জেএমবি নেতা যখন বেওয়ারিশ লাশ

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ অক্টোবর ২০১৫, ৪:০৭ অপরাহ্ণনগরীর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর থেকে গ্রেনেড-বিস্ফোরণ-অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তারের পর অভিযানের সময় গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত জেএমবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ জাবেদকে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হচ্ছে। এরআগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সদরঘাটের বাংলাবাজারে ছিনতাইয়ের সময় নিজেদের ছোঁড়া গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত দুই জেএমবি সদস্যকেও বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করেছিল আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম।
বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামকে মরদেহ হস্থান্তর করা হবে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) বাবুল আক্তার। নিহত জাবেদের মরদেহ নিতে কোনো স্বজন না আসায় বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে তার দাফনের জন্য আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর এলাকায় একটি ভবনের নিচ তলা থেকে জেএমবি চট্টগ্রামের সামরিক শাখার কমান্ডার মোহাম্মদ জাবেদের বাসা থেকে ৯টি শক্তিশালী হ্যান্ড গ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম, অস্ত্র তৈরির মেশিন, একটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ছোরা, দুইশ রাউন্ড একে ২২ অস্ত্রের গুলি, জিহাদি বই উদ্ধার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওই দিন নগরীর অক্সিজেন ও মাদারবাড়ি থেকে মাহবুব, কাজল, বাবু ও ফুয়াদ নামে আরো চার জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে মঙ্গলবার ভোর রাতে জাবেদকে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ বায়েজিদ থানার অনন্যা আবাসিক এলাকায় গ্রেনেড উদ্ধারের অভিযানে গেলে সেখানে গ্রেনেড বিস্ফোরণে মারা যান জেএমবি নেতা জাবেদ।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের ময়না তদন্তে সহায়তাকারী ডোম কদম আলী বাংলামেইলকে জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে জেএমবি নেতা জাবেদের লাশ রাখা হয় হাসপাতালের মর্গে। মঙ্গলবার বিকেলে লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. শহীদ। গত দুই দিনেও তার লাশ নিতে কেউ না আসায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ মরদেহ আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। বুধবার সকালে মরদেহ নেয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ডিবি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিকেলে মরদেহ হস্তান্তর করার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানান কদম আলী।
এরআগেও ২৩ সেপ্টেম্বর সদরঘাটের বাংলাবাজারের জনতা ব্যাংকের সামনে গুলি করে ছিনতাইকালে জনতার প্রতিরোধে গ্রেনেড বিস্ফোরণ করে পালিয়ে যাওয়ার সময় নিহত দুই জেএমবি সদস্যও বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে ২৫ সেপ্টেম্বর আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম দাফন করেছিল। ওই সময় তাদের নাম পরিচয় জানা গেলেও সোমবার পাঁচ জেএমবি সদস্য গ্রেপ্তারের পর তাদের নাম পরিচয়ও নিশ্চিত হওয়া গেছে। গ্রেপ্তার বুলবুল আহমেদ ওরফে ফুয়াদ জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় নিজেদের ছোঁড়া গ্রেনেড বিস্ফোরণে মারা যান, জেএমবি সদস্য রফিক ও রবিউল। গ্রেপ্তার মাহবুব, কাজল ও ছিনতাই কাজে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত রফিক হচ্ছে আপন তিন ভাই। এই তিন ভাইয়ে বাড়ি হচ্ছে নোয়াখালী জেলায়। আর তাদের ভাগিনা জামাই হচ্ছে গাইবান্ধা জেলার বুলবুল আহমেদ ওরফে ফুয়াদ, যাকে গোয়েন্দা পুলিশ জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ওই সময়ে রফিকের মৃত্যুর খবর জেনেও মরদেহ নিতে না আসার কারণ সম্পর্কে গ্রেপ্তার বুলবুল আহমেদ ওরফে ফুয়াদ জানান, জেএমবির সাংগঠনিক নির্দেশ হচ্ছে, অপারেশনে মারা গেলেও কারো পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না। আপন ভাই মারা গেলেও ধরা পড়ার ভয়ে লাশ গ্রহণ করতে না যাওয়ারও সিদ্ধান্ত রয়েছে। এমনিক একজনের নাম ছয়-সাতটি হওয়ায় নিজ সংগঠনের একজন আরেকজনকেও চিনেনা। একেক জন একেক নামে চিনে। জেএমবির নিহত সামরিক কমান্ডার জাবেদকে বাবু ও ফুয়াদ চিনতো মেহেদী নামে। গ্রেপ্তারের পর মেহেদী কোনটা গোয়েন্দা পুলিশ বাবুকে দেখিয়ে দিতে বললে তখন বলেছিল জাবেদকে দেখিয়ে দিয়ে বলেছিল এই হচ্ছে মেহেদী।
গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত জাবেদের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরাসাই উপজেলায়। তবে কোন গ্রাম বা তার পূর্ণ পরিচয় পুলিশ জানাতে পারেনি। টেক্সটাইল প্রকৌশল নিয়ে পড়ালেখা করা জাবেদ ২০১২ সাল থেকে জেএমবির সাথে সম্পৃক্ত হয়। সে জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আত্মঘাতি দলের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতো। সেকারণে গত সোমাবার ডিবির অভিযান দলের ওপর গ্রেনেড ছোঁড়ে মারার পর তা বিস্ফোরিত না হওয়ায় হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় গ্রেনেড ও বিস্ফোরকের ওপর ঝাঁপ দিয়ে বিস্ফেরণ ঘটাতে চেয়েছিল জেএমবি নেতা জাবেদ।
. . . . . . . . .