দক্ষিণ আফ্রিকায় সিলেটি খুন: পরিবারের খোঁজ নেয় নি কেউ, জানেই না প্রশাসন

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ অক্টোবর ২০১৫, ১১:০৫ অপরাহ্ণনিজস্ব প্রতিবেদক:
জাপানি নাগরিক কুনিও যেদিন খুন হলেন বাংলাদেশে তার ঠিক একদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় মারা যান বাংলাদেশের নাগরিক মীর কাশেম জুনেল। সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। অথচ জুনেল মারা যাওয়ার দুই দিন পরই নিরাপত্তা ঝুঁকির অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশ সফর স্থগিত করে দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দল।
বাংলাদেশে হোশি কুনিও কিংবা তার আগে ইতালিয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার খুন হওয়ার পর দেশজুড়ে কত আলোচনা, বিশ্বজুড়ে তোলপাড়, বিশ্বনেতাদের নিন্দার ঝড়- অথচ দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি যুবকের খুন হওয়ার খবরই জানে না কেউ। দেশের প্রশাসনই নিশ্চুপ, বাকী বিশ্বের কথা তো বলাই বাহুল্য!
কুনিও খুন হওয়ার পর জাপান থেকে তদন্তকারী দল এসেছে বাংলাদেশে, একই ঘটনা ঘটেছে সিজার খুন হওয়ার পরও, এই দুই হত্যাকারীদের ধরতে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছে তারা; অথচ দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি যুবক খুন হওয়ার খবর জেনেও নিশ্চুপ প্রশাসন। বিচারের জন্য চাপ প্রয়োগ দূরে থাক নিহতের পরিবারের খোঁজ পর্যন্ত নেয় নি কেউ।
দেশিয় মিডিয়ায়ও এখন বিদেশি হত্যার খবর নিয়ে তোলপাড়, এই ব্যস্ততায় বিদেশে বাঙ্গালি খুন হওয়ার খবর প্রকাশের ফুসরত কোথায়!
দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসী হামলায় খুন হওয়া মীর কাশেম জুনেলের বাড়ি সিলেটের টুলটিকরে। ২০০১ সালে জীবিকার সন্ধানে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান তিনি। ১৪ বছর ধরে সেখানে বসবাস করছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা করতেন। এবছরই তার দেশে ফেরার কথা ছিলো। দেশে ফিরে বিয়ে করে দেশেই স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। দেশে আর ফেরা হলো না জুনেলের। সন্ত্রাসী হামলায় চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
নিহতের স্বজনরা জানান, মৃত্যুর কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও এখনো খোঁজ নেননি সরকারের কেউই। এমতাবস্থায় এ হত্যাকান্ডের বিচারের ব্যাপারেও শঙ্কিত পরিবারের সদস্যরা।
জুনেলের পরিবারের সদস্যরা জানান, ১২ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা আফিটন শহরে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন জুনেল। সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। ২ অক্টোবর হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাা যান জুনেল।
সদর উপজেলার টুলটিকরে জুনেলের বাড়িতে গিয়ে যায়, বাড়ির প্রায় সবাই প্রবাসী। বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন তারা। আত্নীয়-স্বজনরাই থাকেন বাড়িটিতে।
স্বজন হারানোর ব্যাথার সাথে প্রবাসে বাংলাদেশিদের নানান দুর্ভোগ নিয়ে তাদের মনে ক্ষোভের পাহাড়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারকে কুটনৈতিকভাবে আরোও উদ্যোগী হওয়ার দাবি স্বজনদের।
কিছুদিন আগে দেশে আসা জুনেলের ভাই প্রবাসী সেলতাজ আহমেদ বলেন, ভাই খুন হওয়ার পর থেকে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি। কোনো খোঁজও নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা অর্থ সাহায্য চাই না। কিন্তু ভাই হত্যার যাতে বিচার হয় সেই নিশ্চয়তা চাই। এ জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। চাপ প্রয়োগ করতে হবে। নতুবা বিচার হবে না।
সেলতাজ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, দেশে কোনো বিদেশি খুন হলে কতো তোড়জাের, কতো আলোচনা, অথচ বিদেশে বাংলাদেশি মারা গেলে কেউ খবরও নেয় না।
সেলতাজ জানান, দক্ষিন আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবছর সন্ত্রাসী হামলায় এরকম অনেক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।
জুনেলদের প্রতিবেশি আবদুল আলিম বলেন, দু’জন বিদেশি খুন হওয়ায় বাংলাদেশকে তো সন্ত্রাসী রাষ্ট্রই বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। অথচ বিদেশে প্রতবছর কতো বাংলাদেশি খুন হন, সেসবের খবর কেউ রাখে না।
দক্ষিণ আফ্রিকার নারী ক্রিকেট দলের বাংলাদেশে না আসার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের দেশে আমাদের নাগরিক খুন হলো। আমাদের বলা উচিত ছিলো- আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় যাবো না। অথচ উল্টো তারাই নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশে আসছে না।
আলীম জানান, গত এক বছরে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী অধ্যূষিত সিলেট অঞ্চলের বেশ ক’জনকে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ দিতে হয়েছে।
তবে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রবাসী কল্যান সেলে এসবের কোনো তথ্য নেই।
এই সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত নির্বাহি হাকিম মোহাম্মদ আমিনুর রহমান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় সিলেটের একজন যুবক খুন হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জেনেছি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো এ ব্যাপারে কিছু জানি না। মন্ত্রণালয় থেকেও এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আসেনি।
তিনি বলেন, খুন হওয়া প্রবাসীর পরিবার কোনো সহায়তা চাইলে আমরা সেটা করতে প্রস্তুত রয়েছি। . . . . . . . . .