ফের আলোচনায় এডিসি বাবুল আক্তার

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ অক্টোবর ২০১৫, ৯:৪০ পূর্বাহ্ণবাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে তিনবার সবোর্চ্চ পদক অর্জনকারী ও আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা এডিসি বাবুল আক্তার ফের আলোচনায়। নগরীর কর্ণফুলী থানার খোয়জনগর এলাকার একটি ভবনের নিচ তলায় জেএমবি আস্তানায় অভিযান চালাতে গিয়ে তিনি গ্রেনেড হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন।
এরপরও সেখান থেকে আটক করেছেন জেএমবি চট্টগ্রামের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ জাবেদকে। উদ্ধার করেছেন শক্তিশালী নয়টি হ্যান্ড গ্রেনেড, প্রায় ২শ’ রাউন্ড একে ২২ এর গুলি, একটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ছোরা, বিপুল পরিমান বোমা তৈরির সরঞ্জাম, অস্ত্র তৈরির মেশিন ও জিহাদী বই। এরআগে নগরীতে থেকে আটক করেছে আরো চার জঙ্গিকে।
এঘটনার পর তিনি ফের আলোচনায় চলে এসেছেন। এমনিতে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও তার কর্মস্থলের মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় অপরাধীদের আতংক বাবুল আক্তার। তার এই কৃতৃত্বের খবর জানার পর তার শুভার্থীদের মাঝে আরো খুশির বন্যা বইয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে নিয়ে ‘আমাদের গর্ব বাবুল আক্তার’ নামে একটি জনপ্রিয় ফেসবুক ফ্যানপেজও চালু করেছেন তার শুভার্থীরা।
২০০৯ সালের নগরীর টাইগার পাস এলাকায় এক সন্ত্রাসী ধরতে গিয়ে অস্ত্রের মুখোমুখি হওয়ার পর প্রাণের ভয় না করে সেই আসামিকে পাকড়া করতে সক্ষম হয়েছিলেন সেই সময়ের তরুণ সহকারি পুলিশ কমিশনার বাবুল আক্তার। যার কারণে তার ঝুলিতে ঝমেছিল রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক বা পিপিএম (সাহসিকতা) ২০০৯। সেই সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার এবারো জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালাতে গিয়ে দিয়েছেন দারুন বিচক্ষণতা ও সাহসের পরিচয়।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বাবুল আক্তার বাংলামেইলকে বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রথমে সোমবার সকালে নগরীর মাদারবাড়ী থেকে মাহবুব (৩৫) ও কাজলকে (৩৫) আটক করা হয়। এরপর তাদের স্বীকারোক্তিতে দুপুরে নগরীর অক্সিজেন এলাকা থেকে সুজন ওরফে বাবু (২৫) ও বুলবুল আহমেদ ওরফে ফুয়াদকে (২৬) আটক করা হয়। এরপর ফুয়াদ ও বাবুকে সাথে নিয়ে বিকেলে খোয়াজনগর এলাকার জাবেদের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে গ্রেনেড-বিস্ফোরক-গুলিসহ আটক করা হয় জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান মো. জাবেদকে (২৬)।’
তিনি আরো বলেন, ‘সন্ধ্যায় যখন বাবু ও ফুয়াদকে নিয়ে জাবেদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। বাড়িওয়ালার স্ত্রীর মাধ্যমে জাবেদের বাসার দরজা খুলানোর পর আমরা রুমে ঢুকা মাত্রই সে একটি হ্যান্ড গ্রেনেড ছুড়ে মারে। তবে গ্রেনেডের পিনটি ঠিক মত না খোলায় সেটি বিস্ফোরণ হয়নি বলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি। এরপর পরই তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরও হ্যান্ডকাপ নিয়ে পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে বিস্ফোরণের জন্য গ্রেনেড ও বোমা তৈরির সরঞ্জামের ওপর ঝাঁপ দিতে সে উদ্যত হয়। তবে আমরা কঠোরভাবে তাকে নিবৃত করি।’
কিছুক্ষণ থেমে এই কথা মনে পড়লে শিহরিত হয়ে উঠেন জানিয়ে বাবুল আক্তার বলেন, ‘আজকে (সোমবার) জেএমবি আটকের খবরের চেয়ে অন্যরকম নিউজ (পুলিশ সদস্য মারা যাওয়া) হয়ে যেতে পারত। যখন জেএমবি নেতা জাবেদ নিশ্চিত হয়েছে তাকে আমরা ধরে ফেলেছি। তখন সে আত্মঘাতি হামলা চালিয়ে আমাদের মেরে ফেলতে চেয়েছিল। এই হামলায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ হলে আমিসহ চার পুলিশ ও বাড়ীওয়ালার স্ত্রীও মারা যেত। এমনিতে সে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। সে ২০১২ সালে জেএমবিতে যোগদান করে। চট্টগ্রামে সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে অস্ত্র ও বোমা তৈরির দায়িত্ব পালন করছিলেন জাবেদ। একই সঙ্গে সে জেএমবি’র আত্মঘাতি দলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় সে একাজটিই করতে চেয়েছে।’
অপরাধ দমনের জন্য পুলিশের সবচেয়ে বেশিবার পুরুস্কারপ্রাপ্ত আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার গত ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের উত্তর ও দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হিসেবে যোগদান করেন। এরআগেও তিনি গোয়েন্দা পুলিশের এডিসির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যোগ দিতে দক্ষিণ সুদান গিয়েছিলেন বাবুল আক্তার। চলতি বছরের ১৫ জুলাই তিনি দেশে ফেরার পর তাকে চাহিদাপত্র দিয়ে সিএমপিতে নিয়ে আনেন পুলিশ কমিশনার।
পুলিশের ২৪ তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা বাবুল আক্তার ২০০৫ সালে পুলিশে যোগ দেন। সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে র্যাব-২-এ কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ২০০৮ সালে নগর পুলিশের কোতয়ালী জোনের সহকারি কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি জেলা পুলিশের হাটহাজারী সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার পদে কর্মরত ছিলেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে বাবুল আক্তার দীর্ঘদিন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ মিশনে যাবার আগ পর্যন্ত ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর থেকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) পদে কর্মরত ছিলেন বাবুল আক্তার।
অপরাধ দমনে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পিপিএম (সেবা) (২০০৮), ২০০৯ পিপিএম (সাহসিকতা), ২০১০ সালে আইজিপি ব্যাজ, ২০১১ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল পুরস্কার বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (সাহসিকতা)। বেসরকারি পর্যায়ে ২০১২ সালে সিঙ্গার-চ্যানেল আই (সাহসিকতা) পুরস্কার লাভ করেছেন বাবুল আক্তার। এর মধ্যে চারবার অর্জন করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের সেরা সহকারী পুলিশ সুপারের মর্যাদা।
বাবুল আক্তার যেখানেই দায়িত্ব পালন করেছেন সেখান থেকে বদলি হয়ে আসার সময় স্থানীয় জনগণের ‘ভালোবাসার আন্দোলন’ ঠেলে আসতে হয়েছে। তাকে হাটহাজারীর সার্কেল এএসপি ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে ধরে রাখতে স্থানীয়রা আন্দোলন-মানববন্ধন পর্যন্ত করেছিল। এমনকি কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতারা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন বাবুল আক্তারকে কক্সবাজারে পুন:পদায়নের জন্য।
উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর কর্ণফুলী থানার খোয়জনগর এলাকার একটি বহুতল ভবনের নিচ তলায় অভিযান চালিয়ে শক্তিশালী নয়টি হ্যান্ড গ্রেনেড, প্রায় ২শ’ রাউন্ড একে ২২ এর গুলি, একটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ছোরা, বিপুল পরিমান বোমা তৈরির সরঞ্জাম, অস্ত্র তৈরির মেশিন ও জিহাদী বইসহ পাঁচজন জেএমবিকে আটক করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) বাবুল আক্তার। সাথে ছিলেন ডিবির এস আই লিয়াকত, কনেস্টেবল নজরুল, ফয়সালসহ অন্যরা।
আটকরা হলেন- জেএমবি চট্টগ্রামের সামরিক শাখার প্রধান চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়া মো. জাবেদ (২৬), নোয়াখালী জেলার মাহবুব (৩৫), একই জেলার সোহেল ওরফে কাজল (৩৫), চাঁদপুর উপজেলার মুমিনুল ইসলামের ছেলে মো. সুজন ওরফে বাবু (২৫) ও গাইবান্ধা জেলার মৃত আকতার হোসেনের ছেলে বুলবুল আহমেদ ওরফে ফুয়াদ (২৬)।
. . . . . . . . .