ঈদ বিনোদনে প্রাপ্তি: বিরতিহীন অনুষ্ঠানমালা

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ অক্টোবর ২০১৫, ১১:০৪ অপরাহ্ণঈদের মতো বড় উৎসবগুলোতে ফারিয়ার সাংসারিক ব্যস্ততা খুব একটা থাকে না। তাই অলস সময়টা টিভি দেখেই পার করে দেয়ার পরিকল্পনা থাকে। তবে ফারিয়ার এমন ভাবনার মাঝপথে কাটা হিসেবে দেখা দেয় অনুষ্ঠানের মাঝপথে দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকা বিভিন্ন পণ্যের মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন। এমন লাখো দর্শকের কথা চিন্তা করেই গেল ঈদুল আযহায় বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে বিরতিহীন ঈদ অনুষ্ঠানমালা।
বিশ্বায়নের এই যুগে বিজ্ঞাপন বিরতি ব্যতীত টেলিভিশন অনুষ্ঠানের কথা চিন্তাই করা যায় না। কারণ বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করেই চ্যানেলগুলো পরিচালিত হয়। অথচ সেই বিজ্ঞাপনই যদি না থাকে, তাহলে চ্যানেল চলবে কিভাবে? উত্তরা হলো ‘অসম্ভব’। কিন্তু সেই অসম্ভবকেই প্রথমবারের মতো সম্ভব করে স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি। ২০১২ সালে চ্যানেলটি প্রথমবারের মতো ঈদে বিরতিহীন অনুষ্ঠান প্রচার করে। এরপর এ যাত্রায় যুক্ত হয় বাংলাভিশন। কিন্তু গেল ঈদুল ফিতরে বাংলাভিশন এমন আয়োজন থেকে দূরে সরে আসে। তবে আশার কথা হলো এবারের ঈদুল আযহায় বিরতিহীন যাত্রায় যুক্ত হয়েছে আরো দুটি টেলিভিশন চ্যানেল। এর একটি আরটিভি, অন্যটি জিটিভি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিরতিহীন অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে সব টেলিভিশন চ্যানেলকে ছাড়িয়ে গিয়েছে গাজী টিভি। তারা ঈদে যেসব অনুষ্ঠান প্রচার করেছে তাতে কোনটিতেই বিজ্ঞাপন বিরতি ছিলো না। নাটক, টেলিফিল্ম, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, সংগীতানুষ্ঠান, সেলিব্রেটি টক শো’সহ প্রতিটি অনুষ্ঠানই প্রচারিত হবে বিজ্ঞাপন বিরতিহীন। সপ্তাহব্যাপি ঈদ আয়োজনে প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সকল অনুষ্ঠানই ছিলো বিরতিহীন। চ্যানেলটি তাই তাদের এবারের ঈদের স্লোগান নির্ধারণ করে ‘স্বপ্নের আয়োজন বিরতিহীন বিনোদন’।

এ প্রসঙ্গে গাজী টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমান আশরাফ ফায়েজ বাংলামেইলকে বলেন, ‘দীর্ঘ নয় মাস দর্শকদের উপর একটা জরিপ পরিচালনার পর বিরতিহীন ঈদ আয়োজন নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হয় জিটিভি। এটা ছিলো জিটিভির এবারের ঈদের চমক। দর্শকদের বিজ্ঞাপনের বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্যই এমনটা করা হয়েছে।’

বিরতিহীন ঈদ অনুষ্ঠানমালায় দর্শক সাড়া মিলেছে কিনা জানতে চাইলে ফায়েজ আরো বলেন, ‘ঈদ শেষ হয়ে মাত্র এক সপ্তাহ হলো। এখনই দর্শক সাড়ার বিষয়টা বলা যাবে না। এটার জন্য আমরা আরো একটা জরিপ পরিচালনা করব। তবে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দর্শকদের কাছ থেকে প্রচুর সাড়া মিলেছে। এছাড়া মিডিয়া কমিউনিটিও বিষয়টাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।’
বলে রাখা ভালো জিটিভি এবারে বিরতিহীন অনুষ্ঠানমালা সাজিয়েছিলো এয়ারটেল নিবেদিত সাতটি টেলিফিল্ম, চৌদ্দটি নাটক, দুটি ধারাবাহিক এবং ভিন্ন স্বাদের নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
এদিকে ঈদুল আযহায় স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি প্রচার করেছে সাতটি বিরতিহীন নাটক। অন্যদিকে গতবারের চেয়ে একধাপ এগিয়ে আরটিভি প্রচার করেছে এবার দুটি ধারাবাহিকসহ চৌদ্দটি বিরতিহীন নাটক প্রচার করেছে।

এখন প্রশ্ন হলো, বিরতিহীন অনুষ্ঠান প্রচার করে চ্যানেলগুলো আর্থিক ক্ষতি কিংবা বিজ্ঞাপনদাতাদের বিরাগভাজন হবেন কিনা? এ প্রশ্নের উত্তরাটাও দিয়েছেন গাজী টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমান আশরাফ ফায়েজ। তিনি বলেন, ‘আসলে বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়টা নির্ভর করে ব্যবস্থাপনার উপর। কাজটা করতে গিয়ে আমরা কোন ধরনের সমস্যার স্মুখীন হইনি। উল্টো আমাদের বিজ্ঞাপনদাতারা বিষয়টিকে উৎসাহ দিয়েছে।’
বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ যখন নিজ থেকেই দর্শকদের জন্য বিজ্ঞাপন বিরতিহীন অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে, তখন দর্শকরা কী ভাবছে? তারা কি বিরতিহীন অনুষ্ঠান উপভোগ করছে, নাকি বিজ্ঞাপন বিরতি না থাকায় অনুষ্ঠানের মান আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে, রাজধানী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত নারী মাহমুদা সিদ্দিক বলেন, ‘সাধারণ কাজের ব্যস্ততার জন্য সময় নিয়ে টিভি অনুষ্ঠান দেখা হয় না। তবে ঈদের সময় নির্দিষ্ট কিছু নাটক ও অনুষ্ঠান উপভোগ করার চেষ্টা থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে, অনুষ্ঠানের মাঝে বিজ্ঞাপনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় খুব একটা অনুষ্ঠান দেখা হতো না। তবে এবার দুই একটি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বিরতিহীন অনুষ্ঠান দেখে ভালো লেগেছে। তবে ভবিষ্যতে এর পরিসর বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যথায় চ্যানেলগুলো দর্শক হারাবে।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া রাজীব হাসান বলেন, ‘গত কয়েকটা ঈদের সময় বিরতিহীন অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্যোগ দেখে ভালো লেগেছিল। কিন্তু এবার দেখলাম বিরতিহীন নাটকগুলোর পুরোটাই দর্শক হাসানোর নামে ভাড়ামিতে ভরা। যা চ্যানেলগুলোর জন্য আরো বিপদ ডেকে আনতে পারে। ’
সবমিলে গত ঈদ-উল-ফিতরে দর্শকবিচারে সমালোচিত ঈদ অনুষ্ঠানে গুণগত মানে খুব একটা হেরফের না হলেও বিরতিহীন অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগকেই একমাত্র প্রাপ্তি মানছেন দর্শকরা। এ প্রশংসনীয় উদ্যোগ অন্য চ্যানেলগুলোও নেবে এমন প্রত্যাশা দর্শকদের। . . . . . . . . .