিবরণ দিয়ে স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘এইমাত্র এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের কাছ থেকে, দেশ রক্ষা পেল, সেই সাথে আমিও বেঁচে গেলাম। চট্টগ্রাম যাবার জন্যে রাত পৌনে ৮টার ইউএস বাংলার বিএস ১০৯ নং ফ্লাইটে উঠে বসলাম। প্লেন রানওয়ের দিকে রওনা হতেই একটা ফোন পেয়ে থেমে গেল। হঠাৎ বলা হলো সকলের বোর্ডিং হাতে তুলে দেখানোর জন্যে। যথারীতি তাই করলাম। কিছুক্ষন পর দেখা গেল বোরখা পরা অল্প বয়সী এক তরুনী টিকেটবিহীন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে, বললো টিকেট হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু বোর্ডিং সংখ্যার সাথে যাত্রী সংখ্যা মিলছে না। তরুনীটির কোন লাগেজ বা অভিভাবক নেই। সম্পূর্ন যাত্রী বোঝাই এয়ারটিতে ঐ একটিমাত্র সীট খালী ছিল। এরকম যাত্রী বোঝাই প্লেনে খালি সিটটাই বা সে জানলো কিভাবে!
সম্পূর্ন ব্যপারটি এই মাত্র চোখের সামনেই ঘটলো। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন এয়ারপোর্ট ঘিরে ফেলেছে। আমাদের সব যাত্রীকে প্লেন থেকে নামানো হয়েছে। সম্পূর্ন প্লেন ও যাত্রীদের চেক করা হচ্ছে। এই অবসরে কথাগুলো লিখছি। তরুনীটিকে জিজ্ঞাসা করার জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো বোর্ডিং ছাড়া এতোগুলো চৌকাঠ মারিয়ে তরুনীটি প্লেনে উঠলো কী করে!’
এ ব্যাপারে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের (এএপি) জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন শিমুল বাংলামেইলকে জানান, তরুণী ফামিয়া ইসলাম ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার বাবা মহাখালী উদারাময় কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী শফিকুল ইসলাম।
তবে তরুণীর মা এএপি’কে জানিয়েছেন, ফাহিমার বড় বোন কয়েক বছর যাবৎ মানসিক রোগে ভুগছে। গত এক বছর ধরে ফামিয়াও একই রোগে আক্রান্ত। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খিলক্ষেতে খালার বাসায় যাওয়ার কথা বলে সে বিমানবন্দরে চলে আসে। পরে সে ইউএস বাংলার কাউন্টারে আসে এবং এক ফাঁকে বিমানে যাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার গাড়িতে করে এসে বিমানে উঠে পড়ে। এসময় তার কাছে কোন টিকেট পাওয়া যায়নি। তবে তার কাছে কিছু কম্পিউটর বিষয়ক কাগজ পত্র ও বুটিকের নকশাসহ কিছু কাগজ পাওয়া যায়।
এদিকে বিমানের যাত্রী ও বোর্ডিং পাসের মিল না থাকায় বিমানটি থামিয়ে দেয়া হয়। পরে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ তাকে এএপির কাছে হস্তান্তর করে। যাচাইবাছাই ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফামিয়াকে তার মা ও খালুর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তবে কয়েকটি ধাপ ডিঙিয়ে কীভাবে তরুণীটি বিমানে উঠলো এমন প্রশ্নে আলমগীর হোসেন জানান, বিমানে যাত্রী ওঠার বিষয়টি এএপি দেখে না। এএপি পুরো বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষটির সঙ্গে জড়িত। বিষয়টি সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ দেখে।
বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা বিভাগে কথা বলতে চাইলে নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাহমুদা খানম বাংলামেইলকে বলেন, ‘ওই সময় আমার ডিউটি ছিল না।’ এ বিষয়ে তিনি প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
তবে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকতার সঙ্গে বহুবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
. . . . . . . . .